একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যায় দণ্ডিত দুই আল-বদর নেতাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবে বাংলাদেশ। পলাতক এই দুই অপরাধীর মধ্যে চৌধুরী মুঈনুদ্দিন বর্তমানে অবস্থান করছেন যুক্তরাজ্যে আর আশরাফুজ্জামান খান আছেন যুক্তরাষ্ট্রে।
একাত্তরের ডিসেম্বরে মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র প্রতিরোধের মুখে যখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পরাজয় আসন্ন, সেই মুহূর্তে ইতিহাসের অন্যতম নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায় তাদের দোসর রাজাকার, আল-বদর ও আল-শামস। বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করতে বেছে বেছে হত্যা করা হয় বুদ্ধিজীবীদের।
এ ঘটনার এত বছর পরও হত্যাকারীরা বহালতবিয়্যতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ জন শিক্ষক, ৬ জন সাংবাদিক ও ৩ জন চিকিৎসকসহ ১৮ বুদ্ধিজীবীকে অপহরণের পর হত্যার অভিযোগে চৌধুরী মুঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান খানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের রায় দেয়।
জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের এই দুই নেতা পলাতক থাকায় তাদের দণ্ড এখনও কার্যকর করা যায়নি। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে ফাঁসির দণ্ড পাওয়া আসামিদের ফেরত না পাঠানোর বিধানের কারণে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়াও শেষ করা যায়নি।
বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী এই দুজনের বিরুদ্ধে দেয়া রায়ে তৎকালীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান ওবায়দুল হাসান পর্যবেক্ষণে বলেছিলেন, ‘আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মুঈনুদ্দীনের সর্বোচ্চ শাস্তির আদেশ না দিলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে না।
রায়ে বলা হয়, ‘আশরাফুজ্জামান খান ছিলেন বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের চিফ এক্সিকিউটর। আর চৌধুরী মুঈনুদ্দিন ছিলেন সেই পরিকল্পনার অপারেশন ইন-চার্জ।’
বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী এই দুই পলাতকের রায় কার্যকরের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘কয়েকদিন আগে ব্রিটিশ হাই কমিশনারের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে। সেখানে আমি এই দুজনকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করেছি।
‘তিনি আমাকে বলেছেন, আমরা যেন ফরমালি (আনুষ্ঠানিক) এই দাবি করি। আমি তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য ফরমালি দাবি করব।’
চৌধুরী মুঈনুদ্দিনের বাড়ি ফেনীর দাগনভুঞা থানার চানপুর গ্রামে, আর আশরাফুজ্জামান খানের বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের চিলেরপাড় গ্রামে।
এ দুই বদর নেতা ও তাদের সহযোগীদের হাতে নিহত বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও নাট্যকার মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, ড. সিরাজুল হক খান, ড. আবুল খায়ের, ড. ফয়জুল মহিউদ্দিন, অধ্যাপক রাশিদুল হাসান, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, ড. সন্তোষ ভট্টাচার্য।
এ ছাড়া সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হোসেন, সৈয়দ নাজমুল হক, এ এন এম গোলাম মুস্তাফা, নাজিম উদ্দিন আহমেদ, সেলিনা পারভীন, শহীদুল্লাহ কায়সার; চিকিৎসক মো. মর্তুজা, মো. ফজলে রাব্বি ও আলিম চৌধুরীকে হত্যা ও গুমের অভিযোগও প্রমাণিত হয় তাদের বিরুদ্ধে।