প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের নিম্নমুখি ধারা অব্যাহত রয়েছে। ২০২১ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরের ৯ দিনে ব্যাংকিং চ্যানেলে ৬০ কোটি ৪৩ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
বর্তমান বিনিময়হার হিসাবে (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা) টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৫ হাজার ১৮৫ কোটি ৪০ লাখ ৮৮ হাজার টাকা।
গত বছরের ডিসেম্বরের এই ৯ দিনে ৭০ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে।
মহামারি করোনাভাইরাসের মধ্যেও অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ (২৪.৮ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। ওই অঙ্ক ছিল আগের বছরের চেয়ে ৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার বা ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ বেশি।
কিন্তু সেই জোয়ার আর নেই। এখন ঠিক বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে। প্রতি মাসেই কমছে রেমিট্যান্স।
বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার রেমিট্যান্সের সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী এক কোটির বেশি প্রবাসী চলতি ডিসেম্বর মাসের প্রথম ৯ দিনে (১ ডিসেম্বর থেকে ৯ ডিসেম্বর) ৬০ কোটি ৪৩ লাখ ৬০ হাজার ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
এরমধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১১ কোটি ৮ লাখ ৮০ হাজার ডলার। বিশেষায়িত ব্যাংক কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ৫ লাখ ৯০ হাজার ডলার।
৪১টি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৪৭ কোটি ৯৭ লাখ ৩০ হাজার ডলার। আর ৯টি বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৩১ লাখ ৬০ হাজার ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর রেমিট্যান্স প্রবাহেও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ওই বছরের এপ্রিলে মাত্র ১০৯ কোটি ২৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। মে মাসে তা বেড়ে ১৫০ কোটি ৪৬ লাখ ডলারে ওঠে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে রেমিট্যান্স বেড়ে দাঁড়ায় ১৮৩ কোটি ২৬ লাখ ডলার।
গত ২০২০-২১ অর্থবছরের পুরোটা সময় জুড়ে (২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন) রেমিট্যান্সের উল্লম্ফন লক্ষ্য করা যায়। ওই অর্থবছরে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা, যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি।
গত অর্থবছরের ১২ মাসের মধ্যে সাত মাসই ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে দেশে।
কিন্তু চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্স প্রবাহে ভাটার টান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রতি মাসেই কমছে অর্থনীতির গুরুত্ব পূর্ণ এই সূচক। প্রথম মাস জুলাইয়ে আসে ১৮৭ কোটি ১৫ লাখ ডলার। আগস্টে আসে ১৮১ কোটি ডলার। সেপ্টেম্বরে আসে ১৭২ কোটি ৬২ লাখ ডলার। অক্টোবর মাসে এসেছে ১৬৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
নভেম্বর মাসে আসে আরও কম, ১৫৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলার।
সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরে পাঁচ চার (জুলাই-নভেম্বর) ৮৬০ কোটি ৮৮ লাখ ৭০ হাজার (৮.৬০ বিলিয়ন) রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ১ হাজার ৮৯ কোটি ৩৭ লাখ ডলার। এ হিসাবে এই পাঁচ মাসে রেমিট্যান্স কমেছে ২১ শতাংশ।
দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিভিন্ন দেশে থাকা সোয়া কোটি বাংলাদেশির পাঠানো অর্থ। দেশের জিডিপিতে সব মিলিয়ে রেমিট্যান্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো।
রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার।