নরম তুলতুলে চেহারা দেখেই একটি বিড়ালকে নিজের ঘরে জায়গা দিয়েছেন মো. ইমরানুর রহমান। যত্ন-আত্তির কোনো কমতি নেই, আদর করে নাম রাখা হয়েছে ‘পুঁচু’।
নিউজবাংলার কর্মী ইমরান গত শনিবার অফিস শেষে ভীষণ ক্লান্ত হয়ে বাসায় ঢুকে দেখেন, সোফায় আয়েশ করে জাঁকিয়ে বসে আছে ছেলে বিড়ালটি। সোফা থেকে নামিয়ে দেয়ামাত্র ছেলে বিড়ালটির সে কী রণমূর্তি! কিছুক্ষণ গড় গড় করে রাগ ঝাড়ার পর হঠাৎ করেই পুঁচু ঝাপিয়ে পড়ে ইমরানের উপর। এরপর ডান হাতে রীতিমতো এক কামড়।
ইমরানকে নিতে হয়েছে জলাতঙ্কের টিকা, তার চেয়ে বড় কথা- অতি আদরের বিড়ালটির এমন আকস্মিক হিংস্র আচরণে মন ভেঙে গেছে প্রাণীপ্রেমী এই তরুণের।
সাম্প্রতিক এক গবেষণা অবশ্য বলছে, বিড়ালকে যতটা সাদাসিধা প্রাণী ভাবা হয় ততটা এরা সরল নয়। বরং আচরণ বিবেচনায় নিলে প্রায় সব বিড়ালই ‘সাইকোপ্যাথ’।
যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ লিভারপুল এবং লিভারপুল জন মুরস ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক সম্প্রতি বিড়ালের মনস্তত্ব বোঝার গবেষণাটি করেছেন।
এজন্য কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বেছে নিয়ে সেগুলোর জবাব চাওয়া হয়েছে বিড়াল মালিকদের কাছে।
এসব বৈশিষ্ট্যের মধ্যে আছে- ‘কোনো কারণ ছাড়াই আমার বিড়াল উচ্চস্বরে আওয়াজ করে’, ‘কোনো কারণ ছাড়াই আমার বিড়াল বাড়িতে দৌড়াদৌড়ি করে’ অথবা ‘দুর্ব্যবহার করেও আমার বিড়ালের কোনো অপরাধবোধ নেই’।
অনলাইনে এই জরিপে অংশ নেন ৫৪৯ জন বিড়াল মালিক। তাদের উত্তরের ভিত্তিতে গবেষকরা বিড়ালের মনস্তত্বের এক মানদণ্ড নির্ধারণ করেছেন।
সাইকোপ্যাথি হলো একটি মানসিক অসুস্থতা বা পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার। মানুষের সাইকোপ্যাথি বুঝতে অতি ব্যবহৃত ‘ট্রিআর্কিক’ তত্ত্বের অনুসরণেই বিড়ালের মনস্তত্ত্ব বোঝার চেষ্টা করেছেন গবেষকেরা।
মানুষের মধ্যে সাইকোপ্যাথি পরিমাপের জন্য বেপরোয়া মনোভাব, নীচুতা ও অবাধ্যতার মতো বৈশিষ্ট্যের মাত্রা যাচাই করা হয়। বিড়ালের মন বুঝতেও এসব বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। পাশাপাশি মানব-বন্ধুহীনতা এবং পোষা প্রাণী-বন্ধুহীনতাকেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে গবেষণায়। বিশেষজ্ঞরা সাইকোপ্যাথ বিড়ালের আচরণ পরিমাপের নতুন পদ্ধতির নাম দিয়েছে ‘ক্যাট ট্রিআর্কিক প্লাস’।
গবেষক দলের সদস্য রেবেকা ইভানস বলেন, ‘বিড়াল ও এদের ব্যক্তিত্বের বৈচিত্র্য গবেষণাটি করতে আমাদের উৎসাহিত করেছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি জানতে আগ্রহী ছিলাম যে, কীভাবে একটি সাইকোপ্যাথ বিড়ালের আচরণ তার মালিকের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে।’
গবেষক দলের আরেক সদস্য মিনা লিয়ন্স বলেন, ‘আমাদের দলের সবাই বিড়ালপ্রেমী। অনেকেই কাজ করেছেন স্তন্যপায়ী প্রাণী, বানর, ইঁদুর ও মানুষের মনস্তত্ব নিয়ে। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম এবার এক সঙ্গে একটি দল গঠন করে জানার চেষ্টা করব, সাইকোপ্যাথির সঙ্গে বিড়ালের কোনো সম্পর্ক আছে কি না।
‘আমার পোষা বিড়াল অ্যাক্সেল আমাকে এই গবেষণায় উৎসাহী করেছে। নাদুসনুদুস অ্যাক্সেল বেশ লোভী প্রকৃতির। গবেষণায় ওকে যুক্ত করেছিলাম বিড়ালের গতিবিধি পর্যবেক্ষণে। স্বাধীনতা দেয়ার পর দেখা গেছে, অ্যাক্সেল খুব সাহসী। খাবারের সন্ধানে সে প্রতিবেশীর বাড়ি, গাড়ি এবং গ্যারেজে গিয়েছিল… তার এই আচরণ সাইকোপ্যাথের লক্ষণ।’
গবেষকেরা বলছেন, সাইকোপ্যাথের লক্ষণ সব বিড়ালের মধ্যেই দেখা গেছে। সাধারণত আমরা এসবকে বিড়ালের স্বাভাবিক আচরণ মনে করে এড়িয়ে যাই। বাস্তবে বিড়াল নিজের আয়েশ নিয়ে প্রচণ্ড আধিপত্যবাদী এবং সেটা আদায় করতে যথেষ্ট হিংস্র। এসব আচরণ বিড়াল পেয়েছে এদের পূর্বপুরুষের কাছ থেকে; যাদের একমাত্র লক্ষ্যই ছিল খাদ্য, সঙ্গী এবং বসবাসের এলাকায় নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা।