রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে উদ্যোগী হয়েছে বঙ্গভবন। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সংলাপের ভিত্তিতেই গঠিত হবে নতুন ইসি।
রীতি অনুযায়ী ২০ ডিসেম্বর সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে রাষ্ট্রপতির বৈঠকের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে এই সংলাপ। নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠনে ২০ ডিসেম্বর সংলাপ শুরু করতে যাচ্ছেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি। আগের ধারাবাহিকতায় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈঠেকের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে এ সংলাপ। নিবন্ধিত অন্য দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের সূচি চূড়ান্ত হয়নি।’
বর্তমান ইসি গঠনের আগে ২০১৭ সালে জাতীয় পার্টির সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপ। ফাইল ছবি
ইসি গঠনে সংলাপ প্রসঙ্গে নিউজবাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু। তিনি বলেন, ‘এখনও লিখিত চিঠি পাইনি। তবে খবর পেয়েছি যে, আগামী সোমবার অর্থাৎ ২০ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টিকে ডাকার সম্ভাবনা রয়েছে।’
দলের ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেহেতু চিঠি পাইনি, তাই নিশ্চিত হয়ে কিছু বলতে পারছি না।’
কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ফ্রেব্রুয়ারিতে। সময়ের হিসাবে মাস দুয়েক হাতে থাকলেও নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সরগরম দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন।
কারণটাও স্পষ্ট। এই নতুন কমিশনের অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সাংবিধানিক হিসাবে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে যেকোনো দিন হবে ওই ভোট। স্বাভাবিকভাবেই দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তু হয়ে উঠছে এই নির্বাচন কমিশন গঠন।
বর্তমান কমিশন নিয়ে বরাবরই অনাস্থা জানিয়ে আসছে বিএনপি। যদিও বর্তমান কমিশনের অধীনে জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে অংশ নিয়েছে দলটি।
সম্প্রতি যে চারটি শর্তে বিএনপি নির্বাচনে যাওয়ার কথা বলছে সেখানেও আছে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের কথা।
২০১৭ সালে বর্তমান ইসি গঠনের আগে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপ। ফাইল ছবি
তবে সংবিধান মেনে বিদ্যমান আইনি কাঠামোতেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা জানিয়ে রেখেছে আওয়ামী লীগ। রাষ্ট্রপতি যে প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন, সেটাতেও পূর্ণ সমর্থন দেয়ার কথা জানিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি।
স্বাধীনতার ৫০ বছরেও নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে কোনো আইন তৈরি হয়নি দেশে। তবে সংবিধান অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির হাতে।
২০১২ সাল থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে চার কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে দেশে।
সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ২০১২ সালে এবং বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২০১৭ সালে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করে সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারদের নিয়োগ দিয়েছিলেন।
সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘(১) প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোন আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করিবেন।’
তবে সংবিধানের আলোকে ওই আইন না হওয়ায় প্রতিবারই নির্বাচন কমিশন গঠনে জটিলতা দেখা দেয়। সেই জটিলতা এড়াতে শেষ দুবার সার্চ কমিটি গঠন করে ইসি গঠন হলেও বিতর্ক থামেনি।
গত দুবারের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, নতুন বছরের আগেই মধ্য ডিসেম্বরে সংলাপ শুরুর উদ্যোগ নেন রাষ্ট্রপতি। মধ্য জানুয়ারিতে সংলাপ শেষ হয়। সার্চ কমিটি গঠিত হয় জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে। নাম প্রস্তাব ও বাছাই শেষে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সিইসি ও ইসির নাম প্রকাশ করা হয়।
এভাবেই কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ ও কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব পেয়েছিল।
বর্তমান কমিশন গঠনের আগে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সেখানে দলগুলো পাঁচটি করে নাম প্রস্তাব করে। সেই নামগুলো বিবেচনায় নিয়ে অনুসন্ধান কমিটি মোট ১০ জনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করে। সেখান থেকে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ পাঁচ সদস্যের বর্তমান কমিশন গঠন করেন। এবারও সেই পথেই এগুচ্ছে বঙ্গভবন।