আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের কাচের বাক্সে সাজানো স্মৃতিচিহ্নগুলোর মধ্যে একটি সাহিত্য পত্রিকার সামনে এসে থেমে যেতে হয়। পত্রিকাটি নাম ‘শিলালিপি’। সাহিত্য সংকলন নিয়ে ‘শিলালিপি’র দ্বিতীয় সংখ্যাটি প্রকাশ পেয়েছিল ১৯৭০ সালের মার্চ মাসে।
কবিতা, গল্প আর প্রবন্ধ দিয়ে সাজানো হয়েছিল পত্রিকাটির সেই সংখ্যা। কবিতা লিখেছিলেন আহসান হাবীব, শামসুর রাহমান, নূরুননেসা চৌধুরী, নির্মলেন্দু গুণ, শহীদুল্লা কায়সার ও সেলিনা পারভীন।
গল্প লিখেছেন বকর আহমেদ, সুনন্দা কবির, আহমদ রফিক, মুর্তজা বশীর, কুদরতুল্লাহ শাহ আর প্রবন্ধ লিখেছিলেন মুনীর চৌধুরী, জগলুল আহমদ চৌধুরী ও জেবুন্নিসা ইসলাম।
এই প্রচ্ছদটি জাদুঘরে দিয়েছিলেন সেলিনা পারভীনের ছেলে সুমন জাহিদ।
১৯৬৯ সাল থেকে এটির প্রকাশনা শুরু হয়েছিল। দেশের প্রথম সারির লেখক ও বুদ্ধিজীবীরা লিখতেন এই পত্রিকায়। লেখা জোগাড়, সম্পাদনার কাজ একাই করতেন সেলিনা পারভীন।
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বলিষ্ঠ অবস্থান নেয়ার কারণে পাকিস্তানি বাহিনীর চক্ষুশূল হয়ে ওঠে এই পত্রিকা আর তার সম্পাদক। একসময় এটি নিষিদ্ধ করে পাকিস্তান সরকার।
শিলালিপিতে লেখা ও সাপ্তাহিক ললনাতে চাকরির সুবাধে সেলিনা পারভীনের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের।
সেই দিনগুলোর স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘শিলালিপির ১৪/১৫টি সংখ্যা বের করেছিলেন সেলিনা পারভীন। একটি সংখ্যায় আমিও গল্প লিখেছিলাম। আমরা একই সঙ্গে সাপ্তাহিক ললনাতে চাকরি করতাম। আমি ছিলাম অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর, তিনি ছিলেন কমার্শিয়াল এডিটর, মানে বিজ্ঞাপনের বিষয়টি তিনি দেখতেন।’
সাহিত্য চর্চা, লেখালেখি নিয়ে নিজের আড্ডার কথাও জানালেন শাহরিয়ার কবির। তিনি বলেন, ‘সেলিনা পারভীনসহ আমরা আড্ডা দিতাম ললনার জেনারেল ম্যানেজার আখতার ভাইয়ের পুরানা পল্টনের বাসায়। অনেক স্মৃতি আমাদের... আবার একই জেলায় বাড়ি আমাদের।’
শিলালিপিতে লেখা নেয়ার জন্য মুনীর চৌধুরীসহ অনেকের সঙ্গেই সেলিনা পারভীনের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন শাহরিয়ার কবির। তিনি জানান, শিলালিপি নিয়মিত বের করতে পারতেন না সেলিনা পারভীন। তবে খুবই চেষ্টা করতেন বের করার জন্য। এর টুকটাক বিজ্ঞাপনও জোগাড় করতেন তিনি।
সেলিনা পারভীনকে ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর পাকিস্তানের দোসর আলবদর বাহিনী তার সিদ্ধেশ্বরীর বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়।
১৭ ডিসেম্বর মিরপুর বধ্যভূমিতে তার ক্ষতবিক্ষত দেহ শনাক্ত করেন জগন্নাথ কলেজের বাংলার অধ্যাপিকা হামিদা রহমান।
শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘ক্ষতবিক্ষত চোখে গামছা বাঁধা যে ছবিটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, বধ্যভূমিতে সেভাবেই পাওয়া গিয়েছিল তাকে।’
১৮ ডিসেম্বর সেলিনা পারভীনের মরদেহ আজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।