বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মামলার সুরাহা ৫৭ বছরে, জমি ভোগ করবে তৃতীয় প্রজন্ম

  •    
  • ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১ ২৩:০৬

১৯৫০ সালে দাঙ্গা হলে ঢাকার নবাবগঞ্জ থেকে যশোরে চলে যান নিবারণ প্রামাণিক। তিনি ছিলেন কৃষক। তিনি ১০ একরের বেশি সম্পত্তি নিজের ভাগনেকে দেখভালের দায়িত্ব দিয়ে যান। কিন্তু দুই বছর পর ফিরে আসার পর আর জমির দখল পাননি। এরপর মামলা করেন ১৯৬৪ সালে। সেই মামলা নিষ্পত্তি হতে হতে নিবারণ নিজে এবং তার দুই ছেলে যথাক্রমে ৯০ ও ৯২ বছর বয়সে মারা গেছেন।

মামলাটি নিষ্পত্তিতে সময় লাগল প্রায় পাঁচ যুগ।

১৯৫০ সালে ১০ একরের বেশি সম্পত্তি নিজের ভাগনেকে দেখভালের দায়িত্ব দিয়ে যান মামা নিবারণ প্রামাণিক। দুই বছর পর ফিরে সেই সম্পত্তি ফেরত চাইলে দিতে অস্বীকৃতি জানান ভাগনে গৌর চন্দ্র মণ্ডল।

এ ঘটনায় ১৯৬৪ সালে মামলা করে দেন নিবারণ। সেই মামলায় হাইকোর্ট পার করতে দুটি প্রজন্ম চলে গেছে পৃথিবী থেকে। নিবারণ তো বটেই, তার দুই সন্তানও মারা গেছেন।

হাইকোর্ট নিবারণের করা সেই মামলায় বাদীর পক্ষে আদেশ দেয়ায় এখন তার উত্তরাধিকার হিসেবে নাতি-নাতনিরা সেই সম্পত্তি পাবেন।

মঙ্গলবার বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমানের হাইকোর্টের একক বেঞ্চ দেওয়ানি রিভিশনের শুনানি শেষে এই আদেশ দেয়।

তবে নিবারণের নাতি-নাতনি কারা, তাদের নাম এখনও জানা যায়নি।

আদালতের বাদীপক্ষে আইনজীবী ছিলেন চঞ্চল কুমার চৌধুরী। তিনি নিউজবাংলাকে জানান, ১৯৫০ সালে দাঙ্গা হলে ঢাকার নবাবগঞ্জ থেকে যশোরে চলে যান নিবারণ প্রামাণিক। তিনি ছিলেন কৃষক।

নবাবগঞ্জ ছাড়ার সময় ১০ একরের বেশি সম্পত্তি নিজের ভাগনেকে দেখভালের দায়িত্ব দিয়ে যান। দুই বছর পর ফিরে এসে সম্পত্তি আর ফেরত পাননি, পরে আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি।

বিচারিক আদালতে করা ওই মামলায় সম্পত্তি যাতে কেউ বিক্রি করতে না পারে, সে জন্য অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছিল। মামলার শুনানি নিয়ে ১৯৮৩ সালে আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেয়।

তার পরও নিবারণের ভাগনে গৌর চন্দ্র মণ্ডল ১৯৯১ সালে বিনিময় দলিলের মাধ্যমে ৯৮ শতাংশ জমি আবদুল জলিল নামের এক ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর করেন।

এর দুই বছর পর ১৯৯৩ সালে মারা যান নিবারণ।

১৯৯৯ সালের ৩১ জানুয়ারি তৎকালীন সাবজজ আদালত নিবারণের পক্ষে রায় দেয়। তিনি মারা যাওয়ায় দুই ছেলে লক্ষ্মণ প্রামাণিক ও পরেশ প্রামাণিক মামলায় বাদী হিসেবে পক্ষভুক্ত হন।

সে সময় বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে জজ আদালতে আপিল করেন আবদুল জলিল। এ আপিল আংশিক গ্রহণ করে ২০০০ সালের ২৭ এপ্রিল রায় দেয় আদালত।

রায় অনুসারে ৪৯ শতাংশ সম্পত্তির স্বত্ব পান নিরাবণের ভাগনে গৌর চন্দ্র মণ্ডল। অর্থাৎ এই ৪৯ শতাংশ তিনি বিনিময় করতে পারেন।

এই রায়ের বিরুদ্ধে লক্ষ্মণ, পরেশ ও আব্দুল জলিল দুই পক্ষই ২০০০ সালে হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেয়।

২০১৪ সালের ৩ জুন হাইকোর্ট রুল খারিজ করে রায় দেয়। ফলে জজ আদালতের সিদ্ধান্ত বহাল থাকে।

এরপর এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালে আপিল বিভাগে আবেদন করেন লক্ষ্মণ প্রামাণিক ও পরেশ প্রামাণিক। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের ২৩ অক্টোবর আপিল বিভাগ মামলাটি হাইকোর্টে আবার শুনানির জন্য পাঠায়।

পরে বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমানের একক হাইকোর্ট বেঞ্চে মামলাটির শুনানি হয়।

লক্ষ্মণ-পরেশদের পক্ষে হাইকোর্টে মামলা পরিচালনার জন্য ২০১৮ সালে আইনজীবী চঞ্চল কুমার বিশ্বাসকে দায়িত্ব দেয় সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি।

আইনজীবী চঞ্চল কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘মামলাটি আরও আগেই শেষ হয়ে যেত। কিন্তু একে একে মামলার বাদী এরপর তার সন্তান মারা যাওয়ায় পরবর্তী উত্তরাধিকারকে পক্ষভুক্ত করতে সময় লেগে যায়।’

তিনি জানান, নিবারণ প্রামাণিকের ছেলে পরেশ প্রামাণিক থাকতেন নবাবগঞ্জের নয়নশ্রী ইউনিয়নের শৈল্যা গ্রামের নিজ বাড়িতে।

তার বড় ভাই লক্ষ্মণ ৯২ বছর বয়সে গত বছরের সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে মারা যান। এরপর মারা যান পরেশ প্রামাণিকও।

এ বিভাগের আরো খবর