বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সিট বরাদ্দ পেয়েও ছাত্রলীগের বাধায় গণরুমে

  •    
  • ১৪ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৯:৪০

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের কমিটিতে পদপ্রত্যাশীরা নিজের সরব উপস্থিতি জানান দিতে মিছিলসহ নানা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। আর এসব মিছিলে বেশিরভাগই থাকেন গণরুমের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা সিটে উঠে গেলে গেস্টরুম থেকে তারা মিছিলে আসতে চান না। তাই তাদেরকে সিটে উঠতে দেয়া হচ্ছে না।

প্রশাসনিকভাবে সিট বরাদ্দ পেয়েও তাতে উঠতে পারছেন না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা। বাধ্য হয়ে তাদেরকে গণরুমেই গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হল ছাত্রলীগে শীর্ষ পদপ্রত্যাশীদের অনুসারী দ্বিতীয় বর্ষের ‘বড় ভাইয়েরা’ প্রশাসনের মাধ্যমে বরাদ্দ পাওয়া সিটে তাদেরকে উঠতে দিচ্ছেন না। তারপরও কেউ বরাদ্দ পাওয়া কক্ষে গেলেই তাদের গেস্টরুমে ডেকে অকথ্য ভাষায় গালিসহ নানাভাবে মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে। অনেককে হলছাড়া করারও হুমকি দেয়া হচ্ছে।

করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে দীর্ঘ দেড় বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের পর গত ১০ অক্টোবর সব বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হলগুলো খুলে দেয়া হয়। হলগুলোতে গণরুম থাকবে না- কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তের পর বিজয় একাত্তর হল প্রশাসন গণরুমে থাকা শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে গত ২৬ অক্টোবর সিট বরাদ্দ দেয়।

গণরুমে থাকা ৩০৭ জন শিক্ষার্থীকে এদিন সিট বরাদ্দ দেয়া হয়। তাদের মধ্যে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী প্রায় ১৭০ জন। সিট বরাদ্দপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের ৭ নভেম্বরের মধ্যে তিন হাজার টাকা হল ফি পরিশোধ করে বরাদ্দ পাওয়া সিটে উঠে গণরুম খালি করার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু টাকা পরিশোধ করেও প্রথম বর্ষের কেউই সিটে উঠতে পারেননি। ফলে গণরুমও খালি হয়নি। ওদিকে বিষয়টি জেনেও নির্বিকার হল প্রশাসন।

হল সম্মেলন সামনে রেখে পদপ্রত্যাশীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ নেতাদের কাছে নিজের সরব উপস্থিতি জানান দিতে নিয়মিত মধুর ক্যান্টিনে মিছিলসহ নানা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। আর এসব মিছিলে বেশিরভাগই থাকেন গণরুমের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা সিটে উঠে গেলে গেস্টরুম থেকে মিছিলে আসতে চায় না। তাই তাদেরকে সিটে উঠতে দেয়া হচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সিট পাওয়ার আশায় অনিচ্ছা সত্ত্বেও দীর্ঘদিন রাজনৈতিক প্রোগ্রাম করেছি। কিন্তু এখন সিট পেয়ে নির্দিষ্ট টাকা পরিশোধ করলেও আমাদের সিটে উঠতে দেয়া হচ্ছে না। আমি একবার বরাদ্দ করা সিটে বেড রাখতে গিয়েছিলাম। ওইদিনই দ্বিতীয় বর্ষের পলিটিক্যাল বড় ভাইরা আমাকে গেস্টরুমে ডেকে সবার সামনে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেছে।

‘নিজের বৈধ সিটে উঠতে গিয়েও যদি মা-বাবার নামে অকথ্য ভাষায় গালি শুনতে হয় তখন আসলে কান্না করা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না।’

আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের নামে সিট বরাদ্দ হওয়ার পর দ্বিতীয় বর্ষের পলিটিক্যাল বড় ভাইয়েরা আমাদের গেস্টরুমে ডেকে নিয়ে বলে- তোরা কেউ সিটে উঠবি না। আপাতত টাকা পরিশোধ করে ফেল। যখন সিটে ‍ওঠার সময় হবে তখন আমরাই বলবো।’

প্রথম বর্ষের অন্য এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘গণরুম খালি করার জন্যই আমরা যারা গণরুমে থাকি তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সিট দেয়া হয়েছে। কিন্তু বাধ্য হয়ে আমাদের গণরুমেই থাকতে হচ্ছে। হল প্রশাসনও জানে তাদের গণরুম খালি হয়নি। কিন্তু তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।’

‘গণরুমে থাকলে পড়াশুনা হয় না। যখন-তখন বড় ভাইদের ডাকে সাড়া দিয়ে প্রোগ্রামে যেতে হয়। তাই সিট পেয়ে খুব খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি। এসব শুনলে আম্মু চিন্তা করবে। তাই বাড়িতেও এসব কথা বলতে পারি না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের এই হলটিতে কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ চার নেতাকে কেন্দ্র করে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী হিসেবে রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন অন্তত নয়জন। এদের সবাই হল শাখা ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির বিভিন্ন পদধারী। তাদের অনুসারীরাই মূলত প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের সিটে উঠতে বাধা দিচ্ছে।

অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের অনুসারী হল ছাত্রলীগে শীর্ষ পদপ্রত্যাশী সজীবুর রহমান বলেন, ‘যাদের সিটে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের সিট দেয়া হয়েছে তাদেরকে আমরা ১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দিয়েছি। এরপরই প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের তাদের সিটে তুলে দেব। আর কিছু কিছু প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীর সিটে দ্বিতীয় বর্ষের যারা সিট পায়নি তাদেরকে তুলেছি। আপাতত এই প্রক্রিয়ায় আমরা হলের চারটি গ্রুপ একসঙ্গে এগুচ্ছি।’

প্রথম বর্ষের সিটে কেন দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের তোলা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সিনিয়রদের গণরুমে রেখে কীভাবে আমরা জুনিয়রদের সিটে তুলি!’

সিটে উঠতে গেলে গালাগালি ও হুমকি দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি হয়ত ভুল ইনফরমেশন। তবে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য যেসব সিট বরাদ্দ পড়েছে সেগুলোতে আছেন হলের সিনিয়র শিক্ষার্থীরা। তাই আমি জুনিয়রদেরকে গেস্টরুমে ডেকে বরাদ্দ পাওয়া রুমে না যেতে বলেছি।’

নির্দেশ অমান্য করে কেউ গেলে তাকে মানসিক নির্যাতন করার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের প্রতি আমাদের এরকম কোনো নির্দেশনা ছিল না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী এবং হল ছাত্রলীগে শীর্ষ পদপ্রত্যাশী রবিউল হাসান রানা বলেন, ‘হলে চারটি গ্রুপ আছে। সবার সম্মিলিত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আমরা প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের এই সপ্তাহের মধ্যেই সিটে তুলে দেব।’

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের অনুসারী এবং হল ছাত্রলীগে শীর্ষ পদপ্রত্যাশী নাজমুল হাসান নিশান বলেন, ‘আমার গ্রুপে এরকম কেউ বাকি আছে বলে আমার জানা নেই। তবে শুনেছি অন্য গ্রুপে বাকি আছে। তাদেরকে ১৬ ডিসেম্বরের পর সেসব সিটে তুলে এই সমস্যার সমাধান করে দেয়া হবে।’

কেউ রুমে উঠতে গেলে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। তারপরও আমরা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করবো।’

বিজয় একাত্তর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির বলেন, ‘প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের সিটে এখন বিসিএস পরীক্ষার্থীরা থাকছে। তারা হয়তো এই সপ্তাহের মধ্যে চলে যাবে। তখন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা তাদের সিটে উঠতে পারবে।’

প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের বরাদ্দ পাওয়া অনেক সিট খালি থাকা সত্ত্বেও সেসব সিটে উঠতে না দেয়ার অভিযোগের বিষয়ে প্রাধ্যক্ষ বলেন, ‘কোন শিক্ষার্থী এ বিষয়ে আমাকে এখনো বলেনি। কালকে আমি এ বিষয়ে খোঁজ নেব।’

এ বিভাগের আরো খবর