১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার প্রতিবাদে বরিশালে বের হওয়া মিছিলে হামলার অভিযোগে পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন হয়েছে।
তবে বাদীর এই আবেদনকে ‘দুষ্টু লোকের দুষ্টামি’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন ১৯৭৯ সাল থেকে ৭ বার নৌকা প্রতীকে প্রার্থী হয়ে ছয় বার এবং আরও একবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া ফিরোজ।
পটুয়াখালীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক দ্বিতীয় আমলী আদালতে মঙ্গলবার মামলার আবেদন করেন বাউফল সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক জাহিদুল হক।
৪৬ বছর আগে এই ঘটনার অভিযোগ নিয়ে আদালতে যাওয়া জাহিদুলের বয়স আবেদনে ৪৬ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে তার আইনজীবী নিশ্চিত করেছেন, সে সময় বাদী জন্মই নেননি।
মামলাটি গ্রহণ করা হবে কি না, সে বিষয়ে আগামী ১৯ ডিসেম্বর আদেশ দেবেন বিচারক জামাল হোসেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীর আইনজীবী জাহিদুল ইসলাম ও জাহাঙ্গীর হোসেন।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর বরিশাল সদরে তৎকালীন বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খান আলতাফ হোসেন ভুলুর নেতৃত্বে প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। মিছিলটি সকাল আটটার দিকে পেশকার বাড়ির সামনে পৌঁছালে আ স ম ফিরোজের নেতৃত্বে হামলা করা হয়।
হামলাকারীরা অশ্বিনী কুমার টাউন হলের উত্তর পাশে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ঢুকে বঙ্গবন্ধুর ছবি নামিয়ে ভাঙচুর করে উল্লাস করে। পরে আ স ম ফিরোজের নেতৃত্বে শহরে আনন্দ মিছিল বের করা হয়।
যখন কথিত এই ঘটনা ঘটে, সে সময় জন্মও হয়নি বাদীর। তাহলে তিনি কীভাবে এই অভিযোগ আনলেন- এমন প্রশ্নে তার আইনজীবী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘বাদীর জন্ম ঘটনার অনেক পরে, কিন্তু উনি ঘটনা শুনে বিচার চেয়ে মামলার আবেদন করেছেন। এটা যে কোনো মানুষ করতে পারে।’
মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৯৭৫ সালে বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও ১৯৭৫ সালে বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খান আলতাফ হোসেন ভুলু, বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন ফরাজীসহ ১০ জনকে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আ স ম ফিরোজ বরিশালে পড়াশোনা করার সময় রাজনীতিতে জড়ান। তিনি ১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমানের সেনা শাসনের বিরুদ্ধে নৌকা প্রতীক নিয়ে পটুয়াখালী-৬ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
দেশের দ্বিতীয় সেই সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে কেবল ৩৯ জন নির্বাচিত হতে পেরেছিলেন।
১৯৮৬ সালে ফিরোজ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আবার সংসদ সদস্য হন পটুয়াখালী-২ আসন থেকে। পরে নিজ দল আওয়ামী লীগেই ফিরে আসেন।
১৯৯১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ এই আসনে প্রতিবারই ফিরোজের হাতে নৌকা তুলে দেয়। এর মধ্যে কেবল ২০০১ সালে একবারই তিনি বিএনপির কাছে হেরে যান। বাকি প্রতিটি নির্বাচনেই জয় পান তিনি।
তার বিরুদ্ধে আদালতে জমা দেয়া অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের এই সংসদ সদস্য সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা দুষ্টু লোকের দুষ্টামি।’
এ বিষয়ে তিনি আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।