দেশের ২২তম প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের মেয়াদকাল এ মাসের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়ে যাচ্ছে। এর আগেই নিয়োগ দেয়া হবে দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি। কে হচ্ছেন পরবর্তী প্রধান বিচারপতি, এ নিয়ে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
বর্তমান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের ৬৭ বছর পূর্ণ হচ্ছে চলতি বছরের শেষ দিন। ওই দিন তিনি অবসরে যাবেন। তার অবসরের আগেই নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হবে।
তার স্থলাভিষিক্ত কে হবেন- এ প্রশ্ন এখন আইনজীবীদের মুখে মুখে। কৌতূহলী হয়ে একে অপরকে প্রশ্ন করছেন, রাষ্ট্রের তিন অঙ্গের একটির শীর্ষ পদে কে বসতে যাচ্ছেন।
প্রধান বিচারপতি নিয়োগের অতীত চর্চা বিশ্লেষণে দেখা যায়, সাধারণত আপিল বিভাগের যিনি জ্যেষ্ঠ বিচারক, তাকেই পরবর্তী প্রধান বিচারপতি করা হয়। তবে জ্যেষ্ঠতার এ নিয়ম অনেকবার ডিঙিয়েও যাওয়া হয়েছে। সংবিধানে এ বিষয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। রাষ্ট্রপতি যাকে চাইবেন, তাকেই তিনি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিতে পারেন।
সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিয়ে থাকেন। এ কারণে পুরো বিষয়টি এখন রাষ্ট্রপতির ওপর নির্ভর করছে।
তবে বর্তমানে আপিল বিভাগে বিদ্যমান পাঁচ বিচারকের মধ্যে বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন অবসরে গেল বাকি থাকবেন আর চার বিচারক। নিয়ম অনুযায়ী আপিল বিভাগের বিচারকদের মধ্য থেকেই মূলত প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে বাকি চারজনের মধ্য থেকে একজন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ পাবেন।
এ বিষয়ে আইন বিশারদদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী যদি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়, তাহলে পরবর্তী প্রধান বিচারপতি হওয়ার কথা বিচারপতি ইমান আলীর। তবে জ্যেষ্ঠতা অনুসরণ করা না হলে আপিল বিভাগের বাকি বিচারক বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান ননী ও বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের মধ্য থেকে যেকোনো একজনকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিতে পারেন রাষ্ট্রপতি।
আইনজীবীদের মধ্যে অনেকেই মনে করছেন জ্যেষ্ঠতা এবং যোগ্যতা অনুযায়ী পরবর্তী প্রধান বিচারপতি হতে পারেন বিচারপতি ইমান আলী। তবে কেউ কেউ বলছেন, সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আপিল বিভাগের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে পরবর্তী প্রধান বিচারপতি করা হতে পারে। আইনজীবীরা বলছেন, আপিল বিভাগে চার বিচারপতির তিনজনেরই অবসরের মেয়াদ ২০২৩ সালের মধ্যে। এ ক্ষেত্রে একটু বেশি সময় পাবেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। তবে বিচারপতি মো. নুরুজ্জামানেরও সম্ভাবনা রয়েছে।
সংবিধান অনুযায়ী ৬৭ বছর বয়স পর্যন্ত বিচারপতি পদে থাকা যায়। সে হিসেবে বিচারপতি ইমান আলী অবসরে যাবেন ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি। তিনি প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেলে তার মেয়াদকাল হবে এক বছর।
আর বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী নিয়োগ পেলে তার প্রধান বিচারপতির মেয়াদকাল হবে দেড় বছরের বেশি। কারণ তার মেয়াদকাল ২০২৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এ ছাড়া বিচারপতি নুরুজ্জামান ননী অবসরে যাবেন ২০২৩ সালের ১ জুলাই এবং বিচারপতি ওবায়দুল হাসান অবসরে যাবেন ২০২৬ সালের ১১ জানুয়ারি।
প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মুনসুরুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, আপিল বিভাগের যারা বিচারক আছেন, সকলেরই প্রধান বিচারপতি হওয়ার যোগ্যতা রয়েছে। রাষ্ট্রপতি যাকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেবেন, তিনিই হবেন প্রধান বিচারপতি।
ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়ার সম্পূর্ণ ক্ষমতা মহামান্য রাষ্ট্রপতির। তিনি যাকে যোগ্য মনে করবেন, তাকেই নিয়োগ দেবেন। এটা সংবিধানেই বলা আছে।’
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগে একসময় ১১ বিচারক ছিলেন, এখন সেখানে প্রধান বিচারপতিসহ বিচারক আছেন পাঁচজন। এর আগে আইনমন্ত্রী নিউজবাংলাকে বলেছিলেন, আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হবে। এটা চলমান প্রক্রিয়া।
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। কে হবেন, সেটা তিনিই নির্ধারণ করবেন।’
সংবিধানের ৯৪ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে বিচারকের সংখ্যা নির্ধারণ ও নিয়োগ করে থাকেন। ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে: “প্রধান বিচারপতি (যিনি ‘বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি’ নামে অভিহিত হইবেন) এবং প্রত্যেক বিভাগে আসন গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রপতি যে সংখ্যক বিচারক নিয়োগের প্রয়োজনবোধ করবেন, সেই সংখ্যক অন্যান্য বিচারক লইয়া সুপ্রিম কোর্ট গঠিত হইবে।’'
সংবিধান অনুযায়ী ৬৭ বছর বয়স পর্যন্ত বিচারপতি পদে থাকা যায়।