মানিকগঞ্জে টাকা না পেয়ে প্রসূতি মায়ের পেটের ভেতর টিউমার রেখে সেলাই করার ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ রুমা আক্তার, মেডিক্যাল অফিসার তুষার হোসেন এবং সিভিল সার্জন অফিসের সিনিয়র মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট রফিকুল ইসলাম।
সোমবার বেলা ২টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. লুৎফর রহমান।
তিনি বলেন, ‘মৌখিকভাবে ও গণমাধ্যমে বিষয়টি জানার পর তিন সদস্যদের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত অনুযায়ী ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ডাক্তারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হবে।’
অভিযোগ উঠেছে, প্রসব বেদনা উঠলে শুক্রবার রাতে মানিকগঞ্জ শহরের হেলথ কেয়ার মেডিক্যাল সেন্টারে মেয়েকে ভর্তি করেন মোহাম্মদ মাসুদ মিয়া। পরে ক্লিনিকের ডাক্তারের পরামর্শে শুক্রবার রাত ২টার দিকে অন্তঃসত্ত্বা আফরোজা আক্তারের অপারেশন করেন শহরের ডক্টরস ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. খায়রুল হাসান এবং ডা. আশিকুর রহমান।
স্বজনরা জানান, সিজারের মাধ্যমে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন আফরোজা। তবে সন্তান প্রসবের পর অপারেশনের টেবিলে পেটের ভেতর একটি টিউমার দেখতে পান চিকিৎসক। তিনি প্রসূতির বাবাকে ওই টিউমার অপারেশন করাতে বলেন। পরে মেয়ের টিউমার অপারেশন করতে অনুরোধ করলে চিকিৎসক ৩ হাজার টাকা দাবি করেন।
অভিযোগ উঠেছে, টাকা দিতে না পারায় অপারেশন করা হবে না বলে জানান চিকিৎসক। মেয়ের টিউমার অপারেশনের জন্য হেলথ কেয়ার মেডিক্যাল সেন্টার ক্লিনিকের ম্যানেজার মো. হাবিবুর রহমানকে অনুরোধ করেন প্রসূতির বাবা মাসুদ। তাতেও কোনো কাজ হয়নি। পেটের ভেতর টিউমার রেখেই সেলাই করে চলে যান চিকিৎসক।
প্রসূতি আফরোজা আক্তারের অভিযোগ, অপারেশন টেবিলে তার গায়ে হাত তুলেছেন এক নার্স। খারাপ আচরণ করেছেন চিকিৎসকরাও। অপারেশনের পরও পেট সেলাই না করে রেখেছিল প্রায় ১ ঘণ্টা। এরপর টিউমার রেখেই পেট সেলাই করে চলে যান।
তিনি বলেন, ‘পেটে অসহ্য ব্যথা করতেছে। শুয়ে-বসে থাকতে খুব কষ্ট হচ্ছে। চিকিৎসক আমার সঙ্গে এমন করল কেন? আমরা তাগো কী ক্ষতি করছিলাম? একবার সন্তানের জন্য পেৎ কাটতে হইল, আবার টিউমারের জন্য কাটতে হইব। মনে হয় ডাক্তাররা আমারে মাইরা ফালাইব। অপারেশনের মানুষ তো এমনেই অর্ধেক মরা।’
বাবা মাসুদ মিয়া বলেন, ‘অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার আড়াই মাসের মধ্যে আল্ট্রা করে আফরোজা। তখন তার পেটে টিউমার ধরা পড়ে। সে টিউমারের জন্য ওষুধ খেতে শুরু করে। সময়-সুযোগমতো আপারেশন করাতে বলেছিল ডাক্তার।’
তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে শুক্রবার রাতে হঠাৎ মেয়ের প্রসব বেদনা উঠলে তাকে ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সিজারের পর টিউমার অপারেশনের ডাক্তার আর ক্লিনিকের লোককে অনুরোধ করেও অপারেশন করাইতে পারলাম না। আমি বলছিলাম সকালে টাকা দিয়া দিমু, তাও করল না। অপারেশন করতে তাগো কী ক্ষতি হইত?’
আফরোজার স্বামী নাঈম ইসলাম বলেন, ‘আমি বেসরকারি ওষুধ কোম্পানি ইনসেপটায় শ্রমিকের কাজ করি। সব সময় হাতে টাকা থাকে না। স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় কষ্ট করে বিকাশে কিছু টাকা রাখছিলাম। সেই টাকাও কাজে লাগল না।’
তিনি বলেন, ‘টিউমার অপারেশনের জন্য আমি আর আমার শ্বশুর অনেক অনুরোধ করছি। কেউ আমাগো অনুরোধ রাখল না। আমার স্ত্রী এখন পেট ব্যথায় মরতেছে। ব্যথায় কান্না করতেছে। আমার স্ত্রীর কিছু হইলে ক্লিনিক আর ডাক্তারের নামে মামলা দিমু।’
হেলথ কেয়ার মেডিক্যাল সেন্টার ক্লিনিকের ম্যানেজার মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের কোনো অবহেলা নেই। আমরা তো ডাক্তারকে ফোন দিয়ে আনছি এবং অপারেশন করাইছি। টিউমার অপারেশনের জন্য ডাক্তারকে টাকাও দিয়েছি। ডাক্তার যদি অপারেশন না করে, তা হলে আমাদের কী করার।’
অভিযুক্ত ডাক্তার খায়রুল হাসান বলেন, ‘একটা অপারেশনের কথা ছিল। তাই একটা করছি। পরে টিউমারের জন্য আলাদা টাকার কথা বলি। টাকা দিতে না পারায় তাকে অপারেশন করানো হয় নাই। এ অপারেশন পরেও করাতে পারবে।’