করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওক্রিমনে আক্রান্ত দুইজনসহ তিন নারী ক্রিকেটারকে রাজধানীর মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। এদের আরেকজন করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়েছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত হয়ে চারজন চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদের দুজন ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। আরেকজন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। অন্য একজন সাধারণ রোগী। তারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সবাই সুস্থ রয়েছেন।’
নিয়াতুজ্জামান বলেন, ‘শুধু অবজারভেশনে (নজরে) রাখার জন্য তাদের হাসপাতালে ভর্তি করে রাখা হয়েছে। কারণ বাসায় বা হোটেলে তো তাদের পর্যাপ্ত নজরদারি হবে না।’
রোববার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, দেশে আর কারও শরীরে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন শনাক্ত হয়নি।
এদিকে সোমবার বিশ্বে প্রথমবারের মতো ওমিক্রন শনাক্ত হওয়া এক রোগীর মৃত্যুর কথা জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।
কীভাবে শনাক্ত হলো ওমিক্রন, উপসর্গ কী
রোগীদের মধ্যে ওমিক্রনকে করোনাভাইরাসের রূপ পরিবর্তিত নতুন বৈশিষ্ট্য হিসেবে শনাক্ত করা প্রথম চিকিৎসকদের একজন সাউথ আফ্রিকার অ্যাঞ্জেলিক কোয়েৎজি। নতুন ধরনের ভাইরাসটির উপসর্গ এখন পর্যন্ত বেশ মৃদু এবং বাড়িতে থেকেই এর চিকিৎসা নেয়া সম্ভব বলে মত তার।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, সাউথ আফ্রিকায় করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ডেল্টা বেশি সংক্রমিত। কিন্তু ড. কোয়েৎজি গত ১৮ নভেম্বর নিজের ক্লিনিকে সাত রোগীর মধ্যে ডেল্টা উপসর্গের চেয়ে কিছু ভিন্ন উপসর্গ লক্ষ্য করে সতর্ক হন। যদিও সেসব উপসর্গ ছিল অত্যন্ত মৃদু।
সাউথ আফ্রিকান চিকিৎসক সমিতির প্রধান ড. কোয়েৎজি জানান, ওই রোগীরা দুই দিন ধরে ‘অতিরিক্ত ক্লান্তিতে ভুগছিলেন।’ সঙ্গে মাথা ও শরীর ব্যথা তো ছিলই।
তিনি বলেন, ‘এই পর্যায়ের উপসর্গ সাধারণ ভাইরাস সংক্রমণের মতোই। কিন্তু গত ৮ থেকে ১০ সপ্তাহ কোনো কোভিড রোগী পাইনি বলে আমরা তাদের পরীক্ষা করানোর সিদ্ধান্ত নিই।’
পরীক্ষায় এক পরিবারের সব সদস্য করোনা পজিটিভ শনাক্ত হন।
একই দিন কাছাকাছি উপসর্গ নিয়ে আরও রোগী আসতে শুরু করলে নড়ে বসেন ড. কোয়েৎজি। কারণ এর আগ পর্যন্ত দিনে বড়জোর দুই থেকে তিনজন রোগী দেখছিলেন তিনি।
কোয়েৎজি বলেন, ‘মহামারির তৃতীয় ধাক্কার সময় ডেল্টায় আক্রান্ত অসংখ্য রোগী আমরা পেয়েছি। নিজেদের অভিজ্ঞতা দিয়ে যাচাই করে বুঝতে পারি যে তখনকার দৃশ্যপটের তুলনায় এখনকার দৃশ্যপটের পার্থক্য আছে।’
নমুনা পরীক্ষার ফল সেদিনই সাউথ আফ্রিকার জাতীয় সংক্রামক রোগ ইনস্টিটিউটে (এনআইসিডি) জমা দেন কোয়েৎজি।তিনি বলেন, ‘যারা ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছেন, তাদের বেশির ভাগের মধ্যেই খুব মৃদু উপসর্গ ছিল এবং কাউকেই হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়নি। তাদের বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নিতে বলেছিলাম আমরা। সেভাবে চিকিৎসা নিয়ে তারা সুস্থ আছেন।’
সাউথ আফ্রিকায় করোনার টিকাবিষয়ক মন্ত্রী পর্যায়ের উপদেষ্টা কমিটির অন্যতম সদস্য ড. কোয়েৎজি। তার মতে, ডেল্টার মতো ওমিক্রনে আক্রান্ত হলে স্বাদ-ঘ্রাণ হারানো কিংবা অক্সিজেনের লেভেল বড় ব্যবধানে কমে যাওয়ার মতো উপসর্গ এখনও দেখা যায়নি।
কোয়েৎজির অভিজ্ঞতা বলছে, ওমিক্রনে আক্রান্তরা সবাই ৪০ বছরের কম বয়সী বা তরুণ। আক্রান্ত যাদের তিনি চিকিৎসা দিয়েছিলেন, তাদের প্রায় অর্ধেকের করোনা প্রতিরোধী টিকা নেয়া ছিল না।
গত ১৪ থেকে ১৬ নভেম্বর গবেষণাগার থেকে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার ভিত্তিতে ২৫ নভেম্বর করোনার নতুন ধরনটির অস্তিত্ব শনাক্ত হয়েছে বলে ঘোষণা দেয় এনআইসিডি। পরদিন একে ওমিক্রন নাম দিয়ে চিহ্নিত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।