মহান বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি থাকবে। সেই সঙ্গে থাকবে পুলিশ, এপিবিএন, এসএসএফ, পিজিআরের সমন্বয়ে চার স্তরের নিরাপত্তা-ব্যবস্থা।
জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১২টায় আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।
তিনি জানান, মহান বিজয় দিবস ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে সংসদ ভবনের আশপাশ এলাকার প্রতিটি বহুতল ভবনে পোশাকে ও সাদা পোশাকে নিযুক্ত থাকবেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা। আমন্ত্রিত অতিথিদের নিরাপত্তা তল্লাশির মধ্য দিয়ে প্রবেশ করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে যে বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে তা কঠোরভাবে পালন করা হবে।
এবারের নিরাপত্তা-ব্যবস্থার বিশেষত্ব কী- এমন প্রশ্নে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অন্যান্য নিরাপত্তা-ব্যবস্থা ইউনিফর্ম পুলিশভিত্তিক হয়। আর এটা ইন্টেলিজেন্স বেইজ নিরাপত্তা হচ্ছে। প্রতিটি কর্নারে আমাদের ইন্টেলিজেন্সের সদস্যরা কাজ করছেন। যাতে ন্যূনতম ব্যত্যয় না ঘটে।’
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতে গত এক সপ্তাহ ধরে যতগুলো ভেন্যু আছে, সবগুলোর আশপাশে সন্দেহভাজন আবাসিক হোটেল, বহুতল ভবন, মেস, বাসাবাড়িতে ব্লক রেইড করছি। যাতে করে আমাদের নিরাপত্তাবলয়ের মধ্যে আগে থেকেই কোনো সন্ত্রাসী-জঙ্গি ঢুকে থাকতে না পারে। বিশেষ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সোয়াট ও বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে।’
পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এবারের বিজয় উৎসব ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ১৫ ডিসেম্বর থেকে ১৭ তারিখ পর্যন্ত চলবে অনুষ্ঠান। এতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর ভারতের মহামান্য রাষ্ট্রপতি অংশ নেবেন।
তিনি বলেন, ‘জাতীয় স্মৃতিসৌধ থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধু ভবন, সংসদ ভবন চত্বরে মূলত অনুষ্ঠানগুলো আয়োজন করা হয়েছে। জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে প্যারেড হবে এবার আরও বর্ণিল ও জাকজমকপূর্ণ। হয়তো আমরা দু-একজন ভাগ্যবান ছাড়া আর কেউ এমন অনুষ্ঠান আর পাব না।’
নিরাপত্তা সম্পর্কে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘আমন্ত্রিত দেশি-বিদেশি ভিভিআইপি, ভিআইপিরা যেসব রুটে চলাচল করবেন, সেসব রুটে প্রটেকশনের পাশাপাশি, রুফটপ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। সংসদ ভবন এলাকার আশপাশে যতগুলো ভবন আছে সেখানে প্রত্যেক ফ্লোরে পুলিশ সদস্যরা মোতায়েন থাকবে। সংসদ ভবন এলাকায় ডাইভারসন করা হবে। সেটির প্ল্যান আমরা জানিয় দেব।
‘আর এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে প্রতিটি ভেন্যুতেই আমন্ত্রিত অতিথিরা যানবাহন ব্যবহার করে আসবেন। চারদিক থেকে যানবাহন আসবে। তাদের যানবাহন পার্ক করতে আমাদের বেগ পেতে হবে৷ তাই ভেন্যুর আশপাশে যানজট তৈরির সম্ভাবনা আছে। তাই আমন্ত্রিত অতিথিদের প্রতি অনুরোধ থাকবে সময় নিয়ে আসার জন্য।’
শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্যারেড স্কোয়ারে সাতটি দেশের ৩০২টি দেশের বিদেশি অতিথি অংশ নেবেন। সেখানেও আমাদের আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। এবারও সাধারণ দর্শকদের জন্য প্যারেড স্কোয়ারের ৩, ৪, ৫, ১৪, ১৫ ও ১৬ নং গেইট খোলা থাকবে। করোনার কারণে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে পরিপালন করা হবে। আর প্রত্যেককেই তল্লাশীর মধ্য দিয়ে ঢুকতে হবে।
‘আর শহরের বিভিন্ন জায়গায় রোড প্ল্যানের ম্যাপ বিল বোর্ডের মাধ্যমে প্রদর্শন করা হবে। যাতে করে কেউ না বুঝে হয়রানির মুখে না পড়েন। আমন্ত্রিত অতিথিদের প্রত্যেককে ধৈর্যসহকারে বিরক্ত না হয়ে অংশ নেয়ার অনুরোধ, কারণ আমাদের নিরাপত্তা আপনাদের জন্যই।’
নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা গ্রহণের নেপথ্যে কোনো হুমকি রয়েছে কি না, জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘এবারের অনুষ্ঠানে নিরাপত্তার বিশেষত্ব হলো, অন্যান্য অনুষ্ঠানে ইউনিফর্ম পুলিশভিত্তিক, তবে এখানে পুরোটাই ইনটেলিজেন্স নির্ভর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রতিটা কর্নারে আমাদের গোয়েন্দা সদস্যরা কাজ করছে৷ যাতে ন্যুনতম কোনো ব্যত্যয় না ঘটে।’
এই আয়োজন ঘিরে কোনো ধরনের হুমকি আছে কি-না, জানতে চাইলে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘স্পেসিফিক কোনো হুমকি নেই। গ্লোবাল সিচুয়েশন ও দেশীয় আভ্যন্তরীণ বিভিন্ন ইস্যু মাথায় রেখেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’
জঙ্গি তৎপরতার বিষয়টি নিরাপত্তা ব্যবস্থায় মাথায় রাখা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘জঙ্গি তৎপরতার ব্যাপারে কখনও নিশ্চিতভাবে বলতে পারি না যে, বলতে পারি না যে আমরা নিরাপদ আছি। কারণ জঙ্গিরা সবসময় তৎপর থাকে। সুযোগ পেলেই তারা ছোবল মারার চেষ্টা করে সেটিই নিরাপত্তা প্ল্যানে রাখা হয়েছে।’
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এর আগে মোদির আগমনকে ঘিরে বেশ বিশৃঙ্খলা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা হয়েছে। এবার সেরকম কিছু ঘটার ব্যাপারে কোনো তথ্য রয়েছে কি না, এমন প্রশ্ন রাখা হয় ডিএমপি কমিশনারের কাছে।
জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য নাই। আমরা আশা করছি নিরাপদেই অনুষ্ঠানটা হবে এবং খুব সম্মান-মর্যাদার সঙ্গে ভারতীয় মহামান্য রাষ্ট্রপতি আমাদের জাতীয় উৎসবে অংশ নেবেন। যদি আপনাদের (সাংবাদিক) কাছে তথ্য থাকে জানাবেন।’