বাংলাদেশে কাউকে সংখ্যালঘু হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। নাগরিকদের জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।
ঢাকা সফররত ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেছেন।
আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য বাংলাদেশ-ভারত সুসম্পর্ক জরুরি বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। এই দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন সরকারপ্রধান।
পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টায় প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে প্রবেশ করে। সেখানেই ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন সরকারপ্রধান।
বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন জানান, ‘আমরা উনাকে (রাষ্ট্রপতিকে) বলেছি- এই যে সুসম্পর্ক, এখন সোনালী অধ্যায়। এটা অন্যান্য দেশের জন্য অনুকরণীয়। আমরা বড় বড় সমস্যা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে পারি।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের অত্যন্ত গভীর সম্পর্ক রয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সম্পর্কের কারণে এ অঞ্চলে একটা শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী নিজের উন্নয়ন দর্শন ও ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অংশীদারত্বের কথাও সাক্ষাতে তুলে ধরেন বলে জানান ড. মোমেন।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু জাদুঘর ঘুরে দেখার জন্য রামনাথ কোবিন্দকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী পরিবারের স্যাক্রিফাইসের উল্লেখ করে ভারতের রাষ্ট্রপতি গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
‘বঙ্গবন্ধু হত্যা-পরবর্তী সময়ে ভারত তাকে আশ্রয় দেয়ায় কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী।’
শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে অব্যাহতভাবে বাংলাদেশ-ভারত কো-অপারেশন এই রিজিয়নে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছে এবং তা আরও অনেকদূর যাবে। এই কো-অপারেশন আরও বাড়ানো দরকার।’
দুর্গাপূজা ও পূজা-পরবর্তী সহিংসতা প্রসঙ্গে ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কথা বলেছেন বলেও জানান শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে আমাদের দেশে কাউকে সংখ্যালঘু হিসেবে ট্রিট করা হয় না। নাগরিকদের জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।’
সাক্ষাৎকালে উপহার হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর পাঠানো আমের প্রশংসা করে ভারতের রাষ্ট্রপতি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতের রাষ্ট্রপতি ঘরোয়াভাবে নিজেদের তৈরি করা মিষ্টি, কেক ও বিস্কুট নিয়ে এসেছেন প্রধানমন্ত্রীর জন্য। প্রধানমন্ত্রী তা সাদরে গ্রহণ করেছেন।’
বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমরা বলেছি বিভিন্ন সমস্যা আছে। এগুলো আমরা আলোচনার টেবিলে বসে সমাধান করব।’
করোনা মহামারির মধ্যে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে যোগ দিতে আসায় ভারতের রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে আসতে পেরে তিনিও আনন্দিত হয়েছেন বলে প্রধানমন্ত্রীকে জানান ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান।
বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর আয়োজনে যোগ দিতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বুধবার ঢাকায় এসেছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি।
বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনালে বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটে রামনাথকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও তার সহধর্মিণী রাশিদা খানম। এ সময় কুশল বিনিময় করেন দুই দেশের দুই রাষ্ট্রপ্রধান।
ভিভিআইপি টার্মিনালে তৈরি করা অস্থায়ী অভ্যর্থনা মঞ্চে আসেন রামনাথ। সেখানে তাকে গার্ড অব অনার দেয় সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল। পরে প্যারেড ঘুরে দেখেন ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান।
করোনা মহামারি শুরুর পর এটিই ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের প্রথম বিদেশ সফর। বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশের মহা-আয়োজনে অন্যতম আমন্ত্রিত অতিথি তিনি।
ঢাকা সফরে এসে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি। এরপর ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান তিনি।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আমন্ত্রণে সফরে আসা ভারতের রাষ্ট্রপতি ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় অবস্থান করবেন। এই সময়কালে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে রয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা।
বুধবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে সফররত রাষ্ট্রপতির সম্মানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নৈশভোজের আয়োজন করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। সেখানেও স্ত্রী, কন্যা ও সফরসঙ্গীদের নিয়ে যোগ দেবেন ভারতের রাষ্ট্রপতি।
বৃহস্পতিবার সফরের দ্বিতীয় দিন জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ‘গেস্ট অফ অনার’ হিসেবে যোগ দেবেন রামনাথ। এদিন বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত ‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ অনুষ্ঠানেও অংশ নেয়ার কথা রয়েছে তার।
শুক্রবার সকালে রমনা কালীমন্দির পরিদর্শনে যাবেন ভারতের রাষ্ট্রপতি। সেখানে সদ্য সংস্কার করা অংশ উদ্বোধন করবেন তিনি। মন্দির-সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্যদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত পরিসরে মতবিনিময়েরও কথা রয়েছে তার। এদিন দুপুরে দেশের উদ্দেশে উড়াল দেবেন রামনাথ কোবিন্দ।