বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে উদ্বেলিত দেশ

  •    
  • ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০২

দুই যুগের অত্যাচার, নির্যাতন, শোষণ, বঞ্চনাকে শোনিত ধারায় ভাসিয়ে দিয়ে বাঙালি জাতির ভাগ্যাকাশে এই দিনে উদিত হয় মুক্তির সূর্য। ১৯৭১ সালের এই দিনে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে আসে চূড়ান্ত বিজয়। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের স্বাধীন ভূখণ্ডের অস্তিত্ব জানান দেয়ার দিন আজ।

আজ ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী। হাজার বছরের গর্বিত বাঙালি জাতির বীরত্বের অবিস্মরণীয় দিন।

১৯৭১ সালের এই দিনে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে বাঙালি জাতি। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের স্বাধীন ভূখণ্ডের অস্তিত্ব জানান দেয়ার দিন আজ। চির অহংকারের লাল-সবুজের বিজয় নিশান উড়ানোর দিন।

দুই যুগের অত্যাচার, নির্যাতন, শোষণ, বঞ্চনাকে রক্তের ঝরনা ধারায় ভাসিয়ে দিয়ে জাতির ভাগ্যাকাশে এই দিনে উদিত হয় মুক্তির সূর্য।

লাল-সবুজের পতাকার অধিকার প্রতিষ্ঠা করার পথটি মোটেও সহজ ছিল না। শুরুটা হয়েছিল ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই দিয়ে। প্রথম আগুন জ্বলে ৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারি। ফাগুনের আগুনে ভাষা আন্দোলনের দাবি আর উন্মাতাল গণমানুষের মুষ্টিবদ্ধ হাত একাকার হয়ে যায় সেদিন। ভাষার জন্য বুকের রক্ত ঝরায় বাঙালি। পুরো বিশ্ব অবাক তাকিয়ে রয়।

বাষট্টি, ঊনসত্তর এবং সত্তরের নির্বাচন শেষে একাত্তরে তীব্রতর হয় বাঙালির স্বাধীনতার স্পৃহা। ততদিনে শেখ মুজিবুর রহমান হয়ে উঠেছেন দিশেহারা জাতির কাণ্ডারি। শেখ মুজিবের নেতৃত্বের দূরদর্শিতায় পাকিস্তানিরা আঁকতে থাকে ষড়যন্ত্রের নতুন নকশা।

অবশেষে নিকষ আঁধারের মাঝে জেগে ওঠে হিরন্ময় হাতিয়ার। ৭ মার্চ একাত্তরের বিশাল জনসমুদ্র থেকে মহাকাব্যের প্রণেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা দেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। রক্ত যখন দিয়েছি, তখন আরও দেব, তবুও এদেশকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ।’

এই একটি মাত্র উচ্চারণে সত্যিকার দিক-নির্দেশনা পেয়ে যায় বাঙালি। শুরু হয় চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি। বাঙালি বুঝে যায় পাকিস্তানিদের শেষ কামড় দেয়ার সময় আসন্ন।

পাকিস্তানের সামরিক সরকার পুরো জাতিকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে ভয়াবহ মারণাস্ত্র নিয়ে ২৫ মার্চের কাল রাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুরু হয় বাঙালি নিধনযজ্ঞ।

বাতাসে লাশের গন্ধ, বারুদের ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন আকাশ। বাংলাদেশ রূপ নেয় এক প্রেতপুরীতে।

তবে দমে যায়নি মুক্তি পাগল বাংলার দামাল ছেলেরা। স্বাধীনতার সূর্যকে ছিনিয়ে আনতে অস্ত্র কাঁধে তুলে নেয় তারা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ২৫ মার্চ রাতে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পাকিস্তানি বাহিনী। যাওয়ার আগে তিনি ঘোষণা করেন স্বাধীনতা।

ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার সবাই শরিক হয় এ লড়াইয়ে। যতই দিন যায়, আরও শাণিত হয় প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার অস্ত্র। লক্ষ্য স্থির রেখে শত্রু ঠেকাতে দৃঢ় পায়ে এগিয়ে যায় বীর বাঙালি।

বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন স্পষ্ট হয়ে ওঠে। প্রতিবেশী ভারতও জড়িয়ে পড়ে বাঙালির ভাগ্যযুদ্ধে।

অবশেষে ৯ মাসের দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটিয়ে বাঙালি জাতির জীবনে আসে নতুন প্রভাত। ১৬ ডিসেম্বর সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সূচিত হয় মুক্তিযুদ্ধের অনিবার্য বিজয়। ৩০ লাখ শহিদের রক্ত আর লাখ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে বিজয়ের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত মুক্তি ধরা দেয় বাঙালির জীবনে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী

বিজয় দিবস উপলক্ষে আলাদা বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

লাখো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রপতি।

তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরমতসহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।’

মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ও চেতনা বাস্তবায়নে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরও বেশি অবদান রাখতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান রাষ্ট্রপ্রধান।

মহান বিজয় দিবসে দেশ ও জাতিকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তোলার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন আবদুল হামিদ।

বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাকে বাঙালির শ্রেষ্ঠতম অর্জন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘এই অর্জনকে অর্থবহ করতে স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সবাইকে জানতে ও জানাতে হবে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমরা পৌঁছে দেব- বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর এই মাহেন্দ্রক্ষণে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববের্ষর শুভক্ষণে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীনতার পর বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশের যা কিছু অর্জন তা জাতির পিতা ও আওয়ামী লীগের হাত ধরেই হয়েছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের এই উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত থাকলে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত ও উন্নত সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে পরিণত হবে।’

বিজয় দিবসের কর্মসূচি

যথাযোগ্য মর্যাদায় এবার উদযাপন করা হচ্ছে মহান বিজয় দিবস বা বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী। ঢাকায় প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে।

১৬ ডিসেম্বর সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় শুধু মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, ৯ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার এবং ঢাকার জেলা প্রশাসক অভ্যর্থনা ও বিদায় জানানোর জন্য উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা শ্রদ্ধা জানাবেন। তারপর স্মৃতিসৌধ খুলে দেয়া হবে সব শ্রেণি পেশার মানুষের জন্য।

সকাল ৮টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

করোনার কারণে গেল বছর না হলেও, এবার বর্ণাঢ্য পরিসরে অনুষ্ঠিত হবে বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ। প্রধান অতিথি থাকবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ দেখতে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে যোগ দিতে ঢাকা সফরে আসা ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দও কুচকাওয়াজে গেস্ট অফ অনার হিসেবে যোগ দেবেন।

মহান বিজয় দিবস ও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ দিবস উপলক্ষে গণভবনে ডাকটিকিট অবমুক্ত করবেন সরকার প্রধান। একইসঙ্গে দুপুরে বাংলাদেশ পর্যটন ব্র্যান্ড নেম “মুজিব’স বাংলাদেশ” লোগো উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী।

বেলা সাড়ে ৪টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা থেকে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের শপথ পরিচালনা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিকাল সাড়ে ৫টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হবে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান।

বিজয় দিবস সরকারি ছুটির দিন। সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।

বিজয় দিবসে ঢাকার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপে আলোকসজ্জা এবং জাতীয় পতাকা ও অন্যান্য পতাকায় সজ্জিত করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের কর্মসূচি

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে যথাযোগ্য মর্যাদায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে উৎসবমুখরতায় বিজয় দিবস উদযাপনের আহ্বান জানিয়েছে আওয়ামী লীগ।

এ দিন সূর্যোদয়ের ক্ষণে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সকাল ৭টায় সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে দলটি। সকাল সাড়ে ৮টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতেও জানানো হবে ফুলেল শ্রদ্ধা।

সকাল ১১টায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধি সৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল। নেতৃত্বে থাকবেন দলের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফারুক খান।

কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সমন্বয় করে স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসগুলোর সব স্তরের নেতা-কর্মী, সমর্থক ও জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

এ বিভাগের আরো খবর