বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দিনের রাজা রাতের সেপাই

  •    
  • ১৪ ডিসেম্বর, ২০২১ ২২:৫৯

৭০ বছর বয়সী আব্দুল কাদের রাজশাহীর দুর্গাপুরের চৌপুকুরিয়া এলাকারা বাসিন্দা। তিনি ঘোড়ায় চড়েন রাজার বেশে। পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি নিজেকে রাজার সাজে রেখেছেন। তিনি উপজেলার কাঁঠালবাড়িয়া বাজারে নৈশপ্রহরীর কাজ করেন।

সাজানো ঘোড়া। ঘোড়ায় চড়ে রাজার সাজে ৭০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। এক হাতে চাবুক। ঘাড়ে তীর-ধনুক। কোমরে মস্ত এক তলোয়ার। চোখে বড় ফ্রেমের চশমা। শরীরে রাজার পোশাক। মাথায় রাজার মুকুট।

গ্রামের আঁকাবাঁকা পথ ধরে ঘোড়া ছুটিয়ে চলেছেন বৃদ্ধ। পথে যার সাথেই দেখা হচ্ছে কথা বলছেন, কুশল বিনিময় করেন। সবার নজর তার দিকেই। ঘোড়া ছুটে চলছে, পেছনে পেছনে এগিয়ে যাচ্ছে এলাকার ছোট শিশুকিশোর। দূর থেকে সবাই বলছে রাজা। ছোট্ট শিশুরাও কেউ বলছে রাজা এসেছে, কেউ বলছে ওই দ্যাখ রাজা দাদু এলো, কেউ বলছে চল চল রাজা চলে যাচ্ছে। আসল ঘটনা কী?

৭০ বছর বয়সী আব্দুল কাদের রাজশাহীর দুর্গাপুরের চৌপুকুরিয়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি ঘোড়ায় চড়েন রাজার বেশে। মনে মনে তিনি রাজা। নিজেকে তিনি চৌপুকুরিয়ার রাজা মনে করেন। বাড়ি থেকে বাইরে বের হলেই তিনি রাজার সাজে বের হন। পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি নিজেকে রাজার সাজে রেখেছেন।

দুর্গাপুর সদর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে চৌপুকুরিয়া গ্রামে বাস করেন আব্দুল কাদের। তিনি উপজেলার কাঁঠালবাড়িয়া বাজারে নৈশপ্রহরীর কাজ করেন। আধা পাকা বাড়িতে স্ত্রী ও তিন ছেলে নিয়ে থাকেন তিনি। একমাত্র মেয়ে থাকেন শ্বশুরবাড়িতে।আব্দুল কাদের জানান, তিনি নিজেকে রাজা মনে করেন। আর এই মনে করা থেকেই তিনি রাজার বেশে এলাকায় চলাফেরা করেন। নিজেকে রাজা মনে করে আসছেন পঞ্চাশ বছর ধরে। ওই সময় বাংলা সিনেমা দেখতে গিয়ে রাজার অভিনয় তার ভালো লেগে যায়। সেই থেকে তিনি দিনে দিনে নিজেকে রাজা হিসেবে প্রস্তুত করেন।

একসময় তিনি কৃষি কাজে জড়িত ছিলেন। রাজা হলে তো আর এসব করা চলবে না। সেই ভাবনা থেকে ছেড়ে দেন কৃষি কাজ। এরপর কোনো কাজই করতেন না। বিয়ের বছর দুয়েক পর তিনি নিজে নিজেই হয়ে যান রাজা। ওই সময় ৪০০ টাকা দিয়ে একটি ঘোড়া কেনেন। সিনেমায় দেখা রাজার পোশাক কেনেন, সঙ্গে তরবারি আর তীর-ধনুক। ঘোড়াকে সাজান রাজার ঘোড়ার মতো করেই। সেই থেকে আজও এই ধারা অব্যাহত রেখেছেন।

রাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়ে অনেকে তার আসল নামটি ভুলে গেছেন। তবে ওই গ্রামেই শুধু নয়, আশপাশের গ্রামগুলোতে গিয়ে রাজার ঠিকানা জানতে চাইলে বলে দিতে পারে সেখানকার বাসিন্দারা।এলাকার মানুষের ভালোবাসায় বেজায় খুশি আব্দুল কাদের।

তিনি বলেন, ‘আমাকে মানুষ রাজা বলে ডাকলে মন ভরে যায়। আমি খুব খুশি হই। ছোট-বড় সবাই আমাকে ভালোবাসে। কেউ বলে রাজা কাকা, কেউ বলে রাজা দাদু। এগুলো ভালোবেসে ডাকে। আমি ঘোড়ায় উঠলে আর কোনো খরচ লাগে না। যেখানে যাই সেখানেই একেকজন একেকভাবে আপ্যায়ন করাতে চান। কেউ বলে এটা খাও, কেউ বলে ওটা খাও। পানটা পর্যন্ত টাকা দিয়ে কিনতে হয় না।’ আব্দুল কাদের দিনে কোনো কাজ না করলেও রাতের বেলা তিনি বাড়ির পাশের কাঁঠালবাড়িয়া বাজারে নৈশপ্রহরীর কাজ করেন। দিনের পোশাক আর রাতের পোশাক তার একেবারেই আলাদা। দিনে সবাই তাকে রাজার পোশাকে ঘোড়ায় চড়েই দেখতে পান । তবে প্রতি রাতেই তিনি বাজার পাহারা দেন। এই পাহারার সময় তার সঙ্গে থাকে একটি কুকুর। এই কুকুরও রাজার ভক্ত। কুকুরকে বন্ধু বলেই ডাকেন রাজা।

নৈশপ্রহরীর চাকরি প্রসঙ্গে কাদের জানান, ওখানে সারা রাত ডিউটি করে ২০০ টাকা আয় হয়। এর মধ্যে ৬০-৭০ টাকা তার নিজের খরচ, বাকি টাকা ঘোড়ার পেছনে যায়। আর সংসারে তাকে কোন খরচ করতে হয় না। ছেলেরা তার সংসার চালিয়ে দেন। তারা খরচ দেয়।আব্দুল কাদের প্রতিদিন যখন রাজার বেশে বের হন। পরিবারের প্রতিটি সদস্যই এগিয়ে যান তাকে রাজার পোশাকে সাজাতে। নাতি-নাতনিরাও এগিয়ে আসে দাদুর কাছে। স্ত্রী মাহারানী বেগম রাজার বউ হিসেবে নিজেকে রানি মনে করেন।মাহারানী বেগম বলেন, ‘বিয়ের কিছুদিন পরই উনি রাজা হয়ে যান। প্রথম প্রথম খারাপ লাগত। নিষেধ করতাম। উনি শোনেননি। পরে ভাবলাম উনার যখন ভালো লাগে করুক। খারাপ কিছু তো আর করে না। এখন আমার ভালোই লাগে। নিজেকে রানিই মনে করি।’

আব্দুল কাদেরের ছেলে হাসিবুর রহমান বলেন, ‘আমার ভালোই লাগে। বাবা খারাপ কিছু করেন না। উনি যেভাবে আনন্দ পাচ্ছেন সেভাবেই চলছেন। আমরা এতেই খুশি। সবাই আমাদের বাবার পরিচয়েই চেনে। রাজার ছেলে হিসেবেই মনে করে।’

দুর্গাপুর বাজারের গোলাপ হোসেন বলেন, ‘রাজা সাহেব ঘোড়াপাগল মানুষ। ঘোড়া নিয়েই সব সময় যাতায়াত করেন। বাইরে তিনি রাজার পোশাকেই আসেন।’

এ বিভাগের আরো খবর