বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কাঁচি বের হলেও ক্ষত কি শুকাবে মনিরার জীবনের

  •    
  • ১২ ডিসেম্বর, ২০২১ ২১:৫৩

মনিরা গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার ঝুটিগ্রামের খাইরুল মিয়ার মেয়ে। ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পেটের ব্যথা নিয়ে ভর্তি হওয়ার পর ২০২০ সালের ৩ মার্চ তার অস্ত্রোপচার করা হয়। তবে ওই সময় একটি কাঁচি মনিরার পেটে রেখেই সেলাই করে দেন চিকিৎসকরা। ওই ঘটনার পৌনে দুই বছর পর শনিবার একই হাসপাতালে দ্বিতীয় অস্ত্রোপচারে সেই কাঁচি বের করা হয়।

ফরিদপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের সময় পেটের ভেতর রেখে দেয়া কাঁচিটি বের করা হয়েছে পৌনে দুই বছর পর। তবে গোপালগঞ্জের তরুণী মনিরা খাতুনের জীবনের ক্ষত শুকাবে কি না তা নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।

দ্বিতীয় অস্ত্রোপচারের পর তার শরীরে আরও জটিলতা দেখা দিয়েছে। সুস্থ হলেও ঠিকমতো হাঁটতে পারবেন কি না তা নিয়েও শঙ্কার কথা জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

পারিবারিক জীবনেও নেমে এসেছে আঁধার। ভ্রুণ নষ্ট হওয়ার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া স্বামী মনিরাকে না জানিয়েই আরেকটি বিয়ে করেছেন। সেই বাড়িতে ফের সংসার করতে পারার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অর্থনৈতিক চাপ। পৌনে দুই বছর আগে মনিরার অস্ত্রোপচারের জন্য নেয়া ঋণের টাকা এখনও শোধ করতে পারেনি তার পরিবার। এবারের অস্ত্রোপচারের জন্য ফের নিতে হয়েছে উচ্চ সুদে ঋণ।

মনিরা গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার ঝুটিগ্রামের খাইরুল মিয়ার মেয়ে। ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পেটের ব্যথা নিয়ে ভর্তি হওয়ার পর ২০২০ সালের ৩ মার্চ তার অস্ত্রোপচার করা হয়।

তবে ওই সময় একটি কাঁচি মনিরার পেটে রেখেই সেলাই করে দেন চিকিৎসকরা। ওই ঘটনার পৌনে দুই বছর পর শনিবার একই হাসপাতালে দ্বিতীয় অস্ত্রোপচারে সেই কাঁচি বের করা হয়।

রোববার হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, চিকিৎসাধীন মনিরার কান্না থামছে না কিছুতেই। আর কাউকে সামনে পেলেই কষ্টের কথা জানাচ্ছেন তার মা রাহেলা বেগম ও ভাই কাইয়ুম মিয়া।

তারা জানান, চিকিৎসকদের একটি ভুলের খেসারত সারা জীবন ধরে দিতে হবে তাদের। মনিরার স্বামী সোহেল মিয়া পাঁচ মাস আগে আরেকটি বিয়ে করেছে তাকে না জানিয়েই। তার জীবনের সমস্ত শান্তিই নষ্ট হয়ে গেছে।

মনিরার মা রাহেলা বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ের জীবনের সব শেষ। গত দুই বছরে আমরা কবিরাজ, গ্রাম্য ডাক্তার, হুজুরের পানি পড়া, এমন কিছু নাই যে করি নাই, কিন্তু দিনে দিনে আমার মেয়েটা চোখের সামনে ছটফট করেছে, ব্যথায় কষ্ট পেতে পেতে আরও কাহিল ও রোগা হয়ে গেছে। এখন সে সুস্থভাবে হাঁটাচলা করতে পারবে তার নিশ্চয়তাও দিতে পারছে না ডাক্তাররা।’

মনিরার ভাই কাইয়ুম মিয়া জানান, হাসপাতালে আসার আগের দিন একজনের কাছ থেকে মাসে ২০০ টাকা সুদে ১০ হাজার টাকা ধার নিয়েছেন। পৌনে দুই বছর আগে প্রথম অস্ত্রোপচারে খরচ হওয়া ৭০ হাজার টাকার মধ্যে এখনও ১৬ হাজার টাকা পাবে একটি এনজিও।

তিনি আরও জানান, সময়মতো কিস্তি শোধ না করার কারণে দুই মাস আগে তাদের নামে মামলাও দিতে চেয়েছিল সংস্থাটি। স্থানীয়দের মধ্যস্থতায় এখন অল্প করে টাকা শোধ করছেন তারা।

মনিরার পরিবারে কাইয়ুমই একমাত্র উপার্জনক্ষম। তিনি স্থানীয় গোপালগঞ্জ ইউকে ফুডের এসআর হিসেবে কাজ করেন। তার সামান্য আয় দিয়েই চলে ছোট ভাই মাহবুব মিয়ার লেখাপড়া, বোনের চিকিৎসা ও সংসারের খরচ। বাবা খাইরুল মিয়া আগে কৃষি কাজ করলেও এখন কিছু করতে পারেন না।

এদিকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ওই ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি করেছে। রোববার করা তিন সদস্যের ওই কমিটির প্রধান হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কামরুল হাসান। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন, গাইনি বিভাগের অধ্যাপক কানিজ ফাতেমা ও সার্জারি বিভাগের কামরুজ্জামান।

হাসপাতালের পরিচালক সাইফুর রহমান জানান, আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

মনিরার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মনিরা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার অবস্থা উন্নতির দিকে। আরও সপ্তাহখানেক লাগবে ঠিক হতে।’

ফরিদপুরের সিভিল সার্জন সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘এ ঘটনাটি ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে। চিকিৎসকের গাফিলতির কারণে এ অনভিপ্রেত ঘটনাটি ঘটেছে।’

এ বিভাগের আরো খবর