বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ওমানে সব হারানো খিজমত পেলেন এক কোটি ১৪ লাখ টাকা

  •    
  • ১৪ ডিসেম্বর, ২০২১ ২৩:৩২

ওমানে গাড়িচাপায় খিজমত আলী গুরুতর আহত হন। ওই ঘটনায় বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম উইং ক্ষতিপূরণ দাবিতে মামলা করে। সেই মামলার রায়ে মেলে ক্ষতিপূরণ।

খিজমত আলী কথা বলতে পারেন না। কোনো স্মৃতিও মনে নেই তার। একটি হাত ও একটি পা অচল। সর্বস্ব-হারা মানুষটি আজ কোটিপতি। ওমানে দুর্ঘটনার শিকার এই কৃষকের হাতে তুলে দেয়া হলো ক্ষতিপূরণের এক কোটি ১৪ লাখ টাকার চেক।

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গার কৃষক খিজমত আলী ২০২১ সালে ওমানে যান। কাজ করতেন ফলের বাক্স তৈরির কারখানায়। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে কারখানার কাজে রাস্তায় নেমে বেপরোয়া প্রাইভেট কারের ধাক্কায় হারান বাম হাত ও পায়ের কর্মক্ষমতা। একইসঙ্গে হারিয়ে ফেলেন বাকশক্তি। হাসপাতালের আইসিইউতে থাকতে হয় টানা ছয় মাস। যে প্রতিষ্ঠানের কর্মী ছিলেন তাদেরই এক কর্মী খিজমত আলীকে ঢাকা বিমানবন্দরে রেখে সটকে পড়েন।

অবশেষে ওমানের আদালতের রায়ে এক কোটি ১৪ লাখ ১০ হাজার ৯২২ টাকা খিজমত আলীকে বুঝিয়ে দিতে বাধ্য হয় নিয়োগকারী কোম্পানিটি। এই কাজে সার্বিক সহায়তা দেয় ওমানে বাংলাদেশ দূতাবাস।

প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ মঙ্গলবার ঢাকায় খিজমত আলীর হাতে ক্ষতিপূরণের অর্থের চেক তুলে দেন। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে এ সময় খিজমত আলীর সঙ্গে ছিল স্ত্রী আনোয়ারা বেগম ও ছেলে আমির হোসেন।

আমির হোসেন সাংবাদিকদের জানান, এক ওমানীয় নারী গাড়িচালক বাবাকে চাপা দেন। গুরুতর আহত অবস্থায় বাবাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুর্ঘটনার মাসখানেক পর ওমান প্রবাসী এক বাংলাদেশির মাধ্যমে খবর পান তার বাবা অচেতন অবস্থায় ওমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

হাসপাতালে ছয় মাস অজ্ঞান অবস্থায় ছিলেন খিজমত। তিনি যে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন সেটির এক প্রতিনিধি ২০১৮ সালের জুলাইয়ে তাকে ঢাকায় বিমানবন্দরে রেখে চলে যান। এরপর খিজমতের পরিবার ক্ষতিপূরণের জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডে যোগাযোগ করে।

ওমানে বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম উইং খিজমত আলীর হয়ে ক্ষতিপূরণ দাবিতে মামলা করে। উকিলের সম্মানিসহ মামলার পুরো খরচ বহন করেছে কল্যাণ বোর্ড। খিজমত আলীর পরিবারকে একটি টাকাও দিতে হয়নি।

আমির হোসেন বলেন, ‘মামলার পেছনে খরচ না হলেও গত সাড়ে তিন বছরে বাবার চিকিৎসায় বিস্তর খরচ হয়েছে। চাষের জমি বন্ধক দিয়ে চিকিৎসা করাতে হচ্ছে। এখন ক্ষতিপূরণের টাকাটা পাওয়ায় উন্নত চিকিৎসা করানো সম্ভব হবে। ডাক্তাররাও আশা দিয়েছেন নিয়মিত ফিজিওথেরাপি দিলে একদিন না একদিন বাবা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবেন। তবে সবার আগে অস্ত্রোপচার করে কর্মক্ষমতা হারানো হাত ও পায়ে লাগানো রড খুলতে হবে।’

ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক হামিদুর রহমান বলেন, ‘শ্রম উইং শুরু থেকেই মামলার পেছনে লেগে ছিল। ন্যায়বিচার পেয়েছেন খিজমত আলী। ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়া গেছে বিমা এবং খিজতম আলী যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন তাদের কাছ থেকে।’

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, সরকার যে প্রবাসীদের পাশে রয়েছে, কর্মক্ষেত্রে হতাহত প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য খিজমত আলীর ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তি নজির হয়ে থাকবে। দূতাবাসের তৎপরতায় আদালতের মাধ্যমে বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়েছে।

ক্ষতিপূরণ পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় খিজমত আলীর স্ত্রী আনোয়ারা কিছুই বলতে পারলেন না, কেঁদে ভাসালেন। অবশেষে কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানালেন, এক ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে তার খুব কষ্টের সংসার। স্বামীর রোজগার বন্ধ হওয়ায় গত চার বছর ধারদেনা করে চলছেন। এর মধ্যেই মেয়েটার বিয়ে দিয়েছেন। ক্ষতিপূরণের টাকায় ধারদেনা শোধ করবেন। স্বামীর চিকিৎসা করাবেন। ছেলেকে নিয়ে এবার একটু মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবেন।’

এ বিভাগের আরো খবর