প্রতিদিন সন্ধ্যা হলেই নাজিম মামার দোকানের ডিমের বাহারি খাবারের গন্ধে ভরে ওঠে সান্তাহার রেলস্টেশন এলাকা। সময় যত গড়ায় বাবা ও দুই ছেলের ডিমের দোকানে ভিড় তত বাড়ে।
অনেক সময় বসার জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়েই অপেক্ষা করেন ক্রেতারা। দীর্ঘ সময় অপেক্ষাতেও বিরক্ত হন না কেউ।
বগুড়ার আদমদিঘী উপজেলার সান্তাহার রেলস্টেশনের পাশের ফুটপাতে নাজিম উদ্দিনের ছোট্ট দোকান। ৪০ বছর ধরে তিনি ডিমের তৈরি বিভিন্ন খাবার বিক্রি করেন। তার সঙ্গে যোগ দিয়েছে দুই ছেলে জিল্লুর রহমান ও জুলফিকার রহমান।
এই দোকানের নির্দিষ্ট কোনো নাম নেই। স্থানীয়দের কাছে এটি নাজিম মামার দোকান বলেই পরিচিত।
নাজিমের দোকানে ডিম ভুনা, ডিম পোচ, ডিম ভাজি, ডিম পিজ্জা, বউ সোহাগী, বউ পিঠা, সূর্যমুখী, রুটি কাবাবসহ ১০ থেকে ১৫ রকমের খাবার পাওয়া যায়। এগুলো তৈরি করা হয় হাঁস, মুরগি ও কোয়েলের ডিম দিয়ে।
সান্তাহার পৌরসভার চা বাগান এলাকার সাগর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখানে ডিম দিয়ে তৈরি নানা পদের খাবারের দোকান একটিই। মাঝেমধ্যেই বাড়ির লোকদের নিয়ে এসে এখানে খাই। অনেক সময় বাড়িতে আত্মীয়স্বজন এলে তাদেরও নিয়ে আসি।
‘নাজিম মামার দোকানের সবকিছুই ডিম দিয়ে তৈরি। যে একবার এই দোকানের ডিমের খাবার খাবে, আমার মনে হয় সে আর ভুলতে পারবে না। সুযোগ পেলেই আবার আসবে এই খাবারগুলোর স্বাদ নিতে।’
স্থানীয় বেলাল হোসেন বলেন, ‘১০ থেকে ১২ বছর আগে এখানে এত রকম খাবার তৈরি হতো না। শুধু ডিম সিদ্ধ আর পেঁয়াজ-মরিচ দিয়ে ভাজা ডিম পাওয়া যেত। এখন তো কত রকমের খাবার। সন্ধ্যায় সময় পেলেই এখানে খেতে চলে আসি।’
নাজিমের দোকানে খাবারের দাম শুরু ১৫ টাকা থেকে। সর্বোচ্চ দাম ডিম ভুনার, ৫০ টাকা। শুধু যে স্থানীয়রাই এখানে খেতে আসেন, তা নয়। বগুড়া সদর, জয়পুরহাটের আক্কেলপুর ও নওগাঁ থেকেও অনেকেই আসেন ডিমের খাবার খেতে।
বগুড়া শহরের কলোনি এলাকা থেকে নাজিম উদ্দিনের দোকানের ডিমের খাবার খেতে এসেছেন সাদিক আল সাদ।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সান্তাহারে আমার কয়েকজন বন্ধুর বাড়ি। তাদের মুখে এই ডিমের তৈরি খাবারের কথা অনেক শুনেছি। আজকে নিজেই খেতে চলে এসেছি।
‘বউ পিঠা, সূর্যমুখী আর রুটি কাবাব খেয়েছি। কী যে মজা! বলে বোঝাতে পারব না। ভাবছি সময় পেলেই মাঝেমধ্যে চলে আসব নাজিম মামার দোকানে।’
নাজিমের বড় ছেলে জিল্লুর বলেন, ‘২০ বছর ধরে আমি আর আমার ভাই বাবার সঙ্গে কাজ করছি। আমাদের দোকানে কোয়েল, হাঁস আর মুরগির ডিম দিয়ে খাবার তৈরি করা হয়। প্রতিদিন প্রায় গড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার ডিম লাগে। শীতের দিন দোকানের বিক্রি বেড়ে যায়।
‘সাধারণত তিন থেকে চার শ মানুষ প্রতিদিন আমাদের দোকানে আসেন। খরচ বাদ দিয়ে দৈনিক ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার মতো লাভ হয়। কোনো কোনো দিন তার চেয়েও বেশি হয়।’
এই দোকান করেই জীবনে সচ্ছলতা এনেছেন নাজিম। তিনি বলেন, ‘প্রায় ৪০ বছর ধরে ব্যবসা করছি। এই দোকান দিয়েই আমার সংসার চলে। আমি গরিব মানুষ। তেমন জমিজমাও ছিল না। এখন আল্লাহর রহমতে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে। নিজের বাড়ি আছে, চাষাবাদের জন্য জমি কিনেছি।
‘আমরা তিন বাপ-বেটা মিলে এখন দোকান চালাই। কয়েক বছর আগে দুই ছেলেরই বিয়ে দিয়েছি। পরিবার নিয়ে সুখে আছি।’