বগুড়ার আদমদিঘীর বিআরআইএস করখানায় নিহত পাঁচ শ্রমিক এতটাই দগ্ধ হয়েছেন যে তাদের শনাক্ত করতে পারছেন না স্বজনরা। কারখানার চারপাশে তাদের ভিড় দেখা গেছে।
প্লাস্টিক কারখানাটিতে কাজ করতেন সান্তাহার পৌরসভার সারিন্দা গ্রামের নাসির হোসেনের ছেলে শাহাজান হোসেন। ২৩ বছরের ছেলের সন্ধানে ছুটে এসেছেন বাবা।
নাসির হোসেন বলেন, ‘হামার ছোলডা সকালে কাম (কাজ) করবার কারখানাত আসিছে। তার পর থাক্যা (থেকে) আর খোঁজ নাই। আগুন লাগার পর অনেকে বার হবার পারলেও হামার ছোলডা মনে হয় পুড়া মারা গেছে। পুলিশরা কিছু জানাবার পারিচ্ছে না রে বা। ওহ বাপ শাহাজান তুই কুন্টি রে (কোথায়)।’
সান্তাহার পৌরসভার কুমল দুগাছী মহল্লার লুৎফর রহমানের ১৫ বছরের ছেলে শিহাব হোসেনেরও খোঁজ মিলছে না। পরিবারের ধারণা শিহাবও আগুনে পুড়ে মারা গেছে।
শিহাবের বাবা লুৎফর রহমান বলেন, ‘হামার ছোলডা সকালে কাজে আসার পর ১২টার দিকে আগুন লাগে। তারপর আর কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। হামার ছোলডাও মনে হয় আগুনে পুড়া মরা গেছে রে।
‘সকালে হাসিমুখে কামোত (কাজে) বার হলো। এখন হামাকোক (আমাকে) কান্দা লাগিচ্ছে ছোলডার জন্নি। কেউ কবার পারিচ্ছে না লাশগুলার মধ্যে কুনডা (কোনটা) হামার ছোল। এডা কী হয়া গেল রে।’
শিহাবের ফুফু তাসলিমা বলেন, ‘শিহাব এই কারখানায় শ্রমিকের কাজ করতেন। ৬ মাস ধরে এখানে কাজ করে অভাবের সংসারে আয়ের জোগান দিচ্ছিল। এমনটা হবে কেউ কল্পনা করতে পারেনি। এটা কী হয়ে গেল।’
কারখানার চারজন মালিক। তাদের মধ্যে সান্তাহার পৌরসভার মেয়র মোফাজ্জল হোসেন ভুট্টুর সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার প্রতিবেদকের।
তিনি বলেন, ‘আগুন কীভাবে লাগল আমি জানি না। আমি আগুন লাগার সময় কারখানায় ছিলাম। অন্য মালিকরা কেউ ছিল না। আমাদের প্রায় ৩০ কোটি টাকার বিনিয়োগ।’
নওগাঁ ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক এ কে এম মোর্শেদ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা ৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছি। তাদের শরীর এমনভাবে পুড়েছে যে কোনটা কার মরদেহ শনাক্ত করা কঠিন।’
আদমদিঘী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জালাল উদ্দিন বলেন, ‘মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। সেগুলো বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যালে পাঠানো হবে। মেডিক্যাল পরীক্ষার পর মরদেহগুলোর পরিচয় জানা সম্ভব হবে।’
সান্তাহারের কারখানাটিতে মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে আগুন লাগে। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে আদমদিঘী, নওগাঁর রানীনগর, আত্রাইসহ আশপাশের ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট।
তিন ঘণ্টার চেষ্টায় বেলা ৩টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে এর আগে ১৫-২০ জন শ্রমিক কারখানা থেকে নিরাপদে বের হয়ে আসেন। একে একে ভেতর থেকে বের করা হয় পাঁচ শ্রমিকের নিথর দেহ।