নারীদের নিয়ে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করে প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানোর পর দেশ ছাড়তে ব্যর্থ হওয়া মুরাদ হাসানকে তার নির্বাচনি জেলায়ও প্রতিহত করা হবে বলে জানিয়েছে জামালপুর বিএনপি। এই ইস্যুতে বেশ তৎপর দলটির নেতা-কর্মীরা। তবে উল্টো চিত্র আওয়ামী লীগে; তারা চুপ।
স্থানীয় বিএনপির নেতারা জানান, বর্তমানে বিএনপির দুঃসময় চলছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মনগড়া বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় আসতে চেয়েছিলেন মুরাদ। জামালপুরে মুরাদকে অবাঞ্ছিত করা হয়েছে। তিনি জেলাতে প্রবেশ করতে চাইলে প্রতিহত করা হবে।
আর আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, মুরাদকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সব পদ থেকে এরই মধ্যে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে এখনও তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সংসদ সদস্য। এ জন্য মুরাদ জামালপুর কিংবা তার নির্বাচনি এলাকায় (সরিষাবাড়ী) প্রবেশ করলে কেউ বাধা দেবেন না। তবে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করায় নেতা-কর্মীরা তাকে ক্ষোভের দৃষ্টিতেই দেখছেন।
জামালপুর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সজিব খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মুরাদ অন্য দেশে জায়গা না পেয়ে আবারও বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন, এটা লজ্জাজনক। তিনি নিশ্চয়ই জামালপুরে প্রবেশ করতে চেষ্টা করবেন। আমরা বিএনপির নেতা-কর্মীরা আলোচনা করেছি। সাধারণ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাকে প্রতিহত করা হবে।’
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ওয়ারেছ আলী বলেন, ‘যেকোনো ভুল মন্তব্যের জন্য যে কেউ সমালোচিত হতে পারেন। তাই বলে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ঘৃণার চোখে দেখে না। মুরাদ এমনই সমালোচিত ব্যক্তি, তাকে কেউ পছন্দ করে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুরাদকে হাসি-তামাশার খোরাক হিসেবে নেয়া হয়েছে। সবার কাছেই অবাঞ্ছিত ব্যক্তি। আমরাও তাকে জামালপুরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছি। জনগণও তার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে আছে। ঢাকাতে গোপনে অবস্থান করলেই ভালো, জামালপুরে এলে তাকে বাধা দিতে প্রস্তুত বিএনপি।’
সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ছানোয়ার হোসেন বাদশা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মুরাদের বিষয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তার শাস্তি ইতিমধ্যে সে পেয়েছে, পাচ্ছে। আমরা তার বিষয়ে আর কোনো মন্তব্যও করতে চাই না। মুরাদ তার বাড়িতে আসবে কি না, এটা তার ইচ্ছা।’
তিনি আরও বলেন, ‘সারা দেশে বিতর্কিত মুরাদ হাসান কানাডা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতেও প্রবেশ করতে পারলেন না। চাপের মধ্যে প্রতিমন্ত্রী থেকে অব্যাহতি নিয়ে মুখ ডেকে চলতে বাধ্য হচ্ছেন।’
একজন শীর্ষস্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার বর্তমান পরিস্থিতিতে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া কী, জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ বাকী বিল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘লজ্জা, লজ্জা, লজ্জা। এর চেয়ে বেশি মন্তব্য তাকে নিয়ে করতে চাই না। তবুও যেহেতু সে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হিসেবে এখনও বহাল তবিয়তে আছেন, সেহেতু তাকে নিয়ে আর মন্তব্য করতে চাই না।’
তিনি আরও বলেন, ‘মুরাদ বর্তমানে কোথায় আছেন তা স্থানীয় কেউ জানে না। তিনি হঠাৎ জামালপুর শহরের বাসায় আসতে চাইলে আসবেন, যেতে চাইলে যাবেন। তার আসা-যাওয়া নিয়ে আমাদের কোনো যায়-আসে না। তবে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।’
গত ১ ডিসেম্বর রাতে ‘অসুস্থ খালেদা, বিকৃত বিএনপির নেতা-কর্মী’ শিরোনামে এক ফেসবুক লাইভে যুক্ত হন মুরাদ হাসান। সেখানে বিএনপির রাজনীতির সমালোচনা করার সময় দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কন্যা জাইমা রহমানকে নিয়ে বিভিন্ন অশালীন মন্তব্য করেন তিনি।
নারীর প্রতি এমন ‘অবমাননাকর’ ও ‘বর্ণবাদী’ মন্তব্য করে ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে ছিলেন মুরাদ। এর মধ্যে ফাঁস হওয়া একটি ফোনালাপে এক চিত্রনায়িকাকে ধর্ষণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি।
এসবের জেরে ৬ ডিসেম্বর রাতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মুরাদকে ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে বলেন।
ওই দিনই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে তার পদত্যাগপত্র গ্রহণের তথ্য নিশ্চিত করা হয়। রাতেই তা গেজেট আকারেও প্রকাশ করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে নেয়ার পাশাপাশি ‘মা-বোনদের’ কাছে ক্ষমা চান মুরাদ। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে মুরাদ লেখেন, ‘আমি যদি কোনো ভুল করে থাকি অথবা আমার কথায় মা-বোনদের মনে কষ্ট দিয়ে থাকি, তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মমতাময়ী মা দেশরত্ন বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সব সিদ্ধান্ত মেনে নেব আজীবন।’
এরপর গত ১০ ডিসেম্বর এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে কানাডার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন, কিন্তু কানাডার বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে সে দেশে ঢুকতে দেয়নি। সেখান থেকে চলে যান সংযুক্ত আরব আমিরাতে। সেখানেও থাকতে পারেননি ভিসা না থাকায়।
কানাডা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রবেশে ব্যর্থ হয়ে রোববার দেশে ফিরে আসতে হয় মুরাদকে।