বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

করোনার সংক্রমণ-মৃত্যু বাড়ছে আবার

  •    
  • ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১ ২১:১৫

গত এক সপ্তাহে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৮৮২ জনের শরীরে। আগের সপ্তাহে শনাক্ত হন ১ হাজার ৬৫৯ জন। সপ্তাহের ব্যবধানে শনাক্ত বেড়েছে ২২৩ জন। আগের সপ্তাহে মৃত্যু ছিল ২৩ জনের, সেটি বেড়ে হয়েছে ২৭ জন। ঠিক এক সপ্তাহ আগে পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছিল ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ, গত ২৪ ঘণ্টায় তা বেড়ে হয়েছে ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ।

পরিস্থিতি ‘নিয়ন্ত্রণে থাকলেও’ গত ৬ থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত এক সপ্তাহে আগের এক সপ্তাহের তুলনায় করোনায় শনাক্ত, মৃত্যু এবং পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার- তিনটিই বেড়েছে।

এই পরিস্থিতিতে করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকারের জাতীয় পরামর্শক কমিটি বিষয়টি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এখনই সিদ্ধান্তে না এসে আরও এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করতে চান তারা।

এই সপ্তাহে আগের সপ্তাহের তুলনায় সংক্রমণ বেড়েছে ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ আর মৃত্যু বেড়েছে ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ। শনাক্তের হারও বেড়েছে সামান্য।

করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সরকারের পক্ষ থেকে বারবার মাস্ক পরা, টিকা নেয়ার পরামর্শ এবং সতর্ক থাকার আহ্বানের মধ্যে সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি সাপ্তাহিক পর্যালোচনায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লেনিন চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুই মাসেরও বেশি সময় দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে থাকায় মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে উদাসীনতা দেখা দিয়েছে। টিকা প্রয়োগেও গতি আনা সম্ভব হয়নি।’

এ ক্ষেত্রে সরকারেরও উদ্যোগী ভূমিকা চান তিনি। বলেন, ‘সাউথ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন দেশে শনাক্ত হয়েছে। তার পরও মহাদেশটি থেকে আসা ২৪০ জন দেশে ফেরার পর তাদের কোয়ারেন্টিনে রাখা যায়নি। সংক্রমণ যদি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়, তাহলে সরকারের উচিত হবে তাদের খুঁজে বের করা এবং যারা নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের যথাযথ আইসোলেশন নিশ্চিত করা।’

করোনা নিয়ন্ত্রণে গঠিত সরকারের পরামর্শ কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এক সপ্তাহ সংক্রমণ বাড়ার হার দেখে কারণ খোঁজা কঠিন। এ ব্যাপারে আমরা একটি গবেষণা করছি। আরও এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করে একটা সিদ্ধান্তে আসা যাবে।’

কত মৃত্যু, শনাক্ত কত

এই এক সপ্তাহে করোনাভাইরাসে দেশে মারা গেছেন মোট ২৭ জন। আগের সপ্তাহে ২৯ নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত মারা গিয়েছিলেন ২৩ জন। অর্থাৎ মৃত্যু বেড়েছে চারজন।

গত এক সপ্তাহে করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৮৮২ জন। আগের সপ্তাহে শনাক্ত হন ১ হাজার ৬৫৯ জন। সপ্তাহের ব্যবধানে শনাক্ত বেড়েছে ২২৩ জন।

তবে মৃত্যু ও শনাক্ত- দুটিই বাড়লেও পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার এখনও নিয়ন্ত্রণে।

সোমবার আগের ২৪ ঘণ্টার যে পরিসংখ্যান অধিদপ্তর থেকে পাঠানো হয়, তাতে জানানো হয়, শনাক্তের এই হার ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

ঠিক এক সপ্তাহ আগে গত ৬ ডিসেম্বর পরীক্ষার বিপরীতে করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হন ১ দশমিক ৪৪ জন। অর্থাৎ সামান্য হলেও শনাক্তের হারও বাড়ছে।

তবে গোটা সপ্তাহ হিসাব করলে ৫ থেকে ১২ ডিসেম্বর শনাক্তের হার ছিল ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। আগের সপ্তাহে তা ছিল ১ দশমিক ২৮ শতাংশ।

গত এক সপ্তাহে সারা দেশে করোনার সংক্রমণ জানতে নমুনা পরীক্ষা করা হয় মোট ১ লাখ ৩৮ হাজার ৫৯২ জন।

তার আগের সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষা করা হয় ১ লাখ ২৯ হাজার ৫৪৮টি। অর্থাৎ পরীক্ষাও বেড়েছে। মানুষের মধ্যে সংক্রমণের উপসর্গ আগের সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই

তবে সংক্রমণ, মৃত্যু ও শনাক্তের হার কিছুটা বাড়লেও এখনও তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই আছে।

নীতিমালা অনুযায়ী পরপর দুই সপ্তাহ পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ হার ৫ শতাংশের বেশি হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ধরে নেয়া যাবে। বাংলাদেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসে গত ৪ অক্টোবর। এরপর টানা ৯ সপ্তাহ তা ৫ শতাংশের নিচে রয়েছে।

গত বছরের মার্চে দেশে করোনার সংক্রমণ হওয়ার পর তা কমতে শুরু করে নভেম্বর-ডিসেম্বরে। পরে ফেব্রুয়ারিতে পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার নামে ৫ শতাংশের নিচে। টানা দুই সপ্তাহ এই হার থাকার পর ৩ ফেব্রুয়ারি নিশ্চিত হয় করোনা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। সেদিন টানা দুই দিন সংক্রমণ ৫ শতাংশের নিচে ছিল। সেদিন শনাক্তের হার ৩ শতাংশের নিচে নেমে আসে।

তবে মার্চের শেষে সংক্রমণ আবার বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে আসে দ্বিতীয় ঢেউ। এই ঢেউয়ে সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে থাকে। এক দিনে দুইশরও বেশি মৃত্যু হতে থাকে। তবে আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে সংক্রমণ কমতে থাকে। কমে আসে মৃত্যুও।

গত এক মাসে দুই দিন শূন্য মৃত্যু দেখেছে দেশ। একজন করে মারা গেছেন, এমন দিনও ছিল একাধিক দিন।

বাকি দিনগুলোয় দুই থেকে ছয়জনের মৃত্যুর তথ্যই বেশি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। হাতেগোনা দুই-এক দিন সাতজনের মৃত্যুর তথ্য জানানো হয়েছে।

গত এক সপ্তাহে এক দিন সর্বোচ্চ মৃত্যু ছিল ছয়জনের। এক দিন মারা যায়নি কেউ।

মৃতদের ৮১ শতাংশ টিকার বাইরে, উচ্চ রক্তচাপের রোগী বেশি

এই এক সপ্তাহে দেশে করোনায় যত মৃত্যু হয়েছে, তাদের পাঁচজনের চারজনই টিকা নেননি বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক পর্যালোচনায় উঠে এসেছে।

এই সময়ে যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ২২ জনই করোনা থেকে সুরক্ষার জন্য কোনো টিকা নেননি। অন্যদিকে পাঁচজন টিকা নিয়েছেন।

এই পাঁচজনের মধ্যে তিনজন একটি করে টিকা নিয়েছেন। দুজনের দুটি টিকাই নেয়া ছিল।

শুরু থেকেই জানা যাচ্ছে, করোনায় মৃতের বেশির ভাগই অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন। গত এক সপ্তাহেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

এই সময়ে মারা যাওয়া ২৭ জনের মধ্যে ১৮ জনেরই কো-মরবিডিটি হিসেবে পরিচিতি পাওয়া নানা রোগ ছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল উচ্চ রক্তচাপের রোগী। বাকিদের মধ্যে ডায়াবেটিস, কিডনিজনিত জটিলতা, বক্ষব্যাধি ও হৃদরোগ ছিল বেশি।

৫৫ দশমিক ৬ শতাংশ ছিলেন উচ্চ রক্তচাপের রোগী, ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ ছিলেন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ২২ দশমিক ২ শতাংশ হৃদরোগে ভুগছিলেন।

সংক্রমণ বেশি ঢাকা বিভাগে

করোনা সংক্রমণের শুরুর সময় ঢাকা বিভাগে বেশি সংক্রমণের যে চিত্র দেখা গিয়েছিল, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসার পর আবার সেই একই চিত্র দেখা যাচ্ছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ৩৮৫ জন। এর মধ্যে ৩৩৫ জনই ঢাকা বিভাগের, যা দিনের মোট শনাক্তের ৮৭ শতাংশের বেশি।

এই দিনে দেশের ৩৬টি জেলায় নতুন কোনো রোগী শনাক্ত হননি।

এ বিভাগের আরো খবর