বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ব্যাংকের বিশেষ তহবিলের অর্ধেকও পুঁজিবাজারে আসেনি

  •    
  • ১৫ ডিসেম্বর, ২০২১ ০৯:০৮

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩২ ব্যাংকের মধ্যে ১৭টি ব্যাংক পুরো ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে। ছয়টি ব্যাংক ১০০ থেকে ১২০ কোটি টাকার এবং বাকি নয় ব্যাংক ১০ থেকে ৮০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে।

পুঁজিবাজারকে চাঙা করতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যে বিশেষ তহবিল করেছে, তার একটি বড় অংশ এখনও বিনিয়োগ করা হয়নি।

ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০০ কোটি টাকা করে তহবিল গঠনের অনুরোধ করলেও সবাই এই পরিমাণ তহবিল করেনি। আর যে তহবিল গঠন হয়েছে, তার মধ্যে বিনিয়োগও হয়নি বেশির ভাগ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বলছে, পুঁজিবাজারের জন্য ৩২ ব্যাংক এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৫১০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে। আর ২৮টি ব্যাংক এখনও তহবিল গঠন করেনি।

এর মধ্যে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করেছে ১ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। হাতে আছে এখনও ২ হাজার ৫২০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ব্যাংকগুলোতে যে পরিমাণের তহবিল গঠন হয়েছে, তার মাত্র ৪৪ শতাংশ বিনিয়োগে এসেছে।

শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো অতিমাত্রায় সতর্ক। আর বাংলাদেশ ব্যাংকও এ বিষয়ে কোনো চাপ দিচ্ছে না। কর্মকর্তারা বলছেন, আইন অনুযায়ী পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য তারা কোনো ব্যাংককে বাধ্য করতে পারেন না। এ জন্য ব্যাংকগুলোর বিবেচনার ওপর ছেড়ে দিয়েছেন তারা।

২০২০ সালের ‍শুরুতে পুঁজিবাজারে যখন মন্দাভাব, তখন বাজারে টাকার প্রবাহ বাড়াতে প্রতিটি ব্যাংককে ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠনের অনুরোধ জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য তহবিল গঠনসংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

সতর্কভাবে বিনিয়োগে ব্যাংক

সব ব্যাংক যদি ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করত, তাহলে ৬০ ব্যাংকের তহবিল হতে পারত ১২ হাজার কোটি টাকা, কিন্তু তহবিল এত বড় হয়নি।

আবার ৩২ ব্যাংকের প্রতিটি ব্যাংকও ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেনি। ৩২টি ব্যাংক চাইলে ছয় হাজার ৪০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ তহবিল গঠন করতে পারত, কিন্তু গঠন করেছে ৪ হাজার ৫১০ কোটি টাকার তহবিল।

তবে ধীরে ধীরে তহবিল গঠন ও বিনিয়োগ বাড়ছে।

গত মার্চ পর্যন্ত ২৬টি ব্যাংক ২ হাজার ৯০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করে। সে সময় বিনিয়োগ ছিল ১ হাজার ৩৭ কোটি টাকা।

এর পরের আট মাসে তহবিলের আকার ১ হাজার ৬১০ কোটি টাকা বেড়েছে। আর বিনিয়োগ বেড়েছে ৯৫৩ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি সোনালী, রূপালী, অগ্রণী ও জনতা মিলে বিশেষ তহবিলের অধীনে মোট ৭২০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে। তবে এখন পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছে ৩১২ কোটি টাকার, যা তাদের তহবিলের ৪৩ শতাংশ।

২৮টি বেসরকারি ব্যাংক ৩ হাজার ৭৯০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে। কিন্তু বিনিয়োগ করেছে ১ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা, যা গঠিত তহবিলের ৪৪ শতাংশ।

এই ৩২ ব্যাংকের মধ্যে ১৭টি ব্যাংক পুরো ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে। ছয়টি ব্যাংক ১০০ থেকে ১২০ কোটি টাকার এবং বাকি নয় ব্যাংক ১০ থেকে ৮০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে।

আবার ৩২ ব্যাংকের মধ্যে আটটি ব্যাংক গঠিত তহবিলের ৮০ থেকে প্রায় শতভাগ বিনিয়োগ করেছে।

