সন্তান পেতে উচ্চ আদালতে ভিনদেশি দুই মায়ের দুই মামলার শুনানি হচ্ছে আজ বুধবার।
সন্তান ফেরত চেয়ে জাপানি মা এরিকো নাকানোর আবেদনের শুনানি হবে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে। এটি আপিল বিভাগের তালিকার এক নম্বরে রয়েছে। অন্যদিকে একই দিনে ভারতীয় মা সাদিকা সাঈদের আবেদনের শুনানি হবে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে।
এর আগে সন্তান নিয়ে মামলার শুনানিতে হাইকোর্ট বলেছিল, পাটা-পুতার ঘষাঘষিতে মরিচের প্রাণ যায়।
জাপানি মায়ের মামলা
গত ১৯ আগস্ট বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক স্বামী শরীফ ইমরানের কাছ থেকে ১০ ও ১১ বছর বয়সী দুই কন্যাকে পেতে হাইকোর্টে রিট করেন জাপানি নারী এরিকো।
রিটের দীর্ঘ শুনানি শেষে ২১ নভেম্বর রায় দেয় হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়, দুই কন্যাকে বাবার কাছে রেখে মা বছরে তিনবার ১০ দিন করে দেখা করতে পারবেন। এ জন্য মায়ের সব খরচ বাবাকে বহন করতে হবে।
হাইকোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন মা। ওই আপিল শুনানি হবে বুধবার। আদালতে বাবার পক্ষে আইনজীবী ফিদা এম কামাল ও ফাওজিয়া করিম। আর মায়ের পক্ষে আছেন আহসানুল হক ও শিশির মনির।
২০০৮ সালের ১১ জুলাই জাপানের এরিকো ও বাংলাদেশি আমেরিকান ইমরান শরীফ জাপানি আইন অনুযায়ী বিয়ে করেন। বিয়ের পর তারা টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। ১২ বছরের দাম্পত্য জীবনে তাদের সংসারে আসে তিন কন্যাসন্তান। তারা হলো- জেসমিন মালিকা, লাইলা লিনা ও সানিয়া হেনা। তারা টোকিওর চফো সিটিতে আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের (এএসআইজে) শিক্ষার্থী ছিল।
এরিকো পেশায় চিকিৎসক।
চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি ইমরান শরীফ বিয়ে বিচ্ছেদের আবেদন করেন। এরপর ২১ জানুয়ারি তিনি এএসআইজে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে মেয়ে মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন।
এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। ইমরান পরে মালিকা ও লিনাকে স্কুলবাসে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্টপ থেকে অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান।
২৫ জানুয়ারি ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছে তার সন্তানদের পাসপোর্ট চাইলে এরিকো তা প্রত্যাখ্যান করেন। ২৮ জানুয়ারি এরিকো টোকিওর পারিবারিক আদালতে তার সন্তানদের জিম্মার অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চেয়ে মামলা করেন।
আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি শিশুদের সঙ্গে পারিবারিকভাবে সাক্ষাতের আদেশ দেন। ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়ের সাক্ষাতের সুযোগ দেন।
এরিকোর অভিযোগ, গত ৯ ফেব্রুয়ারি মিথ্যা তথ্য দিয়ে ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেন। ১৭ ফেব্রুয়ারি তিনি নতুন পাসপোর্ট নেন। আর ২১ ফেব্রুয়ারি ইমরান তার দুই মেয়ে মালিকা ও লিনাকে নিয়ে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।
ভারতীয় মায়ের মামলা
২০১৭ সালে ভারতের হায়দরাবাদের সাদিকা সাঈদ শেখ নামে এক নারীকে বিয়ে করেন ঢাকার বারিধারার সানিউর টিআইএম নবী। বিয়ের পর তারা মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে বসবাস শুরু করেন। কয়েক মাস পর তারা ঢাকায় ফিরে আসেন।
এরই মধ্যে ওই দম্পতির এক ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। করোনাকালে তাদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন দেখা দেয়। এমনকি ভারতের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সাদিকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। বিষয়টি ভারতে মেয়েটির আত্মীয়-স্বজন জানতে পারেন।
ওই দেশ থেকে তাদের পরিবারের পক্ষে প্রথমে ভারতীয় হাইকমিশনে যোগাযোগ করা হয়। তারপরও সমস্যার সমাধান হয়নি। পরে সাদিকার বোন মানবাধিকার সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ল’ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ফ্লাড) কাছে আইনি সহায়তা চান। এর মধ্যে সাদিকাকে ডিভোর্স দেন নবী।
এ ঘটনায় একটি মানবাধিকার সংগঠন হাইকোর্টে রিট করে। হাইকোর্ট প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২৬ আগস্ট মাসহ শিশুটিকে হাজির করতে নির্দেশ দেয়। পরে ওই শিশুকে মা সাদিকা সাঈদের হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। একইসঙ্গে বলা হয়, বাংলাদেশি বাবা সপ্তাহে তিনদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শিশুর সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন। এ দুই মাস সাদিকা সাঈদের পাসপোর্ট গুলশান থানায় জমা রাখতে বলা হয়।
মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় শিশু সন্তানকে নিয়ে নবী দেশ ত্যাগ করে অস্ট্রেলিয়া চলে যান। এরপরই মামলা মোড় নেয় ভিন্ন দিকে।
এ দিকে শিশুকে নিয়ে বাবা দেশত্যাগ করায় শিশুর দাদা টিআইএম নবীকে তলব করে হাইকোর্ট। পাশাপাশি শিশুসহ বাবাকে অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরিয়ে আনতে নির্দেশ দেয় আদালত। পাশাপাশি দাদার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।
মঙ্গলবার এ বিষয়ে বিস্তারিত শুনানির পর পরবর্তী শুনানির জন্য বুধবার সময় নির্ধারণ করেছে হাইকোর্ট।
আদালতে মায়ের পক্ষে অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিমের সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার কাজী মারুফুল আলম ও ব্যারিস্টার ফাইজা মেহরিন। অন্যদিকে দাদার পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান।