শীতে পর্যটনের ভরা মৌসুমে তিন দিনের টানা ছুটিতে কক্সবাজারে হোটেল ভাড়া ও খাবারের দাম নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোলপাড়।
টিকিট কালোবাজারির মতো হোটেল-মোটেলের কক্ষ ভাড়া করতে গিয়েও এখন একই সমস্যা হচ্ছে। কক্ষ ভাড়া করতে গেলে বলা হচ্ছে খালি নেই। তবে অন্যরা বলছেন, বেশি টাকা দিলে তারা ব্যবস্থা করে দেবেন।
তবে খাবারের মাত্রাতিরিক্ত দাম দেয়ার বিষয়ে যে প্রতিবেদনে তুমুল আলোচনা, তার সত্যতা মেলা ভার।
পর্যটন নগরীকে ঘিরে রয়েছে এক হাজারের বেশি খাবার হোটেল। সম্প্রতি গণমাধ্যমে খবর প্রচার হয়েছে, শুধু ডাল-ভাতের দাম ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা রাখা হচ্ছে পর্যটকদের কাছে।
তবে এ তথ্যে অবাক হয়েছেন রেস্টুরেন্ট মালিকরা। যে ডাল তারা ভাতের সঙ্গে ফ্রি দেন, সেখানে ডাল-ভাতের দাম ৪০০ টাকা হয় কী করে- এমন প্রশ্ন তাদের।কক্সবাজারে বেড়াতে আসা যেকোনো পর্যটকের খাবারের জন্য পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকে ‘শালিক’ রেস্টুরেন্ট। শুক্রবার দুপুরেও সেখানে বিপুলসংখ্যক পর্যটক দুপুরের খাবার খেয়েছেন।
রেস্টুরেন্ট মালিক নাছির উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রেস্টুরেন্ট খোলার পর থেকে ভাতের সঙ্গে ডাল ফ্রি দিয়ে আসছি। সর্বোচ্চ নিলে ২০ টাকা নেয়া যায়। কিন্তু সে ডালের দাম তো ২০০ টাকা হতে পারে না।’তিনি আরও বলেন, ‘হোটেলে বিপুল মানুষ আছে। জিজ্ঞেস করুন তো, কারও কাছে ডালের দাম নিয়েছি কি না। একটা ভাতের প্লেট ১০০ টাকা। যেখানে অন্তত তিনজন খেতে পারবে। সেখানে শুধু ভাত-ডাল ৪০০ টাকা হাস্যকর ছাড়া আর কিছু নয়।’
শালিক থেকে খেয়ে বের হতে দেখা গেল একদল তরুণ-তরুণীকে। তাদের একজন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা কলা ভর্তা, কোরাল মাছ ও গরু ভুনা দিয়ে খেলাম। তারা তো ডাল দিয়েছে ফ্রিতে, যদিও মেন্যুতে দাম ২০ টাকা লেখা আছে। হয়তো আলাদা করে কেউ ডাল নিতে চাইলে তার জন্য এটা।’
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে কয়লা নামে একটি রেস্টুরেন্টের কথা। যেখানে মুগডাল ৩০০ টাকায় বিক্রির কথা বলা হয়েছে।
তবে কয়লার মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) মো. বাদশা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা মুগডাল বিক্রিই করি না। আমাদের কাছে পাবেন কয়েক রকমের বিরিয়ানি, গরুর মাংস, নান আর চিকেন চাপ বা বারবিকিউ।’
কলাতলী রেস্তোরাঁয় পরিবার নিয়ে খেয়েছেন সালাউদ্দিন জেসি। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশি কোরালের দামটা একটু বেশি রেখেছে মনে হয়েছে। বাকি সব ঠিকই আছে।‘
ডাল-ভাত ৪০০ টাকা রেখেছে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ডাল-ভাত ৪০০ রাখলে তো তাকে বেঁধে পুলিশে খবর দিতাম।’
শহরের কলাতলী, সুগন্ধা ও লাবণীর মেরিন ফুডস রেস্তোরাঁ, কলাতলী রেস্তোরাঁ, বৈশাখী রেস্তোরাঁ ও গ্রিন চিলি রেস্টুরেন্ট ঘুরে দেখা যায়, খাবারের টাঙানো মেন্যুতে সাদা ভাত একজনের জন্য ৩০ টাকা, দুজনের জন্য ৬০ ও তিনজনের জন্য ৯০ টাকা এবং ডাল সর্বোচ্চ ২০ টাকা লেখা।
এ ছাড়া পোলাও ৬০ টাকা, চিকেন খিচুড়ি ১৬০, বিফ খিচুড়ি ১৮০, চিকেন বিরিয়ানি ১৬০, বিফ বিরিয়ানি ১৮০, আলু ভর্তা ৩০, কলা ভর্তা ৪০, বেগুন ভর্তা ৪০, টমেটো ভর্তা ৪০, কোরাল মাছ ভর্তা ৮০, ছুরি শুঁটকি ভর্তা ৬০, শাক-ভাতসহ ৪০, করলা ভাজি ৪০, মিক্স সবজি ৫০, চিচিঙ্গা ভাজি ৪০, ঢেঁড়স ভাজি ৪০, ডিম ভর্তা ৪০, চিংড়ি মাছ ভর্তা ৮০ ও সব ভর্তার প্যাকেজ ১৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি নঈমুল হক চৌধুরী টুটুল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সব রেস্তোরাঁয় টাঙানো আছে দামের তালিকা। জেলা প্রশাসন এসব বিষয় নিয়মিত তরদারক করছে। এখানে দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।’
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘মাছ-মাংসের দামের কথা বললেও বিশ্বাস করতাম। কিন্তু যে ডাল ফ্রিতে বিক্রি হয়, সে ডাল-ভাত কী করে ৪০০ টাকা হয়?’
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান বলেন, ‘খাবারের দাম বেশি নেয়ার কোনো অভিযোগ পাইনি। আমরা মাঠে আছি। কেউ অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’