মামলার জট কমাতে এবং বিচারপ্রার্থীদের দ্রুত সেবা দিতে তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা ব্যবহার করে মামলা ব্যবস্থাপনায় গতি আনার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। একই সঙ্গে রায়ের কপি পেতে বিচারপ্রার্থীদের যেন কষ্ট না হয়, সে বিষয়েও বিচারকদের খেয়াল রাখতে বলেছেন তিনি।
রাষ্ট্রপতি বলেছেন, ‘বিচারকাজ একটা জটিল বিষয়। তার পরও আমি বলব মামলার পরিমাণ দিন দিন যে হারে বাড়ছে, সেটাকে আয়ত্তের মধ্যে আনতে হলে বিচারকদের আরও বেশি কাজ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে এবং বিচারকদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য আন্তরিক প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। বিচারকদের খেয়াল রাখতে হবে মামলার রায় হওয়ার পর রায়ের কপি পাওয়ার জন্য বিচারপ্রার্থীদের যেন আদালতের বারান্দায় ঘোরাঘুরি করতে না হয়।’
শনিবার সুপ্রিম কোর্ট দিবস উপলক্ষে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস স্পোর্টস কমপ্লেক্সে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সন্ধ্যায় বঙ্গভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যোগ দেন রাষ্ট্রপতি।
বিচারকাজে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে দেশের বিচার বিভাগ সচল রাখতে সরকার গত বছরের ৯ মে আদালতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ জারি করে, যা পরে আইনে পরিণত হয়।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘করোনার সময় ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে বিচার কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে উচ্চ আদালত ও অধস্তন আদালতের বিচারক ও আইনজীবীরা বিচারপ্রার্থী জনগণের ন্যায়বিচার নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।’
বিচার বিভাগকে ধন্যবাদ জানিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, ‘দেশের সব আদালতের কার্যক্রম ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন করার ব্যবস্থা নিতে হবে। এতে বিচার কার্যক্রমে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্টে অনলাইন কজলিস্ট চালু হয়েছে। অনলাইন বেল কনফার্মেশন ব্যবস্থাও কার্যকরভাবে চলছে।’
মামলা করা থেকে রায় ঘোষণা পর্যন্ত আদালতের বিচারিক কাজের ডিজিটাল সংরক্ষণেরও তাগিদ দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
তিনি বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট যেহেতু ‘কোর্ট অফ রেকর্ড’, সেহেতু এর সব নথিকে ডিজিটাল নথিতে পরিণত করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। মামলা করা থেকে রায় ঘোষণা পর্যন্ত সব কার্যক্রমকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করাও জরুরি।’
বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ‘জাতির পিতা সংবিধানে একটি স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করেছিলেন, যেখানে সুপ্রিম কোর্ট ও অধস্তন আদালতগুলো নিজ নিজ এখতিয়ার ও সীমার মধ্যে স্বাধীনভাবে আইন অনুসারে বিচারকাজ পরিচালনা করবে।
‘বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপ নিশ্চিত হয়, যখন ১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট তার যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট মানুষের মৌলিক মানবাধিকার রক্ষা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং স্বল্প সময়ে বিচারপ্রার্থীদের ন্যায়বিচার প্রদানে কাজ করে যাচ্ছে। শান্তি ও সংকটে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের অভিভাবক ও রক্ষক হিসেবে মর্যাদাপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।’
আলোচনা সভায় জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘বিচার পাওয়ার অধিকার মানুষের মৌলিক অধিকার। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাই আমাদের সংবিধানের মূল লক্ষ্য।’
তিনি বলেন, ‘শক্ত আইনি কাঠামো থাকা সত্ত্বেও আমাদের দেশের নারীরা নানাভাবে বিচারবঞ্চিত। তারা যাতে পিছিয়ে না থাকেন, তাদের বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের আরও সংবেদনশীল হতে হবে। পাশাপাশি প্রান্তিক মানুষ, অসচ্ছল মানুষকে আইনি সহায়তা দিতে এগিয়ে আসতে হবে।’
করোনা মহামারিতে মারা যাওয়া বিচারক ও আইনজীবীদের স্মরণ করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘এই করোনার সময়ে আমাদের অনেক বিজ্ঞ আইনজীবী ও বিচারককে হারিয়েছি। ১৯৭২ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু নিজে সুপ্রিম কোর্ট উদ্বোধন করেন। সেই সময় থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের যাত্রা শুরু হয়। এটি ছিল বঙ্গবন্ধুর একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।
‘বঙ্গবন্ধু তার সূদুরপ্রসারী পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। দুর্ভাগ্যের বিষয়, কিছু বিপথগামী লোক তার সেই অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দেয়। এরপর মানুষের বিচার পাওয়ার পথকে রুদ্ধ করে দেয়। বিচার যাতে না হয় সে জন্য দায়মুক্তির আইন পাস করা হয়। দীর্ঘ সময় পরে হলেও বিচার বিভাগ আজ সম্পূর্ণ স্বাধীন। বিচারক সংকট কাটাতে আরও বিচারক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।’
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্ট দিবস উদযাপনসংক্রান্ত জাজেস কমিটির সভাপতি বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন এবং অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।