সরিষা ফুলের মৌ মৌ গন্ধে মুখরিত ফসলের মাঠ। দু চোখ যেদিক যায়, এখন শুধু হলুদের চোখ ধাঁধানো সমারোহ। মৌমাছির গুনগুন শব্দে ভরপুর ক্ষেত-খামার। এ দৃশ্য নওগাঁর ফসলের মাঠগুলোতে। এখন শুধু ভালো ফলনের আশায় কৃষকরা বিরামহীন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
চলতি মৌসুমে দেশের শস্যভাণ্ডার নওগাঁ জেলার প্রায় প্রতিটি ফসলের মাঠে এখন সরিষার চাষ চলছে। শিশিরভেজা সকালে কুয়াশার চাদরে ঘেরা বিস্তীর্ণ মাঠ যেন হলুদ গালিচায় ঢাকা। শীতের সোনাঝরা রোদে তা ঝিকমিক করছে। অপরূপ সৌন্দর্যের প্রাচুর্য প্রকৃতিতে।
চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলনের আশা করছেন কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি নওগাঁর তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে নওগাঁ জেলার ১১টি উপজেলায় ৩২ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। শুরুতে সরিষা ক্ষেতে পোকা-মাকড়ের আনাগোনা দেখা দিলেও মাঠপর্যায়ে চাষিদের কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি প্রত্যক্ষ কারিগরি সহযোগিতা দেয়া হয়েছে। এতে সরিষা ক্ষেত অনেকটা রোগবালাই মুক্ত হওয়ায় বাম্পার ফলনের আশা করছেন চাষিরা।
নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার নওদুলী গ্রামের সরিষা চাষি অতুল চন্দ্র জানান, এবার পাঁচ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন তিনি। এখন পর্যন্ত তার ক্ষেতে গুরুতর কোনো রোগবালাই নেই। আশা করছেন, এবার ভালো ফলন পাবেন।
অতুল আরও জানান, সেচ, সার, ওষুধ, শ্রমিক খরচসহ প্রতি বিঘায় তার খরচ হয়েছে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার মতো। ফলন ভালো হলে সব খরচ বাদ দিয়ে তার ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা লাভ হবে।
বদলগাছী উপজেলার বালুভরা গ্রামের কৃষক সাকের আলী বলেন, ‘আমি এ বছর আট বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। গত বছর ৩ হাজার ৮০০ থেকে ৪ হাজার টাকা করে প্রতি মন সরিষা বিক্রি করেছিলাম। মোটামুটি লাভ হয়েছিল। আমাদের কৃষি অফিস থেকে সহায়তা হিসেবে বীজ দেয়া হয়। তবে সেটা অল্প পরিমাণে। বাকি বীজ কিনতে হয়। বর্তমানে সরিষাগাছে প্রচুর পরিমাণে ফুল ধরছে। আশা করছি, এবার সরিষার ভালো ফলন হবে।’
মান্দা উপজেলার দক্ষিণ মৈনুম গ্রামের কৃষক একাব্বর মণ্ডল সরিষার আবাদ করেছেন ছয় বিঘা জমিতে। তিনি মনে করেন, এখন বাজারে সরিষার দাম ভালো আছে।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি নওগাঁর উপপরিচালক কৃষিবিদ শামছুল ওয়াদুদ বলেন, চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও এক হাজার ৫৪০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন কৃষকরা। যেহেতু তেলের দাম বেশি, তাই সরিষা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি পরিমাণ সরিষা চাষ হয়েছে। ঠিক সময়ে জমি চাষযোগ্য হওয়ায় এলাকার কৃষকরা সুযোগ বুঝে সরিষা চাষ করেছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোনো ক্ষতি না হলে জেলায় সরিষা আবাদে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা।