ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে চায় সরকার। এ জন্য কয়েকটি স্থলবন্দরের অবকাঠামো শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এর অংশ হিসেবে সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) কর্মসূচির আওতায় ‘সমন্বিত বাণিজ্য সহজীকরণ উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে সংস্থাটি।
রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সীমান্তের অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করা, যাতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া এক দেশ থেকে অন্য দেশে যেন দ্রুত পণ্য আনা-নেয়া করা যায় ও কম খরচ হয়। পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য যেন আরও নিরাপদ হয়।
সাসেক হলো বাংলাদেশ, ভুটান, মালদ্বীপ, ভারত, মিয়ানমার, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে সড়ক যোগাযোগের মাধ্যমে অংশীদারত্ব উন্নয়নের একটি কর্মসূচি। এর আওতায় বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পাশের দেশগুলোর সঙ্গে যেন সহজেই বাণিজ্য করা যায়, সে জন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রাথমিক প্রস্তাবনা বা ডিপিপি তৈরির কাজ চলছে। শিগগিরই এটি অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হবে।’
এনবিআর বলেছে, পাঁচ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ।
প্রকল্পের জন্য প্রাথমিকভাবে ৩১৪ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এর মধ্যে সরকার ৫১ কোটি টাকা দেবে। বাকি ২৬৩ কোটি টাকা আসবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে।
কম সুদে এবং দীর্ঘমেয়াদে এ ঋণ দেবে এডিবি।
আলোচ্য প্রকল্পের আওতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর ও সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে।
পাশাপাশি আধুনিক কাস্টম হাউসের ভবন নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি স্থাপন, ওয়্যার হাউস, ল্যাবরেটরি এবং আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।
স্থলবন্দরের ভবন নির্মাণে ৮৬ কোটি টাকা খরচ হবে। আর তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি যন্ত্রপাতি এবং আসবাবপত্রের জন্য প্রাথমিকভাবে ১২৯ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
এনবিআর বলছে, আলোচ্য প্রকল্পের আওতায় বিবিরবাজার, বিরল, দর্শনা, শেওলা, সোনাহাট, টেকনাফসহ আরও কয়েকটি স্থলবন্দরের শুল্ক স্টেশনের উন্নয়ন করা হবে।
বাংলাদেশের বড় বাণিজ্য অংশীদার ভারতের সঙ্গে যে আমদানি-রপ্তানি হয়, তার বড় অংশ হয়ে থাকে স্থলবন্দরের মাধ্যমে। তবে এসব বন্দরের অবকাঠামো দুর্বল থাকায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
প্রস্তাবিত প্রকল্পের মাধ্যমে বন্দরের ভবন, রাস্তাঘাটসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় অবকাঠমো তৈরি করা হবে। এর ফলে সীমান্ত দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য আরও বাড়বে বলে আশা করছে সরকার।
ভারত তাদের এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে সহজে পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের কয়েকটি বন্দর ব্যবহার করছে।
মিয়ানমারের সঙ্গেও বাংলাদেশের স্থলসীমান্ত দিয়ে আমদানি-রপ্তানি রয়েছে। এর পাশাপাশি নেপাল বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহার করে সড়কপথে পণ্য নেয়ার পরিকল্পনা করছে।
এ ছাড়া ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি। ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশ অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) করেছে। নেপালের সঙ্গে ও একই চুক্তি করার প্রক্রিয়া চলছে। এর ফলে স্থলবন্দরগুলোর উন্নয়ন হলে আঞ্চলিক বাণিজ্যে নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে মনে করেন এনবিআরের কর্মকর্তারা।