মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালিরা যখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে, তখন জামায়াতে ইসলামীর কয়েকজন নেতাকে এ দেশের প্রতিনিধি হিসেবে জাতিসংঘের অধিবেশনে নিয়ে পাকিস্তান স্বাধীনতা বানচাল করতে চেয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধামন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়।
সেই ষড়যন্ত্রে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ সমর্থন দিয়েছিল বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বুধবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টার দিকে এক স্ট্যাটাসে জয় এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ যখন শেষের দিকে, বাঙালি জাতির বিজয় যখন শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র, পাকিস্তানিদের বর্বরতার বিরুদ্ধে এবং মুক্তিকামী বাঙালি জাতির পক্ষে যখন বিশ্বজুড়ে জনমত তুঙ্গে, ঠিক তখনই নতুন ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে পাকিস্তানিরা।
‘তারা তখন জামায়াতের কয়েকজন নেতাকে বাঙালি জাতির প্রতিনিধি হিসেবে জাতিসংঘের অধিবেশনে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেয়। উদ্দেশ্য, বাঙালির চূড়ান্ত বিজয় বানচাল করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পথ রুদ্ধ করা।’
সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ তৎপর হয়ে ওঠে পাকিস্তানিদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য। এ জন্য তারা খন্দকার মোশতাক, তাহের উদ্দীন ঠাকুর, মাহাবুবুল আলম চাষীদের সঙ্গে একটি ডানপন্থি বলয় গড়ে তোলে। তাদের টার্গেট ছিল মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিদের পরাজয় রোধ করা এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্ন চিরতরে মুছে দেয়া। এরপর পাকিস্তানের সঙ্গে একটি কনফেডারেশন রাষ্ট্র গঠন করা।’
এ ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে গেলে প্রবাসী সরকারের নেতারা সতর্ক হয়ে যায় বলেও উল্লেখ করেন জয়।
তিনি বলেন, ‘ফলে তাদের সেই অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়। তবে থেমে ছিল না জামায়াত। শেষ পর্যন্ত তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বাসনা দমিয়ে দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে।’
জয় স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘রণাঙ্গনে যেমন জামায়াতের নেতা-কর্মীরা সরাসরি পাকিস্তানের হয়ে যুদ্ধ করেছে, বাঙালি নারীদের ধর্ষণ করেছে, লুটপাট করেছে, জবরদখল করেছে, তেমনি কূটনৈতিকভাবেও বিভিন্ন রাষ্ট্রকে ভুল বুঝিয়ে মুক্তিযুদ্ধে তাদের সমর্থনদান থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেছে।’
তিনি লেখেন, ‘১৯৭১ সালের নভেম্বরে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে পাকিস্তানি জান্তারা কোণঠাসা হয়ে গেলে তাদের সমর্থনে এবং বাঙালির জাতির বিরুদ্ধে জাতিসংঘে কথা বলতে যায় জামায়াতের মুখপাত্র ও মুসলিম লীগ নেতা শাহ আজিজুর রহমান। সরাসরি মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধ বিষোদগার করে সে। পাকিস্তান কূটনৈতিক দলের বাঙালি নেতা হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে, বাংলাদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যার কথা অস্বীকার করে এই শাহ আজিজ।
‘এমনকি অন্যান্য মুসলিম দেশ যেন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দেয়, এ জন্য আহ্বান জানায় সে। পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পর এই ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রীর পদে বসায়।’
মুক্তিযুদ্ধকালে বাঙালি জাতির ওপর নির্যাতনে জামায়াতের ভূমিকার কথা তৎকালীন গভর্নর জেনারেল টিক্কা খানের উপদেষ্টা জেনারেল রাও ফরমান আলীর আত্মজীবনীতেও উল্লেখ রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন জয়।
সেই আত্মজীবনী থেকে উদ্ধৃত করে জয় তার স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘জেনারেল নিয়াজী বাংলাকে শত্রুভূমি হিসেবে আখ্যায়িত করে নিয়মিত বক্তব্য প্রদান করে সেনাদের ক্ষেপিয়ে তুলত, তবে আমি কিছু নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করি। ফলে নুরুল আমীন, খাজা খয়ের, ফরিদ আহমদ, শফিকুল ইসলাম, গোলাম আযমরা টিক্কার সঙ্গে দেখা করতে আসে এবং শান্তি কমিটি গঠন করে।
‘তাদের উদ্যোগে মুসলিম লীগ, পিডিপি, জামায়াতে ইসলামীসহ আরও কয়েকটি পাকিস্তানপন্থি দলকে নিয়ে সারা দেশে শান্তি কমিটি গঠন করা হয়। ৭ এপ্রিল যুদ্ধ চলাকালে তারা পাকিস্তানের পক্ষে ঢাকায় একটি মিছিলও বের করেছিল।’
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তার স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘এরপর পাকিস্তানি সেনাদের যুদ্ধে সহযোগিতা করা, রাজধানীর বাইরে রাস্তাঘাট চিনিয়ে দেয়া, মুক্তিযোদ্ধা শনাক্ত করাসহ সার্বিক কাজের জন্য রাজাকার নামে আরেকটি বাহিনী গঠন করা হয়।
‘এমনকি যুদ্ধকালে নিয়াজীর তৈরি সশস্ত্র আলবদর ও আলশামস বাহিনীও দারুণ সহযোগিতা করেছে পাকিস্তানি সেনাদের। এসব বাহিনীর প্রধান ছিল গোলাম আযম, শাহ আজিজ, নিজামী, মুজাহিদসহ শীর্ষস্থানীয় জামায়াত ও শিবিরের নেতারা।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর একাত্তরের ধর্ষক-খুনিদের মন্ত্রী বানিয়েছিলেন বলে স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন জয়।
পাকিস্তানি দখলদার সেনাদের শক্তি বাড়াতে রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয়েছিল বলেও মনে করেন সজীব ওয়াজেদ জয়।
তিনি বলেন, ‘সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এ জন্য প্রায় ৫০ হাজার জামায়াত নেতা-কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেয় পাকিস্তানি সেনারা। এ সময় একদিন জামায়াত নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর জেনারেল এ কে নিয়াজী তার জনসংযোগ কর্মকর্তা মেজর সিদ্দিক সালিককে ডাকে।’
সিদ্দিক সালিকের আত্মজীবনী থেকে উদ্ধৃত করে জয় লেখেন, “এরপর নিয়াজি তাকে বলেছিল, ‘আজ থেকে তুমি রাজাকারদের আল-বদর ও আল-শামস বলে অভিহিত করবে। তাহলে বোঝা যাবে না যে, এরা কোনো নির্দিষ্ট পার্টির লোক'।”