১৯টি ব্যাংক গঠিত তহবিলের ৫০ শতাংশই বিনিয়োগ করেছে। আর বাকিগুলোর বিনিয়োগ আরও কম।

বিশেষ তহবিলের অধীনে পুরো ২০০ কোটি বিনিয়োগ তহবিল গঠন করেছে রাষ্ট্রীয় অগ্রণী ব্যাংক। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, ‘ঋণ দেয়ায় যেমন ঝুঁকি আছে, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগেও ঝুঁকি আছে। এজন্য সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পুরোটা বিনিয়োগ করা হয়নি। তবে গঠিত তহবিলের পুরোটা বিনিয়োগ করা হবে।’

সংশ্লিষ্টরা যা বলেন

পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ আবু আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিশেষ তহবিলের পুরোটা যদি ব্যাংক বিনিয়োগ করে তবে শেযারবাজার চাঙা হবে। বিনিয়োগকারীরাও স্বস্তি পাবে।’

পুঁজিবাজারকে চাঙা করা জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজার ভালো না চললে মুদ্রা বাজারও ভালো চলবে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যেমন দায়িত্ব আমানতকারীদের সুরক্ষা দেয়া তেমনি বিনয়োগকারীদের স্বার্থ দেখাও দায়িত্ব।’

পুঁজিবাজার ফাংশনাল নেই বলে এখন ব্যাংক খাতে লাখ কোটি টাকার উপরে খেলাপি ঋণ হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

আবু আহমেদ বলেন, ‘সবাই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করতে চায়। এখন লাখ কোটি টাকার উপরে অনাদায়ী ঋণ। এটা অর্থনীতির জন্য সুখকর নয়। কারণ এর ফলে ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়ে। সরকারকে আবার মূলধনের যোগান দিতে হয়। এসব দিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজর বেশি দেয়া উচিত। কিন্তু ওসব দিকে নজর না দিয়ে পৃঁজিবাজারে কোন ব্যাংক বেশি বিনিয়োগ করেছে সেদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা তৎপর বেশি।’

বিশেষ তহবিল বন্ডেও বিনিয়োগের সুযোগ

২০২০ সালের শুরুতে পুঁজিবাজারের টানা দরপতন সামাল দিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, তফসিলি ব্যাংকগুলো ট্রেজারি বিল ও বন্ড রেপোর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ২০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করতে পারে। ব্যাংকগুলো চাইলে নিজস্ব উৎস থেকেও এমন তহবিল গঠন করতে পারে।

বিশেষ তহবিলের ৭০ শতাংশ সৌর, বায়ু, জল, বায়োমাসের মতো নবায়নযোগ্য শক্তি প্রকল্পে বিনিয়োগের উদ্দেশে বেসরকারি উদ্যোক্তার আনা গ্রিন সুকুক বন্ডেও বিনিয়োগ করা যাবে।

তহবিলের মেয়াদ ২০২৫ সাল থেকে বাড়িয়ে ২০২৮ সাল পর্যন্ত করা হয়েছে। ব্যাংকগুলোর এ বিনিয়োগ পুঁজিবাজারে ব্যাংক কোম্পানি আইনের বর্ণিত বিনিয়োগ গণনার বাইরে থাকবে।

বিশেষ তহবিলের সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক নিজস্ব পোর্টফোলিওতে ব্যবহার করতে পারবে।

ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি কোম্পানির নিজস্ব নতুন পোর্টফোলিও গঠনের জন্য ঋণ হিসেবে তহবিলের ২০ শতাংশ দেয়া যাবে।

অন্য ব্যাংকের বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাবসিডিয়ারি মার্চেন্ট ব্যাংক বা ব্রোকারেজ হাউসের নিজস্ব নতুন পোর্টফোলিওর জন্য ৩০ শতাংশ এবং অন্যান্য মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসের নিজস্ব নতুন পোর্টফোলিও গঠনের জন্য তহবিলের ১০ শতাংশ ঋণ হিসেবে দেয়া যাবে।

এই বিনিয়োগ সুরক্ষিত রাখতে কিছু শর্তও দেয়া হয়েছে। রুগ্ন ও ভুঁইফোঁড় প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কেনা ঠেকাতে কিছু বিধিনিষেধও আরোপ করা হয়েছে। যেসব কোম্পানির ৭০ শতাংশ ফ্লোটিং শেয়ার আছে এবং অন্তত তিন বছর ১০ শতাংশ হারে লভ্যাংশ দিয়েছে তাদের শেয়ার কেনা যাবে।

এ বিভাগের আরো খবর