জাপানি দুই শিশুকে ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত মা এরিকো নাকানোর কাছে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আপিল বিভাগ। তবে আদালত বলেছে, শিশুদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবেন তাদের বাবা ইমরান শরীফ।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনসহ পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ বুধবার এ নির্দেশ দেয়। আদালত বলেছে, শিশু দুটি ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত থাকবে মায়ের কাছে। আর বাবা প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত স্বাধীনভাবে সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন। সন্তানদের স্কুলে যাওয়া এবং পড়াশোনা চলবে। আদালতের অনুমতি ছাড়া সন্তানদের নিয়ে দেশের বাইরে যাওয়া যাবে না।
আদালতে মায়ের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন আহসানুল করিম ও শিশির মনির। আর বাবার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ফাওজিয়া কবির।
একই বেঞ্চ গত রোববার সকালে দুই দিনের জন্য শিশু দুটিকে মায়ের কাছে দিতে বলেছিল। ওই দিন রাত ১০টার মধ্যে মায়ের কাছে দেয়ার কথা থাকলেও দেননি বাবা।
এই নির্দেশনা না মানায় পরের দিন ইমরান শরীফের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনেন মা এরিকো। সোমবার দুই শিশুসহ বাবাকে ডেকে পাঠায় আপিল বিভাগ। সবার বক্তব্য শোনে সর্বোচ্চ আদালত।
নির্দেশনা অনুযায়ী মায়ের কাছে না দেয়ায় বাবার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে আপিল বিভাগ। সেই সঙ্গে দ্রুত শিশু দুটিকে মায়ের কাছে দিতে বলা হয় এবং পরবর্তী শুনানির জন্য ১৫ ডিসেম্বর সময় নির্ধারণ করা হয়।
গত ১৯ আগস্ট বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক স্বামী শরীফ ইমরানের কাছ থেকে ১০ ও ১১ বছর বয়সী দুই কন্যাসন্তানকে ফিরে পেতে হাইকোর্টে রিট করেন জাপানি নারী এরিকো।
রিটের দীর্ঘ শুনানি শেষে গত ২১ নভেম্বর রায় দেয় হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়, দুই কন্যাকে বাবার কাছে রেখে মা বছরে তিনবার ১০ দিন করে দেখা করতে পারবেন। আর এ জন্য মায়ের সব খরচ বাবাকে বহন করতে হবে।
হাইকোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধেই আপিল করেন মা।
২০০৮ সালের ১১ জুলাই জাপানের এরিকো ও বাংলাদেশি আমেরিকান ইমরান শরীফ জাপানি আইন অনুযায়ী বিয়ে করেন। বিয়ের পর তারা টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। ১২ বছরের সংসারে তারা তিন কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। তারা হলো জেসমিন মালিকা, লাইলা লিনা ও সানিয়া হেনা।
এরিকো পেশায় একজন চিকিৎসক। মালিকা, লিনা ও হেনা টোকিওর চফো সিটিতে আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের (এএসআইজে) শিক্ষার্থী ছিল।
চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি ইমরান শরীফ বিয়ে বিচ্ছেদের (ডিভোর্স) আবেদন করেন। ২১ জানুয়ারি ইমরান এএসআইজে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন।
স্কুল কর্তৃপক্ষ এরিকোর সম্মতি না থাকায় তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। পরে ইমরান তার মেয়ে জেসমিন ও লিনাকে স্কুলবাসে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্টপ থেকে অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান।
২৫ জানুয়ারি ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছে তার সন্তানদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। এরিকো তা প্রত্যাখ্যান করেন।
এরপর ২৮ জানুয়ারি এরিকো টোকিওর পারিবারিক আদালতে তার সন্তানদের জিম্মার অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চেয়ে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি শিশুদের সঙ্গে পারিবারিকভাবে সাক্ষাতের আদেশ দেন। ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়ের সাক্ষাতের সুযোগ দেন।
এরিকোর অভিযোগ, গত ৯ ফেব্রুয়ারি মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেন এবং গত ১৭ ফেব্রুয়ারি নতুন পাসপোর্ট নেন। গত ২১ ফেব্রুয়ারি ইমরান তার দুই মেয়ে জেসমিন ও লাইলাকে নিয়ে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।