বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শীত এলেই ভাগ্য খোলে ওদের

  •    
  • ১৪ ডিসেম্বর, ২০২১ ০৮:৩৩

জেলা শহরের শতাধিক স্থানে শীত এলেই যেন ভাগ্য খুলে যায় এসব মৌসুমি পিঠা বিক্রেতার। প্রতিদিন পিঠা বিক্রি থেকে আয় হয় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। পিঠা বিক্রেতাদের প্রত্যেকেই নিম্ন আয়ের মানুষ। আর্থিকভাবে খুবই অসচ্ছল। শীত এলেই তারা স্বল্পপুঁজি নিয়ে বাড়তি আয়ের আশায় পিঠা বিক্রি করেন। শীতের তিন থেকে চার মাস এই পিঠা বিক্রিই তাদের জীবিকা।

জ্বলছে সারি সারি মাটির চুলা। প্রতিটি চুলার ওপরে বসানো হয়েছে ‘খোলা’। একটু পর পর খোলার ঢাকনা তুলে ঢেলে দেয়া হচ্ছে চালের গুঁড়ার ‘গোলা’। কয়েক মিনিট রেখেই গরম গরম চিতই পিঠা নামিয়ে ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে ক্রেতাদের হাতে। প্লেটে পিঠার পাশেই দেয়া হচ্ছে পছন্দমতো সরিষা ভর্তা, ধনেপাতা ভর্তা, মরিচ ভর্তা ও চিড়িং মাছের শুঁটকি ভর্তা। এমন দৃশ্য মাদারীপুর শহরের পুরাতন জেলখানার পূর্ব পাশে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলা শহরের শতাধিক স্থানে শীত এলেই যেন ভাগ্য খুলে যায় এসব মৌসুমি পিঠা বিক্রেতার। প্রতিদিন পিঠা বিক্রি থেকে আয় হয় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। পিঠা বিক্রেতাদের প্রত্যেকেই নিম্ন আয়ের মানুষ। আর্থিকভাবে খুবই অসচ্ছল। শীত এলেই তারা স্বল্পপুঁজি নিয়ে বাড়তি আয়ের আশায় পিঠা বিক্রি করেন। শীতের তিন থেকে চার মাস এই পিঠা বিক্রিই তাদের জীবিকা।

বিকেল থেকেই শুরু হয় পিঠা বানানোর ধুম।

একাধিক পিঠা বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শীতের রাতে গরম গরম পিঠার সঙ্গে পরিচিত মাদারীপুরের প্রতিটি স্থানীয় মানুষ। এখানে চিতই পিঠা খুবই জনপ্রিয়। সন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পিঠাপ্রেমীরা ভিড় জমান এই ফুটপাতে বসা পিঠার দোকানে। লাইন দিয়ে পিঠা খান তারা। কেউ কেউ খেয়ে আবার বাসার লোকজনের জন্যও নিয়ে যান।

মাদারীপুরের শকুনি লেকের চারপাশেই রয়েছে প্রায় ২০ থেকে ২৫টি পিঠার দোকান। শুধু শীত মৌসুমেই দোকানগুলো দেখা যায়। এ ছাড়া শহরের কলেজ রোড, চৌরাস্তা, পুরানবাজার, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, খাদগী, মস্তফাপুর, চরমুগরিয়াসহ নানা স্থানে ভ্রাম্যমাণ পিঠার দোকান রয়েছে। এখানে প্রতিটি চিতই পিঠা বিক্রি হয় ৫ টাকায়। বিকেল থেকে শুরু করে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে পিঠা বিক্রি।

মাদারীপুর শহরের ডিসি ব্রিজ এলাকার রাসেল তালুকদার বলেন, ‘বাসায় পিঠা তৈরি করা এখন অনেক কষ্টের। তাই বাজার থেকে পিঠা কিনে বাসায় নিয়ে যাচ্ছি। বাড়িতে বানাতে যে কষ্ট আর আর্থিক খরচ, তার চেয়ে এটাই ভালো।’

আরেক ক্রেতা হাফিজ মিয়া বলেন, ‘সন্ধ্যার পর হালকা কুয়াশায় প্রচণ্ড ঠান্ডা অনুভূত হয়। তখন ভ্রাম্যমাণ পিঠার দোকান থেকে আমি পিঠা খাই। চিতই পিঠা আমার খুব পছন্দের। শীতের ভেতর উনুনের পাশে দাঁড়িয়ে পিঠা খাওয়ার মজাই আলাদা।’

পিঠা বিক্রেতা আলতাব হোসেন বলেন, ‘শীতের মৌসুম এলেই আমি পিঠা বিক্রি করি। অন্য মৌসুমে দিনমজুরের কাজ করি। সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ক্রেতা থাকে। গত বছরের চাইতে এবার চাল, লাকড়ির দাম অনেক বেশি, তাই আগের মতো তেমন লাভ হচ্ছে না।’

সন্ধ্যা থেকেই পিঠার দোকানে ভিড় বাড়ে ক্রেতাদের। অনেকেই আবার পিঠা নিয়ে যান বাসায়।

পিঠা বিক্রেতা শরীফা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী একজন দিনমজুর। সংসারের কিছুটা হাল ধরতে আমি পিঠা বিক্রি করি। তা ছাড়া শীতে আমার স্বামীর তেমন কাজ থাকে না। তাই উনিও মাঝেমধ্যে পিঠা বিক্রিতে সাহায্য করেন। তবে এখানে মাঝেমধ্যে স্থানীয় বখাটেরা পিঠা খেয়ে টাকা দেয় না। পুলিশকে বললেও কাজ হয় না।’

এ ব্যাপারে মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘স্বল্প আয়ের এসব মানুষের শীত এলে ভাগ্য খোলে। তাই তারা যাতে নির্বিঘ্নে ব্যবসা করতে পারে, সে বিষয়ে সবার সহযোগিতা করা উচিত। কেউ বাধা দিলে কাজটা অমানবিক হবে।’

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম মিঞা বলেন, ‘কিছু স্থানে উন্মুক্তভাবে পিঠা তৈরি করতে দেখা যায়। তবে অনেক সময় তাদের অসাবধানতায় বড় দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। তাই তাদের উচিত নির্দিষ্ট স্থানে পিঠা তৈরি করা। তাদের কেউ বিরক্ত করার অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর