তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর পদ হারিয়ে দেশ ছাড়া ডা. মুরাদ হাসান কানাডা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে ঢুকতে ব্যর্থ হয়ে আবার ঢাকা ফিরেছেন।
তবে বিমানবন্দর থেকে তিনি কোথায় গেছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। রোববার রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত তিনি রাজধানীর ধানমন্ডির বাসায় স্ত্রী-সন্তানদের কাছে ফেরেননি।
মুরাদের দেশে ফেরার খবর শুনে রোববার বিকেল থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি বর্হিগমন গেটের সামনে অপেক্ষায় ছিলেন সংবাদমাধ্যম কর্মীরা। তবে তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে তিনি অভ্যন্তরীণ টার্মিনালের বর্হিগমন দিয়ে বিমানবন্দর ছাড়েন।
ঢাকায় মুরাদের তিনটি বাসার তথ্য নিশ্চিত হয়েছে নিউজবাংলা। এর একটি রাজধানীর শান্তিনগরে, একটি ধানমন্ডিতে এবং অপরটি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে পাওয়া মিন্টো রোডের বাসা।
তবে প্রতিমন্ত্রীর পদ ছাড়ার কারণে মুরাদ মিন্টো রোডের বাসার অধিকার এরই মধ্যে হারিয়েছেন। সরকারি বরাদ্দের ওই বাসায় তিনি প্রতিমন্ত্রী থাকার সময়েও খুব একটা যাননি। শান্তিনগরের বাসাতেও তার তেমন যাতায়াত নেই।
ধানমন্ডির বাসায় স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়ে থাকতেন মুরাদ হাসান। তবে ঢাকা ফিরে তিনি সেখানে যাননি বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
ধানমন্ডির বাসার নিরাপত্তা কর্মী সুমন ইসলাম নিউজবাংলাকে জানান, মুরাদ হাসানের ঢাকা ফেরার খবর তিনি শুনেছেন।
মুরাদ বাসায় ফিরেছেন কিনা জানতে চাইলে রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘না, এখনও তিনি বাসায় আসেননি।’
মুরাদ হাসানের স্ত্রী ও দুই সন্তান ওই বাসায় আছেন বলে নিশ্চিত করেন সুমন। তিনি বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের আগের দিন তিনি বাসা ছেড়ে যান, এরপর আর ফেরেননি।’
মুরাদ তার নির্বাচনি এলাকা জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে যাচ্ছেন কিনা- সে ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এরই মধ্যে জামালপুর জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে তাকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে, জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়ার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রে। সরিষাবাড়ী উপজেলার আওনা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকেও মুরাদকে অব্যাহতির প্রস্তাব কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। মুরাদের ফেরার দিন তার বিরুদ্ধে মামলার আবেদন হয়েছে বিভিন্ন জেলায়।
- আরও পড়ুন: মুরাদের নামে মামলার আবেদন জেলায় জেলায়
মন্ত্রিত্ব হারালেও সংসদ সদস্য পদে থাকা ডা. মুরাদ হাসানকে বহনকারী এমিরেটস এয়ারলাইনসের ফ্লাইটটি রোববার বিকেল ৪টা ৫৪ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
সারা বিশ্বে বিমান চলাচল পর্যবেক্ষণকারী ‘ফ্লাইটস্ট্যাটস’-এর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, দুবাই বিমানবন্দর থেকে রোববার সকাল ১০টা ৪৬ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইনসের ইকে ৫৮৬ ফ্লাইটটি ঢাকার উদ্দেশে উড্ডয়ন করে।
দুবাই থেকে ৪ ঘণ্টা ২১ মিনিটের যাত্রা শেষে এটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
- আরও পড়ুন: কানাডা, আমিরাত ঘুরে মুরাদ আবার ঢাকায়
‘ফ্লাইটস্ট্যাটস’-এর রিয়েল টাইম ট্র্যাকার অনুযায়ী, বেলা ২টায় বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর উড়োজাহাজটি গালফ অফ ওমানের ওপর ছিল। বেলা ২টা ৪৫ মিনিটে এটি ভারতের আহমেদাবাদের আকাশসীমায় পৌঁছায়। বেলা ৩টা ৪৫ মিনিটে এটি ছিল ভারতের মধ্যাঞ্চলের আকাশে। বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটে উড়োজাহাজটি পশ্চিমবঙ্গের আকাশসীমায় পৌঁছায়। বিকেল ৪টা ৫৪ মিনিটে এটি ঢাকায় অবতরণ করে।
অশালীন বক্তব্য দিয়ে প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানোর পর গত বৃহস্পতিবার রাত ১টা ২০ মিনিটে কানাডার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন মুরাদ হাসান। এমিরেটস এয়ারলাইনসের ফ্লাইট ইকে ৮৫৮৫-এ তিনি প্রথমে দুবাই যান, এরপর সেখান থেকে আরেকটি ফ্লাইটে কানাডার উদ্দেশে যাত্রা করেন।
তবে টরন্টোর পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে ফিরিয়ে দেয় কানাডীয় কর্তৃপক্ষ।
উত্তর আমেরিকার ‘নতুন দেশ’ নামের একটি বাংলা সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানানো হয়, মুরাদকে কানাডায় ঢুকতে দেয়নি দেশটির বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সি (সিবিএসএ)। অভিবাসী বাংলাদেশিদের আপত্তির মুখেই কানাডার সরকার এমন সিদ্ধান্ত নেয় বলে দাবি করেছে অসমর্থিত বিভিন্ন সূত্র।
তবে বিশ্বস্ত একটি সূত্র নিউজবাংলাকে জানিয়েছে, করোনাভাইরাসসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকার কারণেই মুরাদকে কানাডার ইমিগ্রেশন ফিরিয়ে দেয়।
মুরাদ হাসান এরপর মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে ঢোকার চেষ্টা করেন। তবে শনিবার নিউজবাংলাকে একটি সূত্র নিশ্চিত করে, ভিসা না থাকায় দুবাইয়ে ইমিগ্রেশনও আটকে দেয় সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীকে।
দুবাইয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর শুরুতে এমিরেটসের ইকে ০৫৮২ ফ্লাইটে ঢাকা ফেরার প্রস্তুতি নেন মুরাদ হাসান। এর টিকিটও তিনি কেনেন। ওই ফ্লাইটে এলে রোববার সকাল ৮টা ২০ মিনিটে তার ঢাকা পৌঁছানোর কথা ছিল।
তবে শেষ মুহূর্তে ফ্লাইট পরিবর্তন করে ইকে ৫৮৬ ফ্লাইটে ঢাকায় আসার সিদ্ধান্ত নেন মুরাদ।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তার নাতনি জাইমা রহমানকে নিয়ে অশালীন মন্তব্যের পর এক চিত্রনায়িকার সঙ্গে মুরাদের অশালীন বক্তব্যের অডিও ফাঁস হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পদত্যাগ করেন মুরাদ।