বিজয়ের ৫০ বছর উদযাপনে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে ঢল নেমেছে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে। সকাল ৭টার পর স্মৃতিসৌধের দুয়ার সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হলে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন সব শ্রেণি-পেশা-বয়সের মানুষ।
বরিশালের আব্দুল আওয়াল স্ত্রী, নাতি ও নাতনিকে নিয়ে এসেছেন জাতীয় স্মৃতিসৌধে। এ দেশের স্বাধীনতার জন্য যারা জীবন দিয়েছেন তাদের আত্মত্যাগ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতেই তার এ প্রয়াস।
আব্দুল আওয়াল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নাতি ও নাতনিকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শুনিয়েছি। মূলত তাদের আগ্রহের কারণেই এখানে আসা। এখানে এসে তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চোখের সামনে দেখবে। এ দেশের জন্য যারা আত্মত্যাগ করেছে, তাদের মহান চিন্তাধারা যেন তাদের মধ্যেও সম্প্রসারিত হয় এটাই আমার চাওয়া।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আহমেদ আল জুবায়ের বন্ধুদের সঙ্গে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতি বছরই এ দিনটিতে এখানে আসি। যারা আমাদের জন্য একটি স্বাধীন দেশ দিয়ে গেছেন, তাদের আদর্শে যাতে নিজেকে গড়ে তুলতে পারি এটাই কামনা।’
৫০ বছরের বাংলাদেশের কাছে কী প্রত্যাশা, জানতে চাইলে সাভারের বাসিন্দা ইফতেখার মাহমুদ বলেন, ‘৫০ বছরে বাংলাদেশ অর্থনীতিতে অনেক দূর এগিয়েছে, কিন্তু এখনও দেশ থেকে বৈষম্য আর দুর্নীতি দূর হয়নি। আমার এটাই কামনা, এ দেশে প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে, দেশ দুর্নীতিমুক্ত হবে।’
এর আগে সকাল ৬টা ২৮ মিনিটে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ সময় মিনিট খানেক নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী; বেজে ওঠে বিউগলের করুণ সুর। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গার্ড অফ অনার দেয় সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল।
এরপর জাতির সূর্যসন্তানদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তিন বাহিনীর প্রধান।
পরে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানান দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। এ সময় তার পাশে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানা ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, হাছান মাহমুদসহ আরও অনেকে।
বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার ৫০ বছর উদযাপন উপলক্ষে দেশজুড়ে উৎসব উৎসব রব বিরাজ করছে। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাদের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। সেই হিসাবে বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তির দিন আজ।
বিজয় দিবস উপলক্ষে বরাবরের মতো সকাল সাড়ে ১০টায় তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমভিত্তিক যান্ত্রিক বহর প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করবেন রাষ্ট্রপতি। প্রধানমন্ত্রীও এ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। থাকবেন ভারতের রাষ্ট্রপতি অমরনাথ কোবিন্দ।
দিনটি সরকারি ছুটির দিন। সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাসমূহ আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে।