শিকারিজীবন থেকেই মানুষের আস্থার সঙ্গী হয়ে আছে কুকুর। আধুনিক জীবনে গৃহপালিত প্রাণী হিসেবে মানুষের আরও কাছে এসেছে এরা। হাজার হাজার বছর ধরে মানব সমাজের ঘনিষ্ঠ থাকার সুবাদে কুকুর মানুষের ভাষার অনেক শব্দ বোঝার সক্ষমতা অর্জন করেছে বলে দাবি করছেন গবেষকেরা।
তারা বলছেন, বেশির ভাগ কুকুর মানুষের কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনামূলক শব্দ এক মুহূর্তে বুঝে ফেলতে সক্ষম। ফলে ইরেজিতে ‘ওয়াক (হাঁটো)’ বা ‘সিট (বসো)’ অথবা ‘স্টে (থামো)’ শব্দ বলামাত্র এরা নির্দেশনা পালনে তৎপর হয়। এমনকি কুকুর কোনো কোনো ক্ষেত্রে মানুষের কণ্ঠস্বরের হেরফেরও ধরতে পারে। তাই মালিক রেগে আছেন, নাকি আনন্দিত সেটা বুঝতে এদের খুব বেশি অসুবিধা হয় না।
কুকুর যেসব শব্দ বা বাক্যাংশ বুঝতে পারে সেগুলোর সংখ্যা অবশ্য অগণিত নয়। সম্প্রতি একটি গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে, ইংরেজি ভাষার ক্ষেত্রে গড়ে এই সংখ্যাটি হলো ৮৯। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক শব্দ নির্দেশনামূলক, যেমন বসো, থামো বা অপেক্ষা করো। এর বাইরে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেয়ার মতো ভাবার্থসূচক কিছু বাক্যাংশ বুঝতেও এরা সক্ষম।
অ্যাপ্লায়েড অ্যানিমেল বিয়েভিয়ার সায়েন্সে প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাটি।
কুকুরদের ইংরেজি শব্দ বোঝার গড় সক্ষমতা ৮৯ হলেও কিছু কিছু কুকুর কিন্তু বেশ ‘শিক্ষিত’। এমনই এক ‘শিক্ষিত’ কুকরের জ্ঞানভান্ডারে ২০০টিরও বেশি শব্দমালা পাওয়া গেছে। গবেষকেরা বলছেন, প্রায় দুই বছরের মানবশিশুর শব্দভান্ডারও মোটামুটি এমন।
গবেষণাটি পরিচালনার সময়ে এমন একটি শব্দভান্ডার ব্যবহার করা হয়েছে, যেটি মানব শিশুর শব্দ দক্ষতা মূল্যায়নে হরহামেশা প্রয়োগ করা হয়। কুকুরের ভাষাজ্ঞান যাচাইয়ে সেই শব্দভান্ডারটি ১৬৫ মালিককে দিয়েছিলেন গবেষকেরা। পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা কুকুরগুলো ছিল বিভিন্ন প্রজাতির, বিভিন্ন বয়সের এবং বিভিন্ন আকারের।
দেখা গেছে, প্রজাতির ধরন এবং কে কোন কাজে যুক্ত (যেমন, পুলিশ বাহিনীতে নিযুক্ত কুকুর) তার ওপরে কুকুরের শব্দ বোঝার দক্ষতা নির্ভরশীল। এদের বয়স বা মালিকের বিশেষত্ব এ ক্ষেত্রে বড় ধরনের কোনো প্রভাব ফেলে না।
গবেষকেরা বলছেন, মালিকদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কুকুরগুলো অনেক শব্দের অর্থ বোঝার পাশাপাশি যথাযথ সাড়াও দেয়।
এর আগেও কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে যাওয়া কুকুরের শব্দ বোঝার দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। ২০০৪ সালে রিকো নামের এমন একটি কুকুরের ‘খেলনা’, ‘পুতুল’সহ ২০০টির বেশি শব্দ বোঝার সক্ষমতা প্রমাণিত হয়েছিল।
এবারের গবেষণায় অতি ব্যবহৃত ১৭২টি শব্দ ও বাক্যাংশ বেছে নিয়ে সেগুলো উচ্চারণের পর কুকুরের প্রতিক্রিয়া যাচাই করা হয়েছে। হাঁটি হাঁটি পা পা করা শিশুদের শব্দ বোঝার দক্ষতা যাচাইয়ে সাধারণত এসব শব্দ ও বাক্যাংশ ব্যবহার করা হয়।
কুকুরের শব্দভান্ডার যাচাইয়ের ক্ষেত্রে শূন্য থেকে পাঁচ-এর একটি স্কেলও ব্যবহার করেছেন গবেষকেরা। এ ক্ষেত্রে শূন্য পয়েন্টের স্কোর মানে হলো, কুকুরটি কখনোই কোনো শব্দ বা বাক্যাংশে সাড়া দেয়নি। আর পাঁচ পয়েন্ট পাওয়ার মানে হলো সবগুলোতেই এটি সাড়া দিয়েছে।
দেখা গেছে, ৯০ ভাগ কুকুর ১০টি শব্দ বা বাক্যাংশে সাড়া দিয়েছে। এসব সাধারণ শব্দ ও বাক্যাংশের মধ্যে আছে কুকুরের নাম, ‘সিট (বসা)’, ‘কাম (এসো), ‘গুড গার্ল/বয়’, ‘ডাউন’ (নিচু হও), ‘স্টে (বসে থাক)’, ‘ওয়েট (অপেক্ষা করো)’, ‘নো’, ‘ওকে’ এবং ‘লিভ ইট (ছেড়ে দাও)’।
কিছু কিছু কুকুর আরও এক ধাপ এগিয়ে ‘ওয়াইপ ইওর ফিট (তোমার পা মোছ)’, ‘হুইসপার (আস্তে কথা বলো)', ‘লাউড (জোরে হাঁক দাও)’ জাতীয় শব্দ বুঝতে পারে। তাছাড়া সংশ্লিষ্ট ডগ ওয়াকার বা ডগি ডে-কেয়ারের নামও এদের পরিচিত।
দেখা গেছে প্রশিক্ষিত কুকুরগুলো বেশ দ্রুত শব্দের পাশাপাশি বাক্যাংশের অর্থ ধরে ফেলতে সক্ষম। সেনা বা পুলিশ বাহিনীতে যুক্ত কুকুরের শব্দ বোঝার দক্ষতা সাধারণ কুকুরের তুলনায় প্রায় দেড় গুণ- এমনটিও প্রমাণিত হয়েছে গবেষণায়।