বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তির আয়োজনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শান্তি ও নিরাপত্তায় জোর দিয়ে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নের কথা বলেছেন।
বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে আয়োজিত ‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বক্তব্য রাখছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
৫০ বছর আগে ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনের বিকেলটা ছিল বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোর একটি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (সে সময় রেসকোর্স ময়দান) দখলদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সেদিন আত্মসমর্পণের দলিলে সই করার মধ্য দিয়ে অভ্যুদয় হয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর যে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল, সেটি পায় বাস্তব রূপ।
৫০ বছর পূর্তির এই বছরটি ঘটা করে আয়োজন করছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তির পাশাপাশি স্বাধীনতার মহাপুরুষ জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীও একই সঙ্গে পালিত হচ্ছে।
বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ আখ্যা দিয়ে জাতির পিতার কন্যা বলেন, এ দেশে সব মানুষ সমানভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারে, রাষ্ট্র সেটা নিশ্চিত করেছে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। বাংলাদেশে সকল মানুষ সমানভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারে এবং তারা পালন করছে। সেটা আমরা নিশ্চিত করেছি।’
জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, নারী নির্যাতন ও মাদক নির্মূলে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা দেশের মানুষের শান্তি চাই, নিরাপত্তা চাই, উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়তে চাই।’
বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হবে। সেটা আমরা অর্জন করেছি। এখন আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলব। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার নানা দিক নিয়েও কথা বলেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘আমাদের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৫৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে। কোভিড-১৯ আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। এই করোনাভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে রেখে আমাদের অর্থনীতির চাকাকে আমরা সচল রেখেছি। আমরা গ্রামীণ অর্থনীতি উন্নত করার পদক্ষেপ নিয়েছি।’
রাষ্ট্রীয় এই আয়োজনে ভারতের রাষ্ট্রপতি যোগ দেয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘ভারতের মহামান্য রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ সম্মানিত অতিথি হিসেবে এই গৌরবগাথার দিনে আমাদের মধ্যে উপস্থিত হয়েছেন। আমি তাঁর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’
মহান মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদের কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘বিজয় দিবসের ৫০ বছর পূর্তিতে আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি বন্ধুপ্রতীম দেশ, সংস্থা এবং ব্যক্তির প্রতি যারা ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে খাদ্য দিয়ে, অর্থ দিয়ে, অস্ত্র দিয়ে, মানবিক সাহায্য দিয়ে এবং নৈতিক সমর্থন দিয়ে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।’
প্রতিবেশী ভারতের অবদানের কথাও স্মরণ করেন তিনি। বলেন, ‘আমাদের এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে এক অনন্য মানবিক নজির স্থাপন করেছিল। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী, তার সরকার, ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থার কর্মীগণ, লেখক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষ বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।’
‘বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র দিয়ে, প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের যুদ্ধের জন্য তৈরি করেছিলেন। সবশেষে মিত্র বাহিনীর সদস্য হিসেবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বেশ কিছুসংখ্যক ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য শহীদ হয়েছিলেন। আমি আজকে তাদের গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি। সশস্ত্র বাহিনীর শহীদ সদস্যদের আত্মার শান্তি কামনা করছি।’