ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরজুড়ে আতঙ্ক। নবীনগরের নাটঘর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের ছেলে এরশাদুল হককে শুক্রবার রাতে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গুলিতে নিহত হয়েছেন এরশাদুলের সহযোগী বাদল সরকারও।
এরশাদুলের পরিবার বলছে, হামলা হয়েছে আসন্ন ইউপি নির্বাচনের জেরেই। কারণ এরশাদুল চেয়ারম্যান পদের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। পুলিশেরও ধারণা, নির্বাচনি বিরোধের জেরেই হত্যা করা হয়েছে তাকে।
এরশাদুল ছিলেন নাটঘর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক।
এরশাদের স্ত্রী সুমি বেগম জানান, শুক্রবার রাতে দুটি ওয়াজ মাহফিলে যোগ দেন তার স্বামী। মাহফিল শেষে সবার কাছে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হতে দোয়া চান। সবশেষ কুড়িঘর বাজারের মাহফিল শেষে ফেরার পথে তার ওপর গুলি চালানো হয়।
তিনি জানান, তার ও এরশাদের সংসারে আছে দুই ছেলে ও এক মেয়ে। স্বামীকে হারিয়ে তিনি এখন দিশাহারা।
এরশাদের ভাই আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ভাই প্রথমে একইছড়া গ্রামে মাহফিলে যান। সেখান থেকে ফিরে কুড়িঘর বাজারে এসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেন। পরে আবার সেখান থেকে পিরমন্দপুর এলাকায় মাহফিলে যান।
‘আমিও ছিলাম, ২টা মোটরসাইকেল নিয়ে আমরা মাহফিলে যাই। বাড়ি ফেরার পথে আমাদের হোন্ডার পেছনে ছিল ভাইয়ের হোন্ডা। তখন খায়ের মিয়ার বাড়ির সামনে গেলেই ৫টা মোটরসাইকেল দাঁড়ানো ছিল। তখন দুই দিকে থেকে গুলি করা শুরু হয়।’
হামলাকারীরা কারা জানতে চাইলে তিনি জানান, পুলিশ ও নানা জটিলতায় তাদের নাম বলতে চাচ্ছেন না।
এরশাদুলের মৃত্যুতে দিশাহারা স্ত্রী
চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জানান, তার ছেলে এরশাদ সামনের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। এলাকায় তার ও এরশাদের ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছিল। এ কারণে এরশাদকে হত্যা করা হয়েছে। তবে তিনিও কারও নাম নেননি।
এরশাদের মা বলেন, ‘আমার পুতের কোনো শত্রু নাই। হেরে কেরে মারল। আমার অনেক আদরের পুতরে আল্লাহ নিসেগা।’
নবীনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সিরাজুল ইসলাম জানান, শুক্রবার রাতে ঘটনাস্থলের আশপাশে অভিযান চালিয়ে এক যুবককে আটক করা হয়। তার কাছ থেকে চারটি গুলির খোসা জব্দ করা হয়। তবে তদন্তের স্বার্থে তার পরিচয় জানাননি তিনি।
ঘটনার বর্ণনায় জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন জানান, শুক্রবার রাতে কুড়িঘর বাজারের পাশে ওয়াজ মাহফিলে যোগ দিতে যান এরশাদ, বাদলসহ কয়েকজন। সেখান থেকে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা এরশাদ ও বাদলকে লক্ষ্য করেই গুলি করে। ঘটনাস্থলে বাদল মারা যান। আর আহত এরশাদকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানোর সময় পথে তার মৃত্যু হয়।
এদিকে জোড়া খুনের ঘটনায় জেলা প্রশাসক হায়াত উদ দৌলা খাঁন ও পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। নিহত এরশাদুল ও বাদলের বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছেন।