সারের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আগামী ১৫ দিন উপজেলাপর্যায় পর্যন্ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার কথা জানিয়েছেন কৃষমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক।
সচিবালয়ে সার পরিস্থিতি নিয়ে শিল্প মন্ত্রণালয় ও সার ডিলারদের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি এ তথ্য জানান।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মিটিংয়ে এখানে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদের একদম ইউনিয়ন-পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা, উপজেলা-পর্যায়ের তারা যেন সার্বক্ষণিক মনিটর করে। যেসব ডিলার ও বিক্রেতা বেশি দামে বিক্রি করবে তাদের তাৎক্ষণিক চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
‘আমরা একদম চিঠি দিয়ে ডিসি-এসপির সহযোগিতা নিয়ে অব্যাহতভাবে ১৫ দিন মোবাইল কোর্ট করব সারের জন্য। অসাধু ডিলার ও বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে।’
দেশে সারের মজুত পরিস্থিতি তুলে ধরে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সারের মজুত পরিস্থিতি বিস্তারিত আলোচনা করলাম। কয়েকটি গণমাধ্যমে এসেছে অনেক এলাকায় চাষিরা সার পাচ্ছেন না, প্রয়োজনীয় সারের ঘাটতি রয়েছে। সরকার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও বিষয়টি জানেন এবং আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে।
‘আমরা যেটা দেখলাম কোনো কোনো এলাকায়, এলাকাভিত্তিক পরিবহন সমস্যার কারণে সারগুলো ঠিকমতো যায়নি। ডিলার ও দোকানদাররাও এ সুযোগ নিয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়েছে, বিভিন্ন উপকরণের দাম বেড়েছে এবং শিপিং কষ্ট অস্বাভাবিক বেড়েছে।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘কী এমন ঘটেছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে ইউরিয়ার দাম তিন গুণ বেড়েছে। এটা একটা আন্তর্জাতিক চক্র সুপরিকল্পিতভাবে সারের দাম বাড়িয়ে আমাদের শোষণ করছে। এই সুযোগ তারা নিচ্ছে। খুব সহজেই মানুষের মাঝে গুজবটি ছড়ায় যে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম এত বেশি কাজেই সারের দাম বাড়তেই পারে। চাষিরা মনে করেছেন, কয়েক দিন পর হয়তো সার পাওয়া যাবে না, তাই তারা প্যানিক বাই করেছে।
‘এমনিতেও সার্বক্ষণিক আমরা পরিস্থিতি মনিটর করছি। আমাদের মাঠ কর্মকর্তাদেরও নির্দেশ দেয়া আছে। তারপরও কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় ঘটে থাকে।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘ডিসেম্বর থেকে জুলাই পর্যন্ত ইউরিয়ার লক্ষ্যমাত্রা হলো ২৬ লাখ মেট্রিক টন। জুলাই মাসে আমাদের মজুত ছিল ৭ দশমিক ৬৯ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমানে আমাদের মজুত আছে ৮ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন। গত বছর এটি ছিল ৯ লাখ ৫৬ হাজার মেট্রিক টন। মজুত গত বছরের এই সময়ে যা ছিল তার চেয়ে কম।
‘এটা আমাদের বোরো মৌসুম। এ সময়েই সারের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। আমরা এটুকু বলতে পারি, আমরা সতর্ক ছিলাম। মজুত পরিস্থিতিতে মোটেই বিপর্যয় ঘটেনি। আমরা যেভাবে প্ল্যান করেছিলাম সেভাবেই এগোচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘টিএসপির চাহিদা আমরা নির্ধারণ করেছি ৭ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। বর্তমানে মজুত আছে ১ লাখ ৯২ হাজার মেট্রিক টন। ডিএপির চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন, মজুত আছে ৫ লাখ ৯৬ হাজার মেট্রিক টন। এমওপির চাহিদা ৭ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন, মজুত আছে ৩ লাখ ১২ হাজার মেট্রিক টন।
‘পাইপলাইনে যে সার আমাদের সরকারি ও বেসরকারি খাতে রয়েছে তাতে করে আমাদের কম হওয়ার কোনো কারণ নেই। পরিবহন নিয়ে কিছু সমস্যা ছিল, কিন্তু গত দুই তিন দিনে এটা অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। আমরা আশা করছি, রেলের সঙ্গে আমরা একটি সমঝোতায় গিয়েছি, তাতে মনে হয় না পরিবহনে কোনো সমস্যা হবে।’
দেশের সারের কোনো সংকট হবে না বলেও আশ্বস্ত করেন কৃষিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘পাইপলাইনে আমাদের টিএসপি আছে ১ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন, ডিএপি ৩ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন, এমওপি ২ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন। আমি এটুকু আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে চাই, আমাদের সার মজুতে তেমন কোনো সমস্যা নেই। পর্যাপ্ত সার মজুত রয়েছে।
‘পাইপলাইনে যেটা রয়েছে আগামী জুলাই পর্যন্ত আমাদের কাছে পর্যাপ্ত সারের মজুত থাকবে এবং বেশি থাকবে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বিপুল সারের ঘাটতি রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সার সংগ্রহ করতে পারেনি। আসামের সরকার পত্রপত্রিকার মাধ্যমে চাষিদের বলেছে, তারা যেন সার কম ব্যবহার করে এবং অর্গানিক সার যেন ব্যবহার করে।’
বৈঠকে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, ‘আমাদের কৃষকদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। পর্যাপ্ত সার মজুত আছে। অপপ্রচার বিভিন্নভাবে ছড়াচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি এগুলো তাৎক্ষণিক সমাধান করতে। আমরা এ জন্যই আজ বসেছি, যাতে সার নিয়ে আগের মতো কোনো ধরনের সংকট তৈরি না হয়।’
এ সময় সারের দামে কারসাজিতে জড়িত অসাধু ডিলারদের সদস্যপদ বাতিলের হুঁশিয়ারি দেন বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কামরুল আশরাফ খান। তিনি বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত সারের কোনো সংকট নেই। পর্যাপ্ত সার আমাদের কাছে মজুত আছে। প্রত্যেকবারই মৌসুমের সময় এই সারের দাম একটু এদিক-সেদিক হয়। এটা বড় কোনো সমস্যা নয়। পাশের দেশের তুলনায় আমাদের সার পরিস্থিতি ভালো।
‘আমাদের পরিবহনের টেন্ডারগুলো দেয়া বেশ আগে থেকে। অনেক কম দামে। জাহাজভাড়া প্রতি টনে ১৬৫ ডলার বেড়েছে, ট্রাকভাড়া বেড়েছে, তারপরও আমরা কম রেটে সার পরিবহন করছি। কোথাও পরিবহনের জন্য সারের ঘাটতি হয়নি। আমাদের যে সদস্যরা সারের দাম বৃদ্ধি করছে তাদের সদস্য পদ আমরা বাতিল করে দেব।’
বৈঠকে অন্যদের মধ্যে শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানা উপস্থিত ছিলেন।