১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে আগস্ট মাসে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কাজীপুর গ্রামে অতর্কিত হামলা চালায় পাকিস্তানিরা। এ সময় ছয় বীর মুক্তিযোদ্ধাকে গুলি করে হত্যার পর মরদেহ একটি ঘরের ভেতর রেখে আগুন জ্বালিয়ে দেয় তারা।
পাকিস্তানিরা চলে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর সহযোদ্ধারা দেহাবশেষ উদ্ধার করে সমাহিত করেন ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের শূন্যরেখায়।
এদের চারজনের নাম পাওয়া গেলেও মেলেনি পরিবারের খোঁজ। বাকি দুজনের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি।
চার বীর মুক্তিযোদ্ধা হলেন শহীদ হিবাজ উদ্দিন, নায়েব সুবেদার আবুল কাশেম, বিডিআর আব্দুস সালাম এবং বিডিআর আকরাম হোসেন।
যে বাড়িটিতে হত্যার ঘটনা ঘটে, ওই বাড়ির বড় ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আমিন বলেন, ‘কবরস্থানে যে ছয়জন শুয়ে আছে তারা আমাদের বাড়িতে ছিল। ওই সময় বৃষ্টি হচ্ছিল। পাক বাহিনীরা ভিজতে ভিজতে আইসি দুপাশে দাঁড়ি গেল। তারা হেন্ডসআপ বুইলি ফায়ার করতে শুরু করল।
তিনি বলেন, ‘ফায়ার করতে করতে আমার আব্বা দরজার এক পাশে আর আমার বড় আব্বা আরেক পাশে আর যখন তারা ফায়ার বন্ধ করল তারা দুজনে বাড়ির মধ্যের আরেক দরজা দি বারি চইলি যায়। তারপরে পাক মিলিটারিরা মরাগুলো ঘরের মধ্যে এক জায়গাই কইরি ঘরের মধ্যে থাকা কাঠে পেট্রল দি আগুন ধরি দিল। আগুন দিলে পরে ঘরটি পুইড়ি নাইমি গেল। পরে ওই ছয়জনের পোড়া দেহ কুড়ি আইনি এইখিনে মাটি দি।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান বলেন, ‘শূন্যরেখার কবরস্থানে যারা শায়িত আছেন, সবাই ইপিআরে ট্রেনিংপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা। তারা প্রতি রাতে বাংলাদেশে আসত। আমি তাদের সঙ্গে থাকতাম বা ঘুরতাম। পরে যখন আমি ট্রেনিংয়ে চইলি গেলাম, ফিরি আইসি তাদের আর পাইনি।’
তিনি বলেন, ‘আমি শুনলাম তারা সাহেবনগরে ছিল। এমন সময় পাক বাহিনীরা তাদের গুলি কইরি মাইরি আগুন দি পুড়ি ফেলে। পরে তাদের পোড়া হাড়গোড় ছাই কুড়ি আইনি এইখিনে মাটি চাপা দেয়া হয়। শহীদদের প্রতি সম্মান জানাতে আমরা উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা প্রতি বছরের ১৭ ডিসেম্বর ও ২৭ মার্চ শ্রদ্ধা নিবেদন ও দোয়া অনুষ্ঠান করি।’
সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম সংস্কারকাজ হিসেবে কবরগুলোকে পাকা করা হয়েছে। একই সঙ্গে ইতিমধ্যে একটি স্মৃতিস্তম্ভের কাজও শেষ হয়েছে।’
গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌসুমী খানম বলেন, ‘কাজীপুর গ্রামে ভারত-বাংলাদেশের শূন্যরেখায় অবস্থিত যে ছয় শহীদের কবর আছে, তাদের মধ্যে চারজনের শুধু নাম জানা সম্ভব হয়েছে। তবে পরিবারের পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি। তাদের পরিবারের পরিচয় খোঁজার জন্য স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোদ্ধা যারা এখনও বেঁচে আছেন তাদের সঙ্গে কথা বলে পদক্ষেপ নেয়া হবে।’