বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাগানে গোলাপ ৫০ পয়সা, মার্কেটে ১০ টাকা

  •    
  • ১৫ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৮:১০

চাষি বাবু মিয়া বলেন, ‘ফুলের এবার তেমন দাম পাইতাছি না। ক্ষেতে যে পরিমাণ সার, খৈল দিছি, লেবার খাটাইছি ওই হিসাবে ফুলের মূল্য পাই না। একটা ফুল বিকাতাছে (বিক্রি) বর্তমান আটানা (৫০ পয়সা), এক ট্যাকা, দেড় ট্যাকা। গতকাইলকা বিক্রি করছি আটানা। জমিতে প্রায় ৪১ হাজার ট্যাকা খরচা হইছে।’

বিভিন্ন দিবস ঘিরে বরাবরই ফুলের চাহিদা থাকে তুঙ্গে। চড়া দামে বিক্রি হয় ফুল। বিশেষ করে গোলাপের চাহিদা থাকে বেশি। কারণ তোড়া বানাতে এই ফুলের জুড়ি মেলা ভার।

এবার বিজয় দিবস ঘিরে সাভারের দোকানগুলোয় ফুলের দাম বেড়েছে। প্রতিটি গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ১০-১৫ টাকা দরে। আর ১০০টি গোলাপের একেকটি বান্ডেল বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়।

তবে চাষিরা বলছেন, ন্যায্যমূল্যে ফুল বিক্রি করতে না পারায় লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। অনেকটা পানির দরেই গোলাপ বিক্রি হচ্ছে সাভারের বিরুলিয়ার গোলাপ গ্রামে।

বিরুলিয়া গ্রামে প্রায় ২০ বছর ধরে গোলাপ চাষ করছেন মনির হোসেন। করোনার সময় লকডাউনের কারণে অনেক ফুল বাগানেই নষ্ট হয়েছে তার।

মনির ভেবেছিলেন বিজয় দিবস ঘিরে কিছুটা লাভের মুখ দেখবেন। তবে সেই আশার পালে হাওয়া লাগেনি তেমন। একই অবস্থা এলাকার অনেক চাষির।

মনির হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এবার আমাদের দুর্ভাগ্য। অনেকেই বউয়ের গয়নাগাটি বেইচা জমিজমা বিক্রি কইরা, কেউ কিস্তি উঠাইয়া, লোন উঠাইয়া ক্ষেতে-খোলায় খাওন দিছে।

‘আমি ৬০ হাজার ট্যাকার ক্ষেতে খাওন দিছি। গোবর, মাইটা, জিমসহ বিভিন্ন পদের সার দিছি। বর্তমানে ফুল তো বিকেই (বিক্রি) না। এখন আমরা একটা ফুল যে দামে বিক্রি করতাছি, ওই ট্যাকা দিয়া ফুল কাটারও ট্যাকা আসে না। আমি এ পর্যন্ত ৬০ হাজার ট্যাকা ইনভেস্ট (বিনিয়োগ) কইরা মাত্র ৪ হাজার ট্যাকা পাইছি।’

তিনি বলেন, ‘এখন আমার বাড়িওয়ালির (স্ত্রী) সঙ্গে লাইগা গেছে গণ্ডগোল। তার গয়নাগাটি বিক্রি আর বন্দক রাইখা ক্ষেত-খোলা করছিলাম। কারণ ফুল তো আমাদের বিক্রি হইতাছে না। আর কেউ কিনতাছেও না।’

বাবু মিয়া নামে আরেক চাষি বলেন, ‘ফুলের এবার তেমন দাম পাইতাছি না। ক্ষেতে যে পরিমাণ সার, খৈল দিছি, লেবার খাটাইছি ওই হিসাবে ফুলের মূল্য পাই না। একটা ফুল বিকাতাছে (বিক্রি) বর্তমান আটানা (৫০ পয়সা), এক ট্যাকা, দেড় ট্যাকা। গতকাইলকা বিক্রি করছি আটানা। জমিতে প্রায় ৪১ হাজার ট্যাকা খরচা হইছে।

‘সামনে দুইটা মৌসুমে ভাষা ও ভালোবাসা দিবসে ৮-৯ ট্যাকা ফুল বিকলে তাইলে ওই সুমকা (সময়) আল্লাহ দেয় কিছুটা লাভের মুখ দেখব। কিন্তু এখন বিজয় দিবসের আগে ফুল বিকতাছে না।’

চাষি মো. সোহরাব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার বাগানটায় ১ লাখ ২০ ট্যাকা খরচো করছি। এখন তুরি (পর্যন্ত) ট্যাকাই তুলবার পারি নাই। বর্তমান একটা ফুল প্রতি পিস বিক্রি হইতাছে ৫০ পয়সা, এক ট্যকা।’

সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধের ফুলের দোকান ঘুরে দেখা যায়, বিক্রেতারা প্রতিটি গোলাপ বিক্রি করছেন ১০-১৫ টাকায়।

সোহেল হোসেন নামে এক ফুল দোকানি বলেন, ‘কাঁচা ফুলের দাম অনেক চড়া। কাঁচা ফুলের থাইকা আর্টিফিসিয়াল (কৃত্রিম) ফুলের দাম অনেক কম। কিছু দিন আগে থাইকা একেক পিস গোলাপ ফুল ১০-১৫ টাকা এ রকম কিনা লাগছে। আর এক পিস আর্টিফিসিয়াল ফুল ৮-৯ টাকার ভেতরে পাওয়া যাইতেছে।’

রজনীগন্ধা পুষ্প বিতানের মালিক ময়েজ উদ্দিন নিউজবাংলাকে, ‘প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে আমাদের বেচাকেনাটা বেশি হয়। যশোর থেকে মূলত আমাদের ফুলগুলো আসে। আবার ঢাকার আগারগাঁও, শাহবাগ আড়ত থেকে ফুল সংগ্রহ করি। এখন গোলাপ ফুলের বান্ডেল ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। বিজয় দিবস উপলক্ষে এখন বাজারটা বেশি।’

সাভার উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য, বিরুলিয়া ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামে প্রায় ৪০০ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হয়ে থাকে। কয়েক প্রজাতির গোলাপ, গ্লাডিওলাস, গাঁদাসহ বিভিন্ন ফুলের চাষ হয় এখানে। এর মধ্যে প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতেই চাষ হয়ে থাকে গোলাপ।

এ বিভাগের আরো খবর