আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অসুস্থ হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি হওয়ার পর দলের দ্বিতীয় এ শীর্ষ নেতাকে দেখতে নেতা-কর্মীরা জড়ো হচ্ছেন সেখানে।
সেখানে একটি সাদা কাগজে লেখা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ কোনো দর্শনার্থী ভিতরে প্রবেশ করতে পারবেন না। তবে এমন নির্দেশনা থাকলেও তা মানছেন না নেতা-কর্মীরা। বুধবার সকাল থেকেই সেখানে জড়ো হতে দেখা যাচ্ছে নেতা-কর্মীদের।
এর আগে মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের ভাই মৃদু শারীরিক অসুস্থতার কারণে ও নিয়মিত কিছু চেকআপের জন্য রাজধানীর বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে মঙ্গলবার সকালে ভর্তি হয়েছেন।’
‘দলের পক্ষ থেকে তার সুস্থতার জন্য দেশবাসীর দোয়া চাওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে গিয়ে অহেতুক ভিড় না করার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
তবে সকাল থেকে শতাধিক নেতা-কর্মী হাসপাতালে উপস্থিত হয়েছেন।
রাতে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের মেয়র ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের ভাই আব্দুল কাদের মির্জা, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, জামালপুর-৩ আসনের এমপি মির্জা আজম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে দেখা করেন।
এর আগে ২০১৯ সালের ৩ মার্চ গুরুতর অসুস্থ হয়ে বিএসএমএমইউয়েই ভর্তি হয়েছিলেন কাদের। পরে তাকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নেয়া হয়। সেখানে দুই মাসেরও বেশি সময় চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
ঠাণ্ডা-জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। গতকালের চেয়ে তার স্বাস্থ্যের অবস্থা অনেক ভালো। তিনি শঙ্কামুক্ত এবং সুস্থ আছেন।
ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসায় ১০ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ডের অন্যতম সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল (বিএসএমএমইউ) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শারফুদ্দিন বলেন, ‘গতকালের চেয়ে আজকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের স্বাস্থ্যের অবস্থা অনেক ভালো। তবে অবজারভেশনের জন্য আরও দু-এক দিন হাসপাতালে রাখা হবে।’
বুধবার বেলা ১১টায় মেডিক্যাল বোর্ডের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এমন তথ্য জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘আপনারা গতকাল উৎকণ্ঠায় ছিলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের হাসপাতালে ভর্তি নিয়ে। আমরা ওনার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি। ওনার চিকিৎসায় ১০ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। গতকালের তুলনায় তিনি অনেক ভালো আছেন। ওনার ডায়াবেটিস গতকাল ১২ ছিল, এখন ৫। ব্লাড প্রেসার, অক্সিজেন সার্কুলেশন সবকিছু স্বাভাবিক। তবে আরও দু-এক দিন অবজারভেশনে রেখে আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাব। ওনার জন্য সবাই দোয়া করবেন।’
জটিলতা কী ছিল জানতে চাইলে বিএসএমএমইউর উপাচার্য শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘তার বুকে একটু ব্যথা ছিল, ডায়াবেটিস একটু বেশি ছিল, হার্টে একটু সমস্যা ছিল, এটি আপনারা আগে থেকেই জানেন। সবকিছু এখন স্বাভাবিক রয়েছে। সুস্থ হয়ে যাবেন তাড়াতাড়ি আমরা সবাই যদি ওনার জন্য দোয়া করি।
‘অনেক মিডিয়াতে আসছে ওনার শ্বাসকষ্ট রয়েছে। তবে এ তথ্য সঠিক নয়, ওনার কোনো শ্বাসকষ্ট নেই। ওনার চলতে-ফিরতে কোনো বাধা নেই,’ যোগ করেন তিনি।
উন্নত চিকিৎসার জন্য ওনাকে বিদেশ নিতে হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি তার চিকিৎসার জন্য আমাদের হাসপাতালটি বেছে নিয়েছেন।’
ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসায় ১০ সদস্যের বোর্ড গঠনের বিষয়টি মঙ্গলবার বিকেলে নিশ্চিত করেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের নিয়মিত চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন। ১০ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড তাকে দেখে হাসপাতালে ভর্তি থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তার অ্যাজমা আছে। বুধবার সকালে তাকে আবার দেখা হবে। তারপর পরবর্তী আপডেট জানানো হবে।’
তবে আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এই নেতা কী কী সমস্যায় ভুগছেন তা জানাননি বিএসএমএমইউ উপাচার্য।
অবশ্য আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া নিউজবাংলাকে জানান, তাদের দলের সাধারণ সম্পাদক ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ঠাণ্ডাজনিত সমস্যার কারণে কাদের ভাইকে মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।’
কাদেরের অসুস্থতা নিয়ে নিজের ফেরিফায়েড ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাসও দিয়েছেন বিপ্লব বড়ুয়া। সেখানে কাদেরের সুস্থতায় দেশবাসীর কাছে দোয়াও চেয়েছেন তিনি।
এর আগে ২০১৯ সালের ৩ মার্চ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে বিএসএমএমইউতে ভর্তি হয়েছিলেন ওবায়দুল কাদের। তাকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদও।
বিএসএমএমইউর কার্ডিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান সৈয়দ আলী আহসান তখন গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, কাদেরের তিনটি আর্টারি ব্লক রয়েছে। তার ডায়াবেটিসও অনিয়ন্ত্রিত।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের চিকিৎসায় দেশের বাইরে থেকে আনা হয় চিকিৎসক দল। বিএসএমএমইউতে কাদেরের চিকিৎসা করেন ভারতের নামকরা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ দেবী শেঠি। তাতেও শঙ্কামুক্ত হননি।
পরদিন এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে কাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয় সিঙ্গাপুরে। সেখানে তার হৃদযন্ত্রে অস্ত্রোপচার করা হয়। প্রায় আড়াই মাসের দীর্ঘ চিকিৎসার পর ২০১৯ সালের ৬ মে সুস্থ হয়ে দেশে ফেরেন আওয়ামী লীগের অন্যতম এই নেতা।
ধীরে ধীরে রাজনীতির মাঠে আগের মতোই সক্রিয় হয়ে ওঠেন কাদের। বৈশ্বিক করোনাভাইরাস মহামারির স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে লোকসমাগম এড়িয়ে চললেও গণমাধ্যমে নিয়মিত দল এবং সরকারের হয়ে কথা বলছেন। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসার পর গুরুত্বপূর্ণ কিছু রাষ্ট্রীয় ও দলীয় কর্মসূচিতেও উপস্থিত থাকছেন তিনি।