জোড়া শিশু লাবিবা ও লামিসাকে আলাদা করার প্রথম চেষ্টা সফল হয়নি।
নির্ধারিত অস্ত্রোপচার সোমবার সকালে শুরু হলেও সাড়ে ৪ ঘণ্টা পর তা স্থগিত করা হয়।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে বিশেষ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাদের শরীরে দুটি সিলকন বল স্থাপন করা হয়েছে। ছয় থেকে আট সপ্তাহ পর্যবেক্ষণের পর তাদের আলাদা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন চিকিৎসকরা।
নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার যদুনাথপুর গ্রামের জোড়া শিশুর চিকিৎসার সব দায়িত্ব নিয়েছে ঢামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জটিল অস্ত্রোপচার করতে সাতটি বিভাগের ৩০ থেকে ৩৫ বিশেষজ্ঞকে নিয়ে গঠন করা হয়েছে বোর্ড।
হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. আশরাফ-উল হক কাজল এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আগে আমরা বলেছিলাম দুই বোনকে আলাদা করতে অপারেশনে ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা সময় লাগবে। কিন্তু সেটা আর হলো না। কারণ লামিসা নামে শিশুটির কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে।
‘দুজন যেন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারে, সে জন্য আজ ওদের শরীরে দুটি সিলিকন বল স্থাপন করা হয়েছে। এই বল টিস্যু তৈরিতে সহায়ক হবে। এখন তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হবে ছয় থেকে আট সপ্তাহ। এরপর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
ওই সময় উপস্থিত ছিলেন ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক, উপপরিচালক আশরাফুল আলম, শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক আইয়ুব আলী, অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের সুব্রত কুমার মণ্ডলসহ সংশ্লিষ্টরা।
লাবিবা ও লামিসাকে আলাদা করতে সোমবার সকাল ৮টায় অস্ত্রোপচার শুরু হয়, যা স্থগিত করা হয় দুপুর সাড়ে ১২টায়।
চিকিৎসকরা জানান, জোড়া লাগা শিশুদের আলাদা করার অস্ত্রোপচার খুবই ব্যয়বহুল। শিশুটির পরিবারের পক্ষ থেকে এর অর্থ জোগাড় করা সম্ভব নয়। তাই চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মিলে সব ব্যয় বহন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। জটিল এই অস্ত্রোপচার পরিচালনা করার জন্য যে যে বিভাগের চিকিৎসক দরকার, তাদের সবাইকে নিয়ে বোর্ড গঠন হয়েছে।
এর আগে শনিবার অধ্যাপক ডা. আশরাফ-উল হক বলেন, ‘জোড়া লাগা দুই শিশুর হাত, পা, মাথা ঠিক আছে। কোমরের নিচের অংশে জোড়া লেগে আছে।
‘তাদের পায়ুপথ ও মেরুদণ্ড জোড়া রয়েছে। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এগুলোকেই আলাদা করা হবে।’
দেরিতে হলেও অস্ত্রোপচারে সফলতার বিষয়ে আশাবাদী আশরাফ-উল হক।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, লাবিবা ও লামিসার বাবা মো. লাল মিয়া রাজমিস্ত্রির সহকারী। আর মা মনুফা আক্তার গৃহবধূ। ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল জোড়া লাগা অবস্থায় লাবিবা ও লামিসার জন্ম হয়।
জন্মের নয় দিন পরই লাবিবা ও লামিসাকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যান তাদের বাবা-মা। এর পর থেকে চিকিৎসকদের পরামর্শেই দুই শিশুর যত্ন নিতে থাকেন তারা।
গত ২৮ নভেম্বর ঢামেক হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয় লাবিবা ও লামিসাকে। সেই থেকে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানেই আছে তারা।
অস্ত্রোপচার করে দুই বছর আট মাস বয়সী শিশু দুটিকে সোমবার আলাদা করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। শারীরিক জটিলতা বিবেচনায় এখন তা পিছিয়ে দিয়েছেন তারা।