বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকত কক্সবাজারে পর্যটকদের নিরাপত্তায় ৭ বছর ধরে কাজ করে আসছে সিসেইফ নামে একটি বেসরকারি লাইফগার্ড সংস্থা। সাগরে কেউ ডুবে গেলে তাদের উদ্ধার করাই মূলত এই সংস্থার কর্মীদের কাজ। বেসরকারি অর্থায়নে ২০১৪ সাল থেকে চালু হওয়া এই সংস্থায় এখন দুই শিফটে কাজ করেন ২৭ জন উদ্ধারকর্মী।
তবে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় চলতি মাসেই এর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এটি হলে সৈকতে পর্যটকদের উদ্ধারে নিবেদিত লাইফগার্ড কর্মী বলতে আর কেউ থাকবে না।
স্থানীয়রা বলছেন, সিসেইফ বন্ধ হয়ে গেলে সৈকতে ঘুরতে আসা মানুষের জীবন ঝুঁকিতে পড়বে। সেইসঙ্গে বেকার হয়ে পড়বেন ওই সংস্থার ২৭ কর্মী।
বেসরকারি সংস্থা মোনাকো ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে এত বছর ধরে চলছিল সিসেইফের কার্যক্রম। এই ফাউন্ডেশন থেকেই বেতনভাতা পাচ্ছিলেন লাইফগার্ড কর্মীরা। কক্সবাজারে এই কার্যক্রম পরিচালনা করছিল সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) নামে বেসরকারি সংস্থা।
সাগরে গোসলে নেমে তলিয়ে যাওয়া পর্যটকদের উদ্ধারে নয়টি স্কি টিউব ও একটি রেসকিউ বোট দিয়ে কাজ চালিয়ে নিচ্ছিলেন সিসেইফ কর্মীরা।
এ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সিসেইফ চালিয়ে নিতে মোনাকোর সঙ্গে সিআইপিআরবির চু্ক্তি ছিল। মেয়াদ শেষে মোনাকো আর চুক্তি নবায়নে আগ্রহী নয় বলে জানিয়েছে সিসেইফ প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় সরকারের তত্ত্বাবধানে অর্থায়ন চান তারা।
কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের মুখপাত্র এইচ এম নজরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চার মাস ছিল পর্যটন মৌসুম। এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। এখন সারা বছর মানুষ ছুটে আসছে কক্সবাজারে।
‘এমন অবস্থায় যদি লাইফগার্ডের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে সৈকতে মৃত্যুর মিছিল শুরু হবে। কারণ লাইফগার্ড ছাড়া উদ্ধারক্ষমতা আর কারও নেই। তাৎক্ষণিক ভূমিকা থাকে তাদের।’
তিনি আরও বলেন, ‘আর্থিক সংকট কেন থাকবে। জেলা প্রশাসনের বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি রয়েছে, তারা তো চাইলে একটি ফান্ড তৈরি করে দিতে পারে।’বিষয়টির সমাধান সরকারের ও পর্যটনসংশ্লিষ্টদেরই করা উচিত বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কক্সবাজারের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরা যদি সৈকত থেকে উঠে পড়েন, তাহলে পর্যটকরা সমুদ্রবিমুখ হবে। আর পর্যটক না এলে লোকসান সরকারের বা পর্যটনসংশ্লিষ্টদের। এখন বিষয়টির সমাধান তাদেরই করতে হবে। যেমন বিশ্বের অনেক দেশে পর্যটকদের কাছ থেকে কাটা হয় ট্যুরিস্ট সেফটি ফি। সে রকম পন্থায় যেতে পারে সরকার।’
সিআইপিআরবির সিসেইফ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক শফকাত হোসেন জানান, প্রতি বছর ২৭ সদস্যের বেতনভাতা এবং পর্যটকদের উদ্ধারকাজে ব্যয় হয় প্রায় দেড় কোটি টাকার মতো, যা অর্থায়ন করত মোনাকো ফাউন্ডেশন। মূলত তারা চেয়েছিল লাইফগার্ডদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মাঠে ছেড়ে দিতে। এরপর হয়ত সরকার তাদের নিয়ে ভাববে। সাত বছর অপেক্ষার পরও সংস্থাটি সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে পারেনি।
শফকত জানান, এ কারণে বাধ্য হয়েই ডিসেম্বরের পর চুক্তির মেয়াদ আর বাড়াতে আগ্রহী নয় সংস্থাটি।তিনি বলেন, ‘অর্থ শেষ হয়েছে আগেই। মূলত ডিসেম্বরটা কোনোভাবে যাবে। আমরা বেসরকারি অর্থায়নের জন্য প্রতিষ্ঠান খুঁজছি। যদি পাওয়া না যায়, তাহলে বন্ধই করে দিতে হবে।
‘কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে একাধিকবার কথা হয়েছে। তিনি সাফ জানিয়েছেন তার কাছ থেকে কোনো ফান্ড পাচ্ছি না আমরা। তবে তিনি বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। নতুন কোনো সংস্থার অর্থায়নে নির্ভর করবে ২৭ লাইফগার্ড কর্মীর ভাগ্য ও পর্যটকদের নিরাপত্তা।’
এ বিষয়ে জানতে জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদকে ফোন করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে জানিয়েছেন। তবে কথা বলেছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) সৈয়দ মুরাদ ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘সিসেইফের কার্যক্রম বন্ধের বিষয়টি আমরা জানি। ডিসি সাহেবকেও জানানো হয়েছে। ওই প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে উনার আলোচনায় বসার কথা রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি বলেই আমি জানি।’