আদালতের নির্দেশনা থাকার পরও জাপানি দুই শিশুকে দুই দিনের জন্য তাদের মায়ের কাছে না দেয়ায় বাবার প্রতি ক্ষোভ জানিয়েছে আপিল বিভাগ। সেই সঙ্গে দ্রুত শিশু দুটিকে মায়ের কাছে দিতে বলা হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনসহ পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ সোমবার দুপুরে দুই শিশুর বাংলাদেশি বাবা ইমরান শরীফকে এ নির্দেশ দেয়।
একই বেঞ্চ রোববার সকালে দুই দিনের জন্য শিশু দুটিকে তাদের জাপানি মা এরিকো নাকানোর কাছে দেয়ার নির্দেশ দিয়ে বলে, ‘দুই দিন শিশুরা মায়ের কাছে থাকবে।’
দুই শিশুকে রোববার রাত ১০টার মধ্যে মায়ের কাছে দেয়ার কথা থাকলেও দেননি বাবা ইমরান শরীফ। এই নির্দেশনা না মানায় তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনেন এরিকো।
এর পরপরই সোমবার সকালে আপিল বিভাগ দুই শিশুকে বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে হাজির করতে নির্দেশনা দেন। নির্দেশনা মেনে ১১টা ২৩ মিনিটের দিকে শিশু দুটিকে নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতে উপস্থিত হন ইমরান। একই সময়ে উপস্থিত হন শিশুদের জাপানি মা এরিকো নাকানোও।
শুরুতে শিশু দুটির বক্তব্য শোনে আপিল বিভাগ। পরে তাদের বাবা-মায়ের বক্তব্য শোনে। এরপর আদালত বলেছে, নির্দেশনা অনুযায়ী শিশু দুটিকে মায়ের কাছে না দেয়া আদালত অবমাননার শামিল।
পরে আদালত দুই শিশুকে দুই দিনের জন্য মায়ের কাছে দিতে নির্দেশ দেয়। সেই সঙ্গে ১৫ ডিসেম্বর এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেছে আপিল বিভাগ।
এর আগে গত ১৯ আগস্ট বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক স্বামী শরীফ ইমরানের কাছ থেকে ১০ ও ১১ বছর বয়সী দুই কন্যাসন্তানকে ফিরে পেতে হাইকোর্টে রিট করেন জাপানি নারী এরিকো।
রিটের দীর্ঘ শুনানি শেষে গত ২১ নভেম্বর রায় দেয় হাইকোর্ট। রায়ে দুই কন্যাকে বাবার কাছে রেখে মা বছরে তিনবার ১০ দিন করে দেখা করতে পারবেন। আর এ জন্য মায়ের সব খরচ বাবাকে বহন করতে হবে।
হাইকোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধেই আপিল করেন মা।
২০০৮ সালের ১১ জুলাই জাপানের এরিকো ও বাংলাদেশি আমেরিকান শরীফ ইমরান জাপানি আইন অনুযায়ী বিয়ে করেন। বিয়ের পর তারা টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। ১২ বছরের সংসারে তারা তিন কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। তারা হলো জেসমিন মালিকা, লাইলা লিনা ও সানিয়া হেনা।
এরিকো পেশায় একজন চিকিৎসক। মালিকা, লিনা ও হেনা টোকিওর চফো সিটিতে আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের (এএসআইজে) শিক্ষার্থী ছিল।
চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি শরীফ ইমরান বিয়ে বিচ্ছেদের (ডিভোর্স) আবেদন করেন। ২১ জানুয়ারি ইমরান এএসআইজে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন।
স্কুল কর্তৃপক্ষ এরিকোর সম্মতি না থাকায় তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। পরে ইমরান তার মেয়ে জেসমিন ও লিনাকে স্কুলবাসে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্টপ থেকে অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান।
২৫ জানুয়ারি ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছে তার সন্তানদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। এরিকো তা প্রত্যাখ্যান করেন।
এরপর ২৮ জানুয়ারি এরিকো টোকিওর পারিবারিক আদালতে তার সন্তানদের জিম্মার অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চেয়ে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি শিশুদের সঙ্গে পারিবারিকভাবে সাক্ষাতের আদেশ দেন। ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়ের সাক্ষাতের সুযোগ দেন।
এরিকোর অভিযোগ, গত ৯ ফেব্রুয়ারি মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেন এবং গত ১৭ ফেব্রুয়ারি নতুন পাসপোর্ট নেন। গত ২১ ফেব্রুয়ারি ইমরান তার দুই মেয়ে জেসমিন ও লাইলাকে নিয়ে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।