জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে খাবার আয়োজন নিয়ে ছাত্রলীগের ‘খবরদারির’ প্রতিবাদের পর জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছেন প্রভোস্ট সিরাজাম মুনিরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে শুক্রবার সন্ধ্যায় আবেদন করেন তিনি।
বিষয়টি নিউজবাংলাকে শনিবার বেলা ১১টার দিকে নিশ্চিত করেছেন রেজিস্ট্রার অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর।
তিনি বলেন, ‘আবেদন হাতে পেয়েই প্রক্টরের সহায়তায় সিরাজাম মুনিরার নিরাপত্তায় তার বাসার সামনে আনসার সদস্য মোতায়েন করেছি।’
হুমায়ুন কবীর জানান, দোলনচাঁপা হলের প্রভোস্ট ও চার হাউস টিউটরের পদত্যাগের ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেলে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আহমেদুল বারীকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটি গুরুত্বের সঙ্গে পুরো ঘটনাটি খতিয়ে দেখছে। তারা দুই সপ্তাহ অর্থাৎ ১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
আবেদনপত্রে সিরাজাম মুনিরা উল্লেখ করেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান রাকিবের দ্বারা লাঞ্ছিত হয়ে ও তার প্রকাশ্যে দেয়া জীবননাশের হুমকির মুখে ১৫ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের হল দোলনচাঁপা হলের প্রভোস্টের পদ থেকে আমি ও চারজন হাউস টিউটর একসঙ্গে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছি।
‘১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে আমি যখন পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে যাই, তখন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তার দুজন সঙ্গী অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে। আমার পক্ষে এই নোংরা ইঙ্গিতপূর্ণ অপমান সহ্য করা সম্ভব হচ্ছিল না। সহকর্মীরা এই জিঘাংসা দেখে আমাকে তাড়াতাড়ি বাসায় রেখে যান।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘এর পর থেকে আমি লক্ষ্য করেছি কতিপয় শিক্ষার্থী বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গা থেকে আমার বাসার দিকে তীব্র নজর রাখছে। রাকিব ও তার সঙ্গীদের প্রকাশ্য হুমকির মুখে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এখন আমি কার্যত বাসাবন্দি। এ অবস্থায় আমার নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করছি।’
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান রাকিব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যতগুলো অভিযোগ তোলা হয়েছে সবগুলো মিথ্যা ও বানোয়াট। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তোলা হয়েছে। ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে সব পরিষ্কার হবে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর উজ্জ্বল কুমার প্রধান বলেন, ঘটনাটি সত্য হলে তা দুঃখজনক। তদন্ত কমিটি ঘটনার আদ্যপান্ত খতিয়ে দেখছে। প্রতিবেদন হাতে এলেই যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিজয় দিবসের ৫০তম সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ছাত্রীদের জন্য খাবার পরিবেশনের আয়োজন করে দোলনচাঁপা ছাত্রী হল কর্তৃপক্ষ। খাবারের জন্য পোলাওয়ের চাল ও খাসি কেনা হয়।
এ খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান রাকিবের ‘কথামতো’ খাবার আয়োজনের সব টাকা তার হাতে তুলে না দেয়ায় প্রভোস্টসহ পাঁচজনকে হুমকি দেন ও অপমান করেন।
প্রভোস্ট সিরাজাম মুনিরা সেদিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিজয় দিবস উপলক্ষে ছাত্রীদের খাবারের জন্য ৬১ হাজার টাকা ও উপহারসামগ্রী জোগাড় করি। আমরা খাসি, পোলাওয়ের চালসহ সবকিছু কিনে ফেলেছি। ছাত্রীদের খাবারের টোকেনও দেয়া হয়েছে।
‘এ ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতারা উত্তেজিত হয়ে বলে, খাসি ও অন্যান্য সামগ্রী বিক্রি করে তাদের হাতে পুরো টাকা তুলে দিতে হবে। ছাত্রলীগ সেক্রেটারির কথামতো না চললে কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে পারবে না।’
তবে এই পদত্যাগ করাকে ‘বাড়াবাড়ি’ বলে মন্তব্য করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিব।