তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আবক্ষ মূর্তি উন্মোচনের মধ্য দিয়ে দুই মহাদেশ বিস্তৃত দেশটির সঙ্গে সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে মনে করছে ঢাকা।
আঙ্কারায় সোমবার জাতির পিতার আবক্ষ মূর্তি উন্মোচন অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এ মত দেন।
মোমেন বলেন, ‘আজকের উপলক্ষ আমাদের গভীর বন্ধুত্বের সুস্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ। বাংলাদেশ ও তুরস্ক যৌথ ইতিহাস, সাংস্কৃতিক বন্ধন ও ধর্মীয় নৈকট্য দ্বারা আবদ্ধ। সম্পর্কটি পরিপক্বতার একটি পর্যায়ে বিকশিত হয়েছে, যা আমরা গর্বিতভাবে একে অপরের সঙ্গে ভাগ করে নিই।’
তিনি বলেন, ‘বন্ধুত্বের এই অসাধারণ বহিঃপ্রকাশের জন্য আমি তুরস্কের জনগণ ও সরকারের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমি এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটিকে বাস্তবে রূপ দেয়ায় যুক্ত উভয় পক্ষের কর্মকর্তাদেরও অভিনন্দন জানাই। আমি তুরস্কের সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বিশেষ করে আমার ভাই, তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব মেভলুত কাভাসোগলু, আঙ্কারার জনগণ এবং আঙ্কারা সিটি মেয়রকে আমার এবং আমার প্রতিনিধি দলের প্রতি উষ্ণতা ও আতিথেয়তার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন নিয়ে মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে নিরন্তর সম্প্রসারিত বন্ধুত্বের একটি ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হতে আজ তুরস্কের রাজধানীতে উপস্থিত হওয়া আমার জন্য পরম সম্মান ও সৌভাগ্যের। আমরা আঙ্কারার অন্যতম বিখ্যাত সড়ক বঙ্গবন্ধু বুলেভার্ডে স্থাপিত স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আবক্ষ মূর্তি উন্মোচন করলাম। এটি এমন এক সময়ে ঘটছে যখন বাংলাদেশের মানুষ দুটি যুগান্তকারী উপলক্ষ (জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী) উদযাপন করছে।
‘বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের পক্ষ থেকে আমি তুরস্কের জনগণ ও সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ মূর্তি উন্মোচনের এই তাৎপর্যপূর্ণ উপলক্ষ আমরা এমন এক মাসে উদ্যাপন করছি যাকে আমরা বিজয়ের মাস হিসেবে অভিহিত করি।’
মানব মুক্তির আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা তুলে ধরে মোমেন বলেন, ‘৫০ বছর আগে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে জন্ম নেয়। তিনি কেবল দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসের গতিপথ এবং রূপ পরিবর্তন করেননি, তিনি এই অঞ্চলে এবং এর বাইরেও সব ধরনের নিপীড়ন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন।
‘তার পররাষ্ট্র নীতি সবার প্রতি বন্ধুত্ব, কারও প্রতি বিদ্বেষ নয় বিশ্বব্যাপী শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রচার ও প্রতিষ্ঠার জন্য তার অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধান এবং নিরলস সাধনাকে তুলে ধরে। তার উত্তরাধিকারকে অনুসরণ করে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার দেশে, বিশেষ করে বিশ্বে শান্তি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করার যাত্রা শুরু করেছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অভূতপূর্ব আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে রোল মডেল হিসেবে সমাদৃত হলেও আমরা একটি উদার, ধর্মনিরপেক্ষ, আধুনিক ও শান্তিপ্রিয় জাতি হিসেবে স্বীকৃত।’
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ঢাকায় বিশ্ব শান্তি সম্মেলনের সফল আয়োজনে তুরস্কসহ দূরদুরান্ত থেকে আসা অংশগ্রহণকারীরা শান্তি, সম্প্রীতি এবং বন্ধুত্বের প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
‘আতাতুর্কে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার জীবনব্যাপী স্বাধীনতা সংগ্রামে মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের সাহসিকতা ও নেতৃত্বে অত্যন্ত অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। এই দুই মহান নেতার নামে দুটি সড়কের নামকরণ (আঙ্কারায় বঙ্গবন্ধু জাদ্দেসি এবং ঢাকার কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ) এই দুই নেতার প্রতি বাংলাদেশ ও তুরস্কের জনগণের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাকে শুধু প্রতিফলিতই করে না, বরং তাদের আদর্শ ও আদর্শের প্রতি তাদের আস্থাও তুলে ধরে। বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ মূর্তি উন্মোচন পরস্পরের দর্শন, ইতিহাস, সমাজ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে তাদের পারস্পরিক বোঝাপড়াকে আরও জোরদার করার একটি পদক্ষেপ।’