নানা নাটকীয়তা, উত্তেজনা আর এক পক্ষের বর্জনের মধ্যে সিলেট চেম্বারের নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। চেম্বারের নতুন সভাপতি হয়েছেন তাহমিন আহমদ।এ ছাড়া ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদকে সিনিয়র সহসভাপতি ও আতিক হোসেনকে সহসভাপতি পদে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তারা সবাই চেম্বার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের প্রার্থী ছিলেন।
তাদের মধ্যে তাহমিন ও আতিক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।চেম্বার নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার আব্দুল জব্বার জলিল সোমবার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে এই তিনজনকে বিজয়ী ঘোষণা করেন।ফল ঘোষণার পর পুলিশ পাহারায় চেম্বার ভবন ছাড়েন নির্বাচন কমিশনাররা।তবে এই ফল ঘোষণার আগেই রাত ১১টার দিকে নির্বাচন বর্জন করে চেম্বার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী অপর প্যানেল সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ।
তারা নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অগঠনতান্ত্রিক ও একপেশে আচরণের অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নেয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন নেতারা।বর্জনের ঘোষণার আগে সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদের সভাপতি প্রার্থী আব্দুর রহমান জামিল ও সহসভাপতি প্রার্থী হুমায়ুন আহমদের প্রার্থিতা বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। এ নিয়েই শুরু হয় জটিলতা।গত শনিবার সিলেট চেম্বার অব কমার্সের নির্বাচন হয়। এতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী দুই প্যানেল থেকে ১১ জন করে পরিচালক নির্বাচিত হন।রোববার দুই প্যানেল থেকেই সভাপতি ও সহসভাপতি নিজেদের প্রার্থী তালিকা নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দেয়।সভাপতি পদে সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ থেকে আবু তাহের মো. শোয়েব, তাহমিন আহমদ ও ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদের নাম দেয়া হয়।সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ থেকে সভাপতি পদে একক প্রার্থী হিসেবে আব্দুর রহমান জামিলের নাম জমা দয়া হয়।সোমবার বিকেলে সভাপতি ও সহসভাপতি পদে ভোট হওয়ার কথা ছিল। তবে দুই প্যানেল থেকে সমান সংখ্যক পরিচালক বিজয়ী হওয়ায় সভাপতি ও দুই সহসভাপতি নির্বাচন নিয়ে জটিলতার দেখা দেয়। রাত পর্যন্ত দীর্ঘ আলোচনা ও সমাঝোতার চেষ্টা চালিয়েও দুই পক্ষ ঐক্যমতে পৌঁছতে পারেনি।এ নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে রাত ৯টার দিকে সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদের সভাপতি প্রার্থী আব্দুর রহমান জামিল ও সহসভাপতি প্রার্থী হুমায়ুন আহমদের প্রার্থিতা বাতিল করে নির্বাচন কমিশন।
এরপর রাত সাড়ে ১১টার দিকে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের প্রার্থী তাহমিনকে আহমদকে সভাপতি ও সহসভাপতি পদে ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ ও আতিক হোসেনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।চেম্বার নির্বাচনে পরিচালক পদে অর্ডিনারি, অ্যাসোসিয়েট, গ্রুপ শ্রেণি ও টাউন শ্রেণি এই চার গ্রুপ থেকে প্রার্থীরা অংশ নেন।
প্রেসিডিয়াম নির্বাচনেও এ চার শ্রেণি থেকে প্রার্থী দিতে হয়। তবে সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ থেকে সভাপতি ও সহসভাপতি পদে কেবল অর্ডিনারি শ্রেণি থেকে প্রার্থী দেয়া হয়েছে। এটা গঠনতন্ত্রবিরোধী হওয়ায় দুজনের প্রার্থিতা বাতিলের কথা জানান হয়।
তবে সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদের সভাপতি প্রার্থী আব্দুর রহমান জামিল বলেন, ‘অতীতেও একটি গ্রুপ থেকে প্রার্থী দিয়ে চেম্বারের সভাপতি ও সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।
‘তবে এবার নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ অন্যায় ও একপেশেভাবে একটি প্যানেলকে বিজয়ী করতে আমাদের প্রার্থিতা বাতিল করেছেন। যা অগ্রণযোগ্য। আমরা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেবে।’সোমবার রাত ১০টার দিকে চেম্বার ভবনের পাশে গিয়ে দেখা যায়, পুরো ভবন ও আশপাশের এলাকা ঘিরে রেখেছে বিপুল সংখ্যক পুলিশ। পাশেই জটলা পাকিয়ে আছেন কয়েকশ’ তরুণ।সিলেট ব্যবসায়ী সমিতি থেকে নির্বাচিত পরিচালক নজরুল ইসলাম বাবুল অভিযোগ করে বলেন, ‘চেম্বারের ইতিহাস এটি কলঙ্কজনক দিন। ভেতরে প্রেসিডিয়াম নির্বাচন চলছে। অথচ বাইরে বিপুল সংখ্যক ছেলেরা মহড়া দিচ্ছে। তারা উত্তেজনাকর স্লোগান দিচ্ছে।
‘একটি গোষ্ঠী চেম্বারের দখল নিতে এই তরুণদের জড়ো করেছে। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনের নির্বাচনে এমন ঘটনা নজিরবিহীন ও লজ্জার।’তবে চেম্বার নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার জলিল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা গঠনতন্ত্র অনুসারে সব কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। গঠনতন্ত্রের বাইরে যাওয়ার সুযোগ আমাদের নেই।’বিজয়ী প্যানেলের নেতাদের বক্তব্য জানা যায়নি। মোবাইল ফোনে চেষ্টা করা হলেও তারা কল ধরেননি।শনিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দুই ক্যাটাগরিতে ৪০ প্রার্থীর মধ্যে পরিচালক পদে বিজয়ী হয়েছেন ১৮ জন।
অপর দুই ক্যাটাগরিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৪ জন পরিচালক বিজয়ী হয়েছেন।নির্বাচনে বিজয়ীরা হলেন অর্ডিনারি শ্রেণি থেকে সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ প্যানেলের ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ, ফখর উছ সালেহীন নাহিয়ান, মুশফিক জায়গীরদার এবং সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদের হুমায়ূন আহমদ, জহিরুল কবির চৌধুরী, ফাহিম আহমদ চৌধুরী, খন্দকার ইসরার আহমদ রকী, আলীমুল এহছান চৌধুরী, আব্দুস সামাদ, দেবাংশু দাস মিঠু, নজরুল ইসলাম ও আব্দুর রহমান জামিল।
অ্যাসোসিয়েট শ্রেণি থেকে বিজয়ী হয়েছেন সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের তাহমিন আহমদ, মুজিবুর রহমান মন্টু, ওয়াহিদুজ্জামান চৌধুরী রাজিব ও কাজী মো. মোস্তাফিজুর রহমান এবং সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদের জিয়াউল হক ও হাজী সরোয়ার হোসেন ছেদু।পরিচালক প্রার্থীদের মধ্যে ট্রেড গ্রুপ শ্রেণিতে ও টাউন অ্যাসোসিয়েশন শ্রেণিতে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের চারজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
তারা হলেন- ট্রেড গ্রুপ শ্রেণিতে আবু তাহের মো. শোয়েব (চেম্বারের বিদায়ী সভাপতি), মো. হিজকিল গুলজার ও মো. আতিক হোসেন এবং টাউন অ্যাসোসিয়েশন শ্রেণিতে আমিনুর রহমান।
এ দুই ক্যাটাগরিতে চারটি পরিচালক পদে সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ কোনো প্রার্থী দেয়নি।