আদালতের আদেশ অমান্য করে শিশুকে নিয়ে বিদেশ পালিয়ে যাওয়ায় বাবা সানিউর টিআইএম নবীকে ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে হাইকোর্ট। পাশাপাশি তাকে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক মাস কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশের অ্যাম্বাসেডরকে এই আদেশ প্রতিপালন করতে বলা হয়েছে।
এছাড়া আদালত সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিরূপ মন্তব্য করায় শিশুটির দাদা টিআইএম নবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করা হয়েছে।
পাশাপাশি সিআইডির ফরেনসিক রিপোর্ট বিবাদী পক্ষ কিভাবে পেল সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলেছে আদালত।
বুধবার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মুস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
আদালতে রিটকারী ভারতীয় মায়ের পক্ষে ছিলেন ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। সঙ্গে ছিলেন মারুফ হাসান। অন্যদিকে শিশুর দাদার পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান।
পরে আইনজীবী মুস্তাফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলা থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালে ভারতের হায়দরাবাদের সাদিকা সাঈদ শেখ নামে এক নারীকে বিয়ে করেন বারিধারার সানিউর টিআইএম নবী। বিয়ের পর তারা মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে বসবাস শুরু করেন। কয়েক মাস পর তারা ঢাকায় ফিরে আসেন।
ইতোমধ্যে ওই দম্পতির এক ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু করোনাকালে তাদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন দেখা দেয়। এমনকি ভারতের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সাদিকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। বিষয়টি ভারতে মেয়েটির আত্মীয়-স্বজনরা জানতে পারেন। এরপর ওই দেশ থেকে তাদের পরিবারের পক্ষে প্রথমে ভারতীয় হাইকমিশনে যোগাযোগ করা হয়। তারপরও বিষয়টির সমাধান হয়নি। পরে সাদিকার বোন মানবাধিকার সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ল’ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ফ্লাড) কাছে আইনি সহায়তা চান। এর মধ্যে সাদিকাকে ডিভোর্স দেন নবী।
পরে একটি মানবাধিকার সংগঠন হাইকোর্টে রিট করে। হাইকোর্ট প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২৬ আগস্ট মাসহ শিশুটিকে হাজির করার নির্দেশ দেয়। শিশু সন্তান নিয়ে হাজির হলে সন্তানটিকে মা সাদিকা সাঈদের হেফাজতে রাখতে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। তবে বাংলাদেশি বাবা সপ্তাহে তিনদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শিশুর সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন। এ দুই মাস সাদিকা সাঈদের পাসপোর্ট গুলশান থানায় জমা রাখতে বলা হয়।
মামলা বিচারাধীন অবস্থায় শিশু সন্তানকে নিয়ে বাবা সানিউর টিআইএম নবী দেশত্যাগ করে অস্ট্রেলিয়া চলে যান।
এদিকে শিশুকে নিয়ে বাবা দেশত্যাগ করায় শিশুর দাদা টিআইএম নবীকে তলব করে হাইকোর্ট। শিশুসহ বাবাকে অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি দাদার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত।