ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি করে আসা বিএনপির পক্ষ থেকে সেই আইনেই সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করার পর দলটির এতদিনকার অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
যুক্তরাজ্যে পলাতক সাজাপ্রাপ্ত আসামি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমান সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ, অশ্লীল ভাষায় নারী-বিদ্বেষী বক্তব্যের অভিযোগ এনে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে অভিযোগটি করা হয়।
বিএনপির সিদ্ধান্তে মামলাটি করেন দল সমর্থক আইনজীবী ঢাকা আইনজীবী বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক ফারুকী।
মামলায় মুরাদ ছাড়া অপর আসামি হলেন মহিউদ্দিন হেলাল নাহিদ। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নাহিদ রেইনস নামে পরিচিত। তার সঙ্গেই এক অনলাইন সাক্ষাৎকারে এসে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন মুরাদ।
বিএনপি তো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানাচ্ছে। তাহলে এই আইনে কেন মামলা করছেন- এমন প্রশ্নে ফারুক বলেন, ‘বিএনপি এখনও এই আইনের বিরুদ্ধে। এখনও তো সেটা বাতিল হয়নি। তাই চলমান যে আইন রয়েছে সেই আইন মোতাবেকই আমাদের এগুতে হবে। আমরা সেটিই করেছি।’
ঠিক একই প্রশ্নের জবাবে বিএনপির আরেক আইনজীবী নেতা মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যখন অপব্যবহার হয়, আমরা সেটার ঘোর বিরোধী। এটাকে ব্যবহার করে মিথ্যা সাজানো বানোয়াট মামলা করে মানুষকে হেনস্থা করার যে প্রবণতা, সেটির বিরোধিতা করেছি। আর এই আইন তো এখনো বাতিল হয়নি।’
আরেকটি যুক্তি দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘পুলিশকে ব্যবহার করে এই সরকার অরাজকতা করছে। এখন কি বিএনপি এই পুলিশদের উঠিয়ে দেয়ার দাবি জানাবে? আর জানালেই কি তাদের উঠিয়ে দেয়া যাবে?
‘ডিজিটাল অ্যাক্ট এখনও বলবৎ। এখন যে ঘটনা ঘটেছে সেটার জন্য বিচার দাবি করলে তো প্রচলিত আইনেই আমাদের অগ্রসর হতে হবে। নতুন আইন তো বানানো যাবে না।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে বিএনপির যে অবস্থান
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করার করার পর থেকেই বিএনপি এই আইন বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে। চলতি বছরের শুরুর দিকে বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাবন্দি একজন লেখকের মৃত্যুর পর এই আইন বাতিলের দাবিতে নানা কর্মসূচিও পালন করে দলটি।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ছাত্রদলের বিক্ষোভে নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।
এরপর সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় আসলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে দিবে।’
গত ২০ অক্টোবর বিবৃতিতে এই আইন বাতিলের দাবি জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপি মনে করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আওয়ামী লীগের একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার নীলনকশার অংশ। অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সব ধরনের নিবর্তনমূলক আইন বাতিল করতে হবে।’
এই যখন দলের অবস্থান, সে সময় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেই কেন মামলার সিদ্ধান্ত- এমন প্রশ্নে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একটি অন্যায় সামনে এসেছে। সেটার বিচারের দাবিতে যে আইন রয়েছে, সেটিকেই আমাদের অনুসরণ করা লাগছে। আমরা সেটিই করেছি।’
জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘এটা তো একটা ছেলেমানুষী প্রশ্ন হলো। আপনি যদি বিতর্কিত কোনো কিছু নিয়ে সমালোচনা করেন তাইলে কি আপনি বিচার চাইতে পারবেন না? এখন যে অন্যায় হয়েছে, সেটির প্রেক্ষিতে বিচার চাইতে আইন কী বলে? আইন কি পরিবর্তন হয়েছে? তাহলে বিচারের আশায় তো সেই আইনেই আপনাকে যা করার করতে হবে, নতুন আইন আসা পর্যন্ত।’
বিএনপির এই বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক নজিবুল্লাহ হিরু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিএনপি মুখে যা বলে কাজে তা করে না। এখন সুবিধার প্রয়োজনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটিকে তারা ব্যবহার করছে। এতদিন বিরোধিতার খাতিরেই বিরোধিতা করেছিল।’