১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর ক্ষমতায় আসা খোন্দকার মোশতাক আহমেদের সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক ছিল এমন একজনকে আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী করা নিয়ে কুমিল্লায় ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়েছে।
কুমিল্লার লালমাই উপজেলার ৬ নম্বর পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়নে ক্ষমতাসীন দল প্রার্থী করেছে খন্দকার সাইফুল্লাহ নামে একজনকে, যার পরিবারের সঙ্গে খোন্দকার মোশতাকের আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল বিয়ের সূত্রে।
সাইফুল্লাহ ও তার পরিবারের দাবি, এটা বহু বছর আগের কথা। সেই বিয়ে আর টেকেনি। আর দুই পক্ষে কোনো যোগাযোগও নেই।
সাইফুল্লার ছোট চাচা আবু জাফর খন্দকার বিয়ে করেন মোশতাকের ভাগ্নি আমাতুল শারমিন খন্দকারকে।
আত্মীয়তার সম্পর্ক দূরের হলেও বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগে বিতর্ক চলছে।
তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, খন্দকার সাইফুল্লাহ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না কখনও। এমনকি তার দলীয় সদস্য পদও নেই।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে খন্দকার সাইফুল্লাহ বলেন, ৩০ থেকে ৪০ বছর আগে তার চাচার বিয়ে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। তারা বাড়িতেও থাকেন না। সেই বিয়ের সুবাদে সম্পর্কের দায় তার ওপর আসে না।
আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকার অভিযোগের প্রসঙ্গে সাইফুল্লাহ বলেন, তার বাবা আওয়ামী লীগের নিবেদিত কর্মী ছিলেন। তিনিও নিজেকে আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবেই দেখেন।
খন্দকার সাইফুল্লাহর বড় ভাই খন্দকার গোলাম মোর্শেদ বলেন, তার চাচা খন্দকার আবু জাফর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে লেখাপড়া করার সময় খোন্দকার মোশতাকের ভাগ্নির সঙ্গে প্রেম করে বিয়ে করেন। পরে পরিবার মেনে নেয়নি।
তিনি বলেন, ‘এ ঘটনা ৩০-৪০ বছর আগের। তার পর থেকে চাচার সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক আর নেই। পরে ওই নারী চাচাকে ডিভোর্স দিয়ে অন্যত্র বিয়ে করেন।’
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে পেরুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয় আমি কোনো মন্তব্য করব না। তবে এলাকায় গিয়ে খবর নিলে সব জানতে পারবেন।’
লালমাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান ভূইয়া বলেন, ‘আমরা বিষয়টি শুনেছি। আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘যদি তিনি খোন্দকার মোশতাকের আত্মীয় হন, তাহলে আমরা কখনই এমন কিছু মেনে নেব না; যা আমাদের দলীয় আদর্শকে কলঙ্কিত করে।’
খোন্দকার মোশতাক বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও তাকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে দেখা হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তিনিই রাষ্ট্রপতি হয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করা যাবে না মর্মে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেন। পরে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে সেই অধ্যাদেশকে সংবিধানের অংশ করেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যায় মোশতাকের ভূমিকা নিয়ে অসংখ্যবার মন্তব্য করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।