রাজশাহীর বাগমারায় বিজয় দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের অনুষ্ঠানে মোনাজাত করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ‘জান্নাত চাওয়ায়’ তাহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক খন্দকার আব্দুর রাজ্জাককে পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
দল থেকে তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগ ও জেলা আওয়ামী লীগের কাছে সুপারিশও করা হয়েছে।
তাহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র আবুল কালাম আজাদ জানান, বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে কথা বলার সময়, মোনাজাত করার সময়- এমন অসচেতন আচরণ তারা ক্ষমা করতে পারেন না। এ জন্য জরুরি সভা করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
আর আব্দুর রাজ্জাক দাবি করেছেন, তিনি অসচেতনভাবে এ কথা বলে ফেলেছেন। তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ার কারণে এমন হতে পারে জানিয়ে দেশবাসীর কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন।
এর আগে বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে বুধবার রাত ১২টা ১ মিনিটে তাহেরপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান তাহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগ নেতারা। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর সেখানে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন তাহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক খন্দকার আব্দুর রাজ্জাক।
মোনাজাতের একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার জনক, জাতির জনক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যারা হত্যা করেছে, আল্লাহ-তারা মানুষ নয়, তারা অমানুষ। মাবুদ, জাতির জনক এবং তার পরিবারকে যারা হত্যা করেছে, আল্লাহ-সকলকে তুমি জান্নাত দান করে দিও আল্লাহ।’
মোনাজাতের পর পরই এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। একটি ভিডিও ক্লিপও ছড়িয়ে পড়ে।
তাহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ জানান, এই মোনাজাত নিয়ে সমালোচনা চলছে। এটি নিয়ে শুক্রবার বিকেলে পৌর আওয়ামী লীগের জরুরি সভা হয়েছে। সেখানে আলোচনা শেষে আব্দুর রাজ্জাককে ধর্মবিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
তিনি বলেন, ‘আব্দুর রাজ্জাক বহু বছর ধরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত। তিনি পারিবারিকভাবেই আওয়ামী লীগ। আব্দুর রাজ্জাক নিজে অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চেয়েছেন এবং আমরা জেনেছি যে, তিনি অসাবধানতাবশত এটি বলে ফেলেছেন।
‘কিন্তু তার পরও বঙ্গবন্ধুর বিষয় যখন সম্পৃক্ত, এ ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যখন কোনো কথা বলবে, মোনাজাত করবে, তখন তার সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি।’
আব্দুর রাজ্জাক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি এ জন্য দুঃখিত, ক্ষমাপ্রার্থী। আমি স্থানীয় আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। দেশবাসীর কাছে আমি ক্ষমা চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি বহু বছর ধরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত। অনেক অনুষ্ঠানে মোনাজাত করেছি, কিন্তু আমার অজান্তে ভুল করে এমন হয়ে গেছে।
‘আমি খুনিদের জাহান্নাম চাইতে গিয়ে জান্নাত বলে ফেলেছি। আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং অনেক রাতে এই মোনাজাত হওয়ায় এমন হয়ে থাকতে পারে।’
দল থেকে বহিষ্কার করা হলেও আব্দুর রাজ্জাক ভোট আওয়ামী লীগকেই দেবেন বলে দাবি করে বলেন, ‘দল থেকে বহিষ্কার করলেও ভোট দিতে তো আর নিষেধ নাই।’