শীত ও কুয়াশা উপেক্ষা করে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাজধানীর মিরপুরে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে সর্বস্তরের মানুষের ঢল নেমেছে। যথাযথ মর্যাদায় স্মরণ করা হচ্ছে জাতির বরেণ্য সন্তানদের।
মঙ্গলবার সকালে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এরপর শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।
বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে স্মৃতিসৌধে ভিড় জমান আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদল এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয় নিশ্চিত হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে এ দেশের দোসর আলবদরের সহযোগিতায় বুদ্ধিজীবীদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী।
স্বাধীনতা পেলেও বাঙালি যাতে কোনো দিন মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে, সে জন্য পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয় দেশের সূর্যসন্তানদের।
আলবদর যাদের হত্যা করে, সেই তালিকায় ছিলেন মুনীর চৌধুরী, শহীদুল্লা কায়সার, ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, সিরাজুদ্দীন হোসেন, নিজামুদ্দীন আহমদ, গিয়াসউদ্দিন আহমদ, ডা. ফজলে রাব্বী, ডা. আলীম চৌধুরী, সেলিনা পারভীনসহ আরও অনেকে।
তাদের স্মরণে প্রতিবছর ১৪ ডিসেম্বর পালন করা হয় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আলাদা বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাষ্ট্রপতি তার দেয়া বাণীতে বুদ্ধিজীবীদের দেশ ও জাতির উন্নয়ন ও অগ্রগতির রূপকার হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
তিনি বলেন, ‘তাদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা, সৃজনশীল কর্মকাণ্ড, উদার ও গণতান্ত্রিক চিন্তাচেতনা জাতীয় অগ্রগতির সহায়ক। জাতির বিবেক হিসেবে খ্যাত আমাদের বুদ্ধিজীবীরা তাদের ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরি, যুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারকে পরামর্শ প্রদানসহ বুদ্ধিবৃত্তিক চেতনা দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধকে সাফল্যের পথে এগিয়ে নিতে অসামান্য অবদান রাখেন।
‘বাঙালি জাতি এখনও তার সূর্যসন্তানদের হারানোর শোক হৃদয়ে ধারণ করে চলেছে’ উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, ‘শহীদ বুদ্ধিজীবীদের রেখে যাওয়া আদর্শ ও পথকে অনুসরণ করে অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়তে পারলেই তাদের আত্মত্যাগ সার্থক হবে।’
দল-মত-নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একাত্তরের ঘাতক, মানবতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী জামায়াত-মৌলবাদীচক্রের রাষ্ট্র ও গণতন্ত্রবিরোধী সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ জাতি চিরদিন গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে বলে নিজের দেয়া বাণীতে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে আওয়ামী লীগ সরকার বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় এনেছে। বিচারের রায় কার্যকর করা হচ্ছে। এসব রায় বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মা শান্তি পাবে। দেশ ও জাতি কলঙ্কমুক্ত হবে।